ট্রেনের সাধারণ কামরায় সন্তান প্রসব, রেলকে কুর্নিশ দম্পতির
এই সময় | ২০ মার্চ ২০২৪
এই সময়, মালদা: রমজানের মধ্যে ঈদের খুশি মুর্শিদ আলির পরিবারে। মঙ্গলবার ভোরে ট্রেনের মধ্যে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী বাবলি। ট্রেনের সাধারণ কামরায় থাকা কোচবিহারের ওই দম্পতির কোল আলো করে নতুন অতিথির আসায় খুশিতে ফেটে পড়েন পদাতিক এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। সহযাত্রী ও রেলের মেডিক্যাল টিমের তৎপরতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন দম্পতি।
কলকাতা থেকে কোচবিহারে বাড়ি ফেরার জন্য সোমবার রাতে শিয়ালদহ থেকে আপ পদাতিক এক্সপ্রেসে ওঠেন বাবলি বিবি ও মুর্শিদ আলি। দু’জনেই ছিলেন সাধারণ কামরায়। ট্রেন যখন মাঝ রাস্তায় হঠাৎ বাবলি বিবির প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। সহযাত্রীদের তৎপরতায় খবর পৌঁছয় রেল কর্তৃপক্ষের কাছে।এরপর ট্রেনটি মালদায় পৌঁছতেই রেল হাসপাতালের মেডিক্যাল টিম এসে মহিলার সন্তান প্রসব করান। সুস্থ আছেন মা ও সন্তান দু’জনেই। মুর্শিদ বলেন, ‘স্ত্রী বাবলি বিবি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ডাক্তারের কথামতো ঈদের পরে নতুন মানুষ সংসারে আসার কথা। তাই মানসিক চাপ কম ছিল। কিন্তু ভোররাতে কামরার সবাই যখন ঘুমে ঢুলছেন সেই সময়ে হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে বাবলি। সহযাত্রীরা জানতে পেরে তৎপর হয়ে ওঠেন। রাতের অন্ধকার ভেদ করে ট্রেন তখন রামপুরহাট স্টেশন ছাড়িয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটছে। পরের স্টেশন মালদা টাউন তখনও আড়াই ঘণ্টার পথ।’
তিনি বলেন, ‘কী হবে, এই আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে আমি যখন ঘামছি তখন মহিলা সহযাত্রীরা আমার স্ত্রীর কাছে এসে বলে চলেছেন, মা তোমার চিন্তার কিছু নেই। একটু সহ্য করো। সাড়ে পাঁচটার কিছু আগে মালদায় ট্রেন পৌঁছতেই দেখি ডাক্তার, নার্স সবাই হাজির।’ তখন সবে ভোরের আলো ফুটেছে। তার মধ্যেই নবজাতকের কান্না ভেসে আসে মুর্শিদের কানে। সহযাত্রীদের অভিনন্দনে ভেসে যান তিনি।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, ট্রেনের এক যাত্রীর কাছ থেকে ফোনে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেলের মালদার বিভাগীয় হাসপাতালকে সতর্ক করা হয়েছিল। ব্যাপারটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। মালদা রেলওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক-সহ গোটা মেডিক্যাল টিম খুব ভালোভাবে গোটা প্রক্রিয়াটা সামলেছেন।
সাধারণ শ্রেণির ওই কামরার মধ্যেই শিশুর নাড়ি কেটে মা ও শিশুকে পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার জন্য তাঁদের দু’জনকে মালদা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পদাতিক এক্সপ্রেসের এই ঘটনায় পূর্ব রেলের মেডিক্যাল টিম ভালো কাজ করেছে এটা ঠিক, কিন্তু ওই দম্পতির সহযাত্রীরাও দারুন সাহায্য করেছেন। রেলের তরফে আমরা তাঁদেরও কুর্নিশ জানাচ্ছি।’