বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের FD স্ক্যামের তদন্ত করুক সিবিআই-ইডি, দাবি কোর্টের
এই সময় | ২০ মার্চ ২০২৪
রূপক মজুমদার, বর্ধমান: অভিযোগ দায়ের হওয়ার ৩৯ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ভক্ত মণ্ডলের কোনও সন্ধান পায়নি পুলিশ। এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঘব বোয়ালদের জড়িত থাকার বিষয়টি ক্রমেই পরিষ্কার হয়েছে বর্ধমান আদালতের জেলা জজ সুজয় সেনগুপ্তর পর্যবেক্ষণে।পুলিশ ভক্ত মণ্ডলের টিকি ছুঁতে না-পারলেও সোমবারই ভক্ত মণ্ডল তাঁর আইনজীবী কমল দত্তের মাধ্যমে জেলা দায়রা আদালতে জামিনের আবেদন জানান। আর সেখানেই ভক্ত মণ্ডলের আইনজীবী কমল দত্ত আদালতে সাফ জানিয়ে দেন, তাঁর মক্কেল নির্দোষ। তাঁকে দাবার চালের বোড়ের ঘুঁটি করে ব্যবহার করা হচ্ছে। বহু রাঘব বোয়াল জড়িত এই ঘটনায়।
সিবিআই বা ইডি-র মতো তদন্তকারী সংস্থা এই তদন্তের ভার না-নিলে এর প্রকৃত সত্য উঠে আসা কঠিন। অর্থনীতির অধ্যাপক ভাস্কর গোস্বামীর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই চাইছেন তদন্ত করুক সিবিআই বা ইডি।
বর্ধমান আদালতের আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, ‘ভক্ত মণ্ডলকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমার মক্কেল নির্দোষ। যে বা যাঁদের মদতে ফিক্সড ডিপোজ়িটের দু’কোটি টাকা প্রায় তুলে নেওয়া হলো, আর সেটাও ধরা পড়ল দু’বছর বাদে তাঁরাই ভক্ত মণ্ডলদের মতো লোকেদের ফাঁসিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আমরা আদালতে জানিয়েছি, এই কেসের তদন্তভার সিবিআই বা ইডি-র হাতে না-গেলে কোনওদিনই সঠিক তদন্ত হবে না।’
পুলিশ কি তাই খুঁজে পাচ্ছে না ভক্তকে? এ বিষয়ে কমল দত্ত বলেন, ‘পুলিশ কেন তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না সেটা আমার বলার কথা নয়। আমি আমার মক্কেলের ওকালতনামায় সই নিয়েই এই কেসের মামলা লড়ছি। পুলিশ আসল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা তো করছেই।’
অন্য দিকে, ভক্ত মণ্ডলের জামিনের আবেদন খারিজ করতে গিয়ে জেলা জজ সুজয় সেনগুপ্ত তাঁর পর্যবেক্ষণে পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন— এখনও অবধি তদন্তকারী অফিসার যে তথ্য আদালতের কাছে জমা দিয়েছেন, তাতে এই ঘটনায় বিভিন্ন পদাধিকারীদের জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজ়িটের কাগজপত্র আধিকারিকদের হেফাজতে থাকার কথা।
সেই কাগজ কীভাবে সরাসরি ব্যাঙ্কে পৌঁছে গেল? একইসঙ্গে জেলা জজ এ বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন, উপরতলার লোকেদের বাঁচাতে নিচুতলার কর্মীদের ফাঁসানো হয়ে থাকতে পারে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি ইউকো ব্যাঙ্কের সিনিয়র ম্যানেজার নেহা রানি লিখিত ভাবে ভক্ত মণ্ডল ও শেখ এনামুল হকের নামে অভিযোগ আনেন। এনামুলকে পুলিশ দু’টি কেসে গ্রেপ্তার করে। জেল হেফাজতের পরে বর্তমানে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু ৩৯ দিন পার হয়ে গেলেও ভক্তের সন্ধান পেতে ব্যর্থ বর্ধমান থানার তদন্তকারী অফিসার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-রেজিস্ট্রার দেবমাল্য ঘোষ বলেন, ‘পুলিশ যদি ভেবে থাকে নির্বাচনের অজুহাতে এই কেসের তদন্ত হালকা ভাবে নেবে তা হলে তারা ভুল করছে। আদালতের দরজা এখনও খোলা রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল তৈরিতে আমাদের অনেকের অবদান রয়েছে। এখন এসব দেখে এবং কিছু করতে পারছেন না বলে বহু প্রবীণ সহকর্মী, সিনিয়র অধ্যাপকরা ব্যথিত।’
সূত্রের খবর, হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্বে। সামনের সপ্তাহেই এই মামলা দায়ের করা হবে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পুলিশ সমস্ত দিক থেকেই ভক্ত মণ্ডলের খোঁজ চালাচ্ছে। সে নিশ্চয়ই ধরা পড়বে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের কর্মী ভক্ত মণ্ডল বিজেপি-র কর্মী বলে সে ভাবে বিরোধীরাও এ নিয়ে সরব হচ্ছেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে খণ্ডঘোষের বিজেপি প্রার্থী বিজন মণ্ডল ও বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার তৎকালীন সহ সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন ভক্ত।
সম্প্রতি অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবিলি বিল্ডিংয়ে ফিনান্স বিভাগে রামপুজো ও প্রসাদ বিতরণের ঘটনা ঘটেছিল। এসবের নেপথ্যে ভক্ত মণ্ডলই ছিলেন বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ভাস্কর গোস্বামী বলেন, ‘ভক্ত মণ্ডল বা অন্য আরও কেউ জড়িত থাকলে তাঁদের পুলিশ ধরছে না। ভোট যত এগিয়ে আসবে, এই তদন্ত তত বেশি করে চাপা পড়ে যাবে। আমরা সমস্ত সংগঠন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে যাচ্ছি। আমরা চাই অবিলম্বে তিনি এই বিষয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করুক বা হাইকোর্টে গিয়ে এই তদন্তভার যাতে সিবিআই বা ইডি-র মতো সংস্থা নেয় তার ব্যবস্থা করুক। আমরাও এবার এই বিষয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনে নামব।’