• চড়ুই কমেনি, কমছে ওদের বাসস্থান, চিন্তায় গবেষকরা
    এই সময় | ২১ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়: কেউ যে ওদের বিপদ দেখতে পাচ্ছেন, তেমনটা নয়। এমনকী, প্রাকৃতিক পরিবেশে পশুপাখি বা গাছপালা কতটা নিরাপদ, সেটা বোঝাতে যে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অফ নেচারের’ (আইইউসিএন) স্টেটাস রিপোর্টকে প্রামাণ্য বলে গণ্য করা হয়, সেই রিপোর্টেও চড়ুইকে ‘লিস্ট কনসার্নড’ বা পুরোপুরি নিরাপদ তালিকায় রাখা হয়েছে।সংখ্যায় ওরা হয়তো কমেনি, কিন্তু কলকাতা বা আশপাশের গৃহস্থ বাড়িতে, বসতি এলাকায় অতি পরিচিত এই পাখির বাসস্থান যে কমছে, সেই ব্যাপারে সাধারণ মানুষদের অনেকেই একমত। বুধবার ২০ মার্চ, আন্তর্জাতিক চড়ুই দিবসে উঠে এল চড়ুইদের করুণ পরিস্থিতির কথা।

    সম্প্রতি পক্ষী গবেষকদের একাধিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য জানাচ্ছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের শহরাঞ্চলে বসবাসকারী চড়ুইরা তাদের ৯৪ শতাংশ বাসস্থান খুইয়েছে। এই প্রসঙ্গে পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে গবেষণারত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রকৃতি সংসদের’ তরফে পক্ষীবিদ অপূর্ব চক্রবর্তী বলছেন, ‘যাকে সিটিস্কেপ বলে, সেটা গত কয়েক দশকে আমূল বদলে গিয়েছে। শহরের বাড়িগুলোর নকশাও এখন একেবারে অন্য রকম। আগে বাড়িতে ঘুলঘুলি থাকত। ওই ঘুলঘুলিতে চড়ুই বাসা করত। ইদানীং আর ঘুলঘুলি থাকে না। ফলে, সেই কারণে ওদের থাকার জায়গা বড় ধাক্কা খেয়েছে।’

    পক্ষীবিদদের অনেকেই জানাচ্ছেন, চড়ুইদের খাবারও পেতেও সমস্যা হচ্ছে। চড়ুইরা প্রধানত বীজ ভক্ষণকারী— এরা ঘাসের বীজ খায়। কিন্তু এখন শহরে ঘাসজমিরও তো অভাব! কলকাতার পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পুরোনো কলকাতার গল্প’। ওই সংগঠনের অন্যতম সদস্য জয়ন্ত সেনের নেশা হলো, পাখি দেখা।

    একই সঙ্গে শহরের পুরোনো বহু বাড়ি ভেঙে নতুন নতুন বাড়ি তৈরি এবং তার পরিণতি হিসেবে চড়াইয়ের সংখ্যা কমে যাওয়া— দু’টোই নজরে পড়ছে তাঁর। জয়ম্ত বলছেন, ‘ওদের সংখ্যা যে কমে গিয়েছে, তা নয়। কিন্তু ওরা আর মানুষের কাছাকাছি থাকতে পারছে না। অথচ ওরাও কাকের মতোই মানুষের চারপাশে থাকতে ভালোবাসে। মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার খায়।’

    পাখি নিয়ে আগ্রহীদের একাংশ জানাচ্ছেন, শহরআঞ্চল থেকে চড়ুইদের ক্রমশ সরে গ্রামের দিকে চলে যাওয়া বাস্তুতন্ত্রের জন্য খুব স্বাস্থ্যকর নয়। তাঁদের সাফ কথা, আন্তর্জাতিক চড়ুই দিবস নিছকই একটা দিন নয়, অবৈজ্ঞানিক নগরায়ন যে অদূর ভবিষ্যতে বড় বিপদ ডেকে আনছে, এই দিন সেটাই মনে করিয়ে দেয়।
  • Link to this news (এই সময়)