• Lok Sabha Election 2024: বঙ্গে কেন বিজেপির রেকর্ড আসনে জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী পিকের? নেপথ্য কোন যুক্তি?
    এই সময় | ১৯ মার্চ ২০২৪
  • ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গের রাজনীতির অঙ্ক মিলিয়েছিলেন তিনি। সেবার যখন বঙ্গে বিজেপিকে নিয়ে জোর চর্চা হচ্ছে তখন তিনি দাবি করেছিলেন বিজেপি যদি বাংলায় ১০০ আসনের গণ্ডি ছুঁতে পারে তাহলে তিনি রাজনৈতিক পরামর্শদাতার কাজ ছেড়ে দেবেন। ভোটের ফলাফলের পর হুবহু মিল গিয়েছিল তার কথা। বিপুল ভোট নিয়ে ক্ষমতায় ফেরে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রত্যাশা মতো ফল করতে পারেনি বিজেপি। হাজার ঢাক-ঢোল পেটানো কার্যত জলেই গেরুয়া শিবিরের। তাই রাজনীতির আঙিনার প্রশান্ত কিশোরের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাঁর কথায় ভরসা করে আমজনতার। কারণ দাবার বোর্ডের মতোই তাঁর নখদর্পণে রাজনীতির ময়দান। তিনি যা বলছেন তার নেপথ্য সূদূরপ্রসারি কাহিনিও রয়েছে বলে মনে করে মানুষ। এবারও সেই প্রশান্ত কিশোরই লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় বিজেপিকে নিয়ে বড় ভবিষ্য়দ্বাণী করেছেন। সেই ক্লিপই সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

    কয়েক দিন আগেই এক সর্বভারতী সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন, 'আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি বঙ্গে ভালো পারফরম্য়ান্স করবে।' তাঁর কথায়, 'পশ্চিমবঙ্গে সর্ব বৃহৎ দল হয়ে উঠবে বিজেপি।' লোকসভার আগে পিকের এমন ভবিষ্যদ্বাণী আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ২০১৯ সালের থেকেও বঙ্গে খারাপ ফল করবে বিজেপি। আসন সংখ্যাও কমবে।কেন এমনটা দাবি করছেন প্রশান্ত কিশোর?

    মমতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়

    পিকের মতে, ভোট প্রচারে এবার মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে সরাসরি আক্রমণ না করে সব কিছুর জন্য তৃণমূলকে দায়ী করার কৌশল বেছে নিয়েছে বিজেপি। আর এই বিষয়টিকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পিকে। কারণ ব্যক্তিগত ভাবে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করলে জনমানসে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে, তা আগের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার থেকেই স্পষ্ট বিজেপির কার কাছে। সেই কারণেই এবার স্ট্র্য়াটেজি বদল। গত নির্বাচনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি মোদীর 'দিদি ও দিদি' কথাটাযে বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেয়নি তা ভালো ভাবে বুঝে গিয়েছে বিজেপি।

    সিএএ ইস্যু

    ভোটের আগেই কার্যকর হয়েছে সিএএ। সিএএ বাস্তবায়নে খুশির হাওয়া মতুয়া-রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্য়ে। দীর্ঘ বছর ধরেই নাগরিকত্ব প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছিল তার। এতদিন বাদে সেই দাবি পূরণ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির প্রতি প্রসন্ন মতুয়া ও রাজবংশী। এদিকে বাংলার ভোট ব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ মতুয়া ও রাজবংশীদের থেকে প্রাপ্ত ভোট। পিকের মতে, মতুয়া-রাজবংশী ভোট যদি বিজেপির দিকে যায় তাহলে আসন সংখ্য়া বাড়তে বাধ্য গেরুয়া শিবিরের। ২৪ পরগনা ছাড়াও মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, হাওড়া এবং কোচবিহারেও মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছে। নির্বাচনী দৃষ্টিকোণ থেকে, পশ্চিমবঙ্গের ১০টি লোকসভা আসন এবং ৫০টি বিধানসভা আসনে মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে। ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে মতুয়া ভোটারদের আকৃষ্ট করতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরের সময় ওড়াকান্দির মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে পুজো দেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা অনন্ত রায় রাজবংশীকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে বিজেপি রাজবংশীদের মন জয়ের মোক্ষম চাল দিয়েছে। এদিকে সিএএ বিরোধিতায় সরব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তাঁর মতে, এই আইন 'বৈষম্যমূলক'। কেন এই আইনে মুসলিমদের কথা উল্লেখ করা হল না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেত্রী। বিজেপির পাল্টা আক্রমণ, বঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট টানতেই সিএএ-এর বিরোধিতা করা হচ্ছে। ভোটের মেরুকরণ হলে বাংলায় তার সুফল পেতে পারে বিজেপি, মনে করছেন প্রশান্ত কিশোর।

    'সিএএ-র জন্য সবাই খুশি' উৎসবে মাতল মতুয়া সমাজ

    ইন্ডিয়া জোটে ফাটল, পুরনো মিত্ররা বিজেপিতে

    ইন্ডিয়া জোটের সমীকরণ খাটছে না সুপ্রিম কোর্টে। এরাজ্যে কারও সঙ্গে জোটের সমঝোতায় হাঁটেনি তৃণমূল। রাজ্যের ৪২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। স্বভাবতই বঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের সমীকরণ দুর্বল। জোটের মুখ কংগ্রেসের সঙ্গেও আসন রফার পথে সাফ না করে দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। পিকের মতে, বঙ্গে বিরোধী জোটের দুর্বলতাই হাতিয়ার বিজেপির।

    ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে, বঙ্গে তৃণমূল পায় ৪৩.৩ শতাংশ ভোট এবং বিজেপি ৪০.৭ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস পেয়েছিল ৫.৬৭ শতাংশ ভোট এবং বামফ্রন্ট পায় ৬.৩৩ শতাংশ ভোট। তবে প্রশান্ত কিশোরের মতে ইন্ডিয়া ব্লকের তিনটি দল কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল একসঙ্গে থাকলে তাদের ভোটের হার ৫৫ শতাংশ হতে পারত। ২০১৯ সালের মতো এবারও বাংলায় ত্রিমুখী লড়াই। এখন দেখার এবার প্রশান্ত কিশোরের দাবি সত্যি হয় কিনা।
  • Link to this news (এই সময়)