Bombay High Court: ফেক এনকাউন্টারে যাবজ্জীবন প্রদীপ শর্মা-সহ ১৩ পুলিশের
এই সময় | ২০ মার্চ ২০২৪
এই সময়: ইতিহাস তৈরি হলো বোম্বে হাইকোর্টে। ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যার কোনও ঘটনায় এই প্রথম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলো একসঙ্গে ১৩ জন পুলিশকর্মীর। এবং তাদের অন্যতম মহারাষ্ট্র পুলিশের কুখ্যাত সেই ইনস্পেক্টর ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ প্রদীপ শর্মা, ২৫ বছরে ১১২টি ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যায় যে অভিযুক্ত। কোনও মামলাতেই অবশ্য এর আগে তার সাজা হয়নি। এমনকী মঙ্গলবার যে মামলাটিতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগের নির্দেশ দিয়েছে বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি রেবতী মোহিতে দেড়ে এবং বিচারপতি গৌরী গডসের বেঞ্চ, সেই মামলাতেও দায়রা আদালতে খালাসই পেয়ে গিয়েছিল প্রদীপ।যোগাযোগের জোর এতই যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগসাজশ এবং তিন হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি করার অভিযোগে ২০০৮-এ একদফা চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েও পুনর্বহাল হয়েছিল। ২০২১-এ আম্বানিদের বাড়ি অ্যান্টিলায় বোমাতঙ্ক ছড়ানো এবং তার পর পরই মনসুখ হিরন হত্যার ঘটনাতেও সে অভিযুক্ত। এতকাল সাজা এড়িয়ে চলা সেই প্রদীপকে ২০০৬-এ ভারসোভায় রামনারায়ণ গুপ্তা ওরফে লখন ভাইয়ার হত্যার ঘটনায় হাইকোর্ট অবশেষে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিল। একদা ছোট রাজনের ঘনিষ্ঠ লখনকে তার বিরোধী গোষ্ঠীর সুবিধার জন্যে প্রদীপের নেতৃত্বে পুলিশ সাজানো সংঘর্ষে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছিল বলে আদালতের পর্যবেক্ষণ।
এই মামলা হয়তো এগোতোই না যদি না ভাইয়ের হত্যাকারীদের সাজা নিশ্চিত করতে দেড় দশকের বেশি মরিয়া লড়াই না-চালাতেন রামপ্রসাদ গুপ্তা। রামনারায়ণ ওরফে লখন ভাইয়ার অপহরণের পরেই রামপ্রসাদ মুম্বইয়ের তদানীন্তন পুলিশ কমিশনার এএন রায়কে টেলিগ্রামে গোটা ঘটনা জানিয়েছিলেন। বিপদের আশঙ্কা প্রকাশও করেছিলেন। সেই টেলিগ্রাম সত্ত্বেও প্রাণে বাঁচেননি লখন। ২০০৬-এর ১১ নভেম্বর ভারসোভায় সাজানো সংঘর্ষে নিহত হন। সেই মামলায় পুলিশ রিপোর্ট অবশ্য প্রথমে পুলিশকে ক্নিনচিটই দেয়।
কিন্তু রামপ্রসাদের সেই টেলিগ্রামের ভিত্তিতে বম্বে হাইকোর্ট ২০০৯-এ ডিসিপি কেএম প্রসন্নর নেতৃত্বে সিট গঠন করে পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেয়। সিট-এর তদন্ত রিপোর্টে প্রদীপকেই হত্যার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু দায়রা আদালত ২০১৩-র জুলাইয়ে প্রদীপকে আশ্চর্যজনক ভাবে খালাস করে দেয়। এমনকী লখন ভাইয়ার মাথা থেকে উদ্ধার বুলেটটি যে প্রদীপের আগ্নেয়াস্ত্রেরই, সেই ব্যালিস্টিক রিপোর্টও অগ্রাহ্য করে দায়রা আদালত। তবে অন্য দুই ইনস্পেক্টর প্রদীপ সূর্যবংশী ও দিলীপ পালান্ডে এবং কনস্টেবল তানাজি দেশাইকে হত্যায় দোষী সাব্যস্ত করে। বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী-সহ আরও ১৮ জনকে ভুয়ো সংঘর্ষে মদতের ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল দায়রা আদালত।
প্রদীপকে খালাস করার বিরুদ্ধে এবং অন্য অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ফের হাইকোর্টে আপিল করেন রামপ্রসাদ। গত নভেম্বরে দীর্ঘ শুনানি শেষ হয় হাইকোর্টে। মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি রেবতী মোহিতে দেড়ে এবং বিচারপতি গৌরী গডসের বেঞ্চ প্রদীপকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। তিন সপ্তাহের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আরও ১২ জন পুলিশকর্মী ও এক সিভিলিয়ানেরও যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তবে অন্য ৬ জন সিভিলিয়ানকে অব্যাহতি দিয়েছে হাইকোর্ট। মোট ২২ জন অভিযুক্তের মধ্যে এক সিভিলিয়ান ও এক পুলিশকর্মী হাইকোর্টে আপিল মামলা চলাকালীনই মারা গিয়েছিল।
কেন দায়রা আদালত অকাট্য প্রমাণ সত্ত্বেও প্রদীপকে খালাস করেছিল--সে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এই হত্যার ঘটনায় একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী অনিল ভেদার হত্যার কিনারা না হওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। দায়রা আদালতে বিচার-পর্বে অনিল রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হন সাক্ষ্যদানের ঠিক আগেই। দু’মাস পর তাঁর দগ্ধ দেহাবশেষ উদ্ধার হয়। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল, দেহটি অনিলের। এত দিনেও সেই হত্যায় কারও সাজা না-হওয়াকে ‘লজ্জার’ এবং ‘প্রহসন’ বলে চিহ্নিত করেছে হাইকোর্ট।