এই সময়: এবার থেকে যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট মিলতে পারে কোনও ক্যাফে বা শপিং মল থেকে। শর্ত পূরণ করতে পারলে যে কেউ তৈরি করতে পারেন স্বয়ংক্রিয় টেস্টিং স্টেশন। এবার থেকে কেবলমাত্র ‘অটোমেটেড টেস্টিং স্টেশন’ বা এটিএস-এর মাধ্যমেই হবে নিতে হবে যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই নিয়ম বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছে। এই আইন গত বছরই নিয়ে এসেছিল পরিবহণ মন্ত্রক।কিন্তু সেই সময়ে গাড়ির মালিকেরা কিছু বিষয়ে আপত্তি জানানোয় নতুন করে সংশধিত আইনটি চালু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করল মন্ত্রক। নতুন আইনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেন্ট্রাল মোটর ভেহিকল রুলস (সেভেন্থ অ্যামেন্ডমেন্ট)-২০২৪’। তবে সংশোধিত এই নিয়ম নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে এ রাজ্যের গাড়ির মালিকদের। তাঁদের বক্তব্য, সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ফলে এবার থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে গেলে বিস্তর টাকা খরচ হবে। নতুন নিয়মে সেই ব্যবস্থাই করা হলো।
নতুন ‘এটিএস’ তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তার মধ্যে যেমন জায়গার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তেমন কর্মী নিয়োগ নিয়েও নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরাসরি পরিবহণ দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্ক এবং দ্বন্দ্ব নেই তেমন সংস্থা এটিএস স্থাপন করতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে ক্যাফে, বিমা কিয়স্ক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ড্রাইভার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও। তবে তাদের যে সব শর্ত পূরণ করতে হবে, তার মধ্যে প্রধান হলো জায়গা।
নিয়মে বলা হয়েছে, টু-হুইলার, হালকা-মাঝারি এবং ভারী গাড়ির জন্য পৃথক টেস্ট লেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এটিএস তৈরি করতে গেলে টু হুইলার লেনের জন্য ৫০০ বর্গ মিটার এবং থ্রি হুইলার, হালকা-মাঝারি এবং ভারী গাড়ির জন্য ১৫০০ বর্গ মিটার জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক। টেস্টিং স্টেশনের জন্য রিসেপশন-সহ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ব্লক থাকতে হবে। এছাড়াও রাখতে হবে ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন, ওয়াশরুম, পার্কিং, গাড়ির জন্য ভিস্যুয়াল ইনস্পেকশন এরিয়া। সেখানে কত জন কর্মী রাখতে হবে বিজ্ঞপ্তিতে তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
সেন্টার হেড বা ইনচার্জ-কে অটোমোবাইল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, বা ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা থাকতে হবে। এ ছাড়া সিস্টেম অ্যানালিস্ট রাখতে হবে। তাঁর কম্পিউটার সায়েন্স কিংবা সমতুল কোর্সের ডিপ্লোমা থাকা বাধ্যতামুলক। এছাড়াও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, লেন ইনচার্জ, লেন অপারেটর এবং মেনটেন্যান্স টেকনিশিয়ান রাখতে হবে। যেহেতু পুরো ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়, ফলে পরিবহণ মন্ত্রকের সেন্ট্রার সার্ভারের মাধ্যমেই কাজ হবে। এখানে গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং মেকানিকও থাকবে।
এখানেই প্রশ্ন গাড়ির মালিকদের। সারা বাংলা বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এতে আমাদের লাভের থেকে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। কারণ নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি সংস্থার হাতে গেলে তারা মুনাফার জন্য যে অনৈতিক কাজ করবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নতুন আইনে নেই। যেহেতু তারা যন্ত্রাংশও বিক্রি করতে পারবে, তাই চাইলে তারা গাড়ির নানা খুঁত বের করে যন্ত্রাংশ কিনতে চাপ তৈরি করতেই পারে। সে ক্ষেত্রে গাড়ির মালিকেরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।’ তাঁর সংযোজন, ‘এখন তো ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে যে বিরাট সমস্যা হয়, তা তো নয়। তা হলে সরকারের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে বলেই ধরে নিতে হবে।’