• কমছে বরফ, বাড়ছে বৃষ্টি! কোন বার্তা দিচ্ছে সুমেরু?
    এই সময় | ২১ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়: শ্বেতশুভ্র আর্কটিক। এখানে মেঘ নয়, বরফ গাভির মতো চরে। অথচ সেই উত্তর মেরুতেই হারিয়ে যাচ্ছে বরফ। বাড়ছে বৃষ্টি। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ধাক্কায় পরিস্থিতি এমন চললে তা অচিরে শুধু মহাসাগরের বরফের চাদরের ক্ষতি করবে তা নয়, পাল্টে দিতে পারে গোটা নর্দান হেমিস্ফিয়ারের ওয়েদার প্যাটার্নও!অতি সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীরা আর্কটিক ওশান (উত্তর মহাসাগর) এবং নর্থ অ্যাটলান্টিক ওশান (উত্তর অতলান্তিক মহাসাগর) থেকে পাওয়া প্রায় সাড়ে তিন দশকের ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন। ১৯৮০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই দুই জায়গার বৃষ্টিপাতের প্রবণতার ডেটা অ্যানালিসিস করে বিজ্ঞানীরা দেখছেন, আর্কটিকে (সুমেরু/উত্তর মেরু) উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে রেইনি ডে-র সংখ্যা।

    অথচ আর্কটিকের অতি শীতল তাপমাত্রার জন্য এখানে বৃষ্টি বরফ হয়ে ঝরত। জার্নাল অফ ক্লাইমেটে প্রকাশিত সেই গবেষণা বলছে, বর্ষাকালের সময়সীমাও এই অঞ্চলে বেড়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়েছে একটি তথ্য। ১৯৮০ সালে নর্থ অ্যাটলান্টিক ওশানে যতদিন বৃষ্টিপাত হতো, ২০১৬ সালে দেখা যাচ্ছে, প্রতি দশকের হিসেবে সেটা অন্তত ৫ দিন বেড়ে গিয়েছে।

    সেন্ট্রাল আর্কটিক ওশান ও তার আশপাশের অঞ্চলে দশকের অনুপাতে বৃষ্টি ২ দিন বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বিশ্বের বাকি অঞ্চলের তুলনায় উত্তর মেরুর তাপমাত্রা ৪ গুণ বেশি গতিতে বাড়ছে। নাসার বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও গাণিতিক মডেল মিলিয়ে যে ম্যাপটি বানিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, নর্থ অ্যাটলান্টিকের বড় অংশ ঘন নীল। হাল্কা নীল অংশ বেশ কম।

    বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর থেকেই বোঝা যায়, এই অঞ্চলে রেইনি ডে বাড়ছে। নরওয়ের উত্তরে ব্যারেন্টস সি এবং সাইবেরিয়ার উত্তরে কারা সি-এর রংও ম্যাপে ঘন নীল। অর্থাৎ সেখানে কোনও বরফের চাদর নেই। এই গবেষণার অন্যতম কো-অথর তথা নাসার গাডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের ক্লাইমেট সায়েন্টিস্ট চেলসি পার্কার বলছেন, ‘আমরা আর্কটিক ও নর্থ অ্যাটলান্টিকের কোথাও ডার্ক ব্রাউন অংশ দেখিনি। অর্থাৎ বছরে রেইনি ডে কমার কোনও লক্ষণ মেলেনি।

    এমন কেন হচ্ছে?

    গবেষণার লিড অথর তথা নাসার ক্রায়োস্ফেরিক সায়েন্টিস্ট লিনেট বভ্যের বলছেন, ‘তাপমাত্রা যখন হিমাঙ্কের উপরে থাকে, তখন মেঘের মধ্যে জলকণা বৃষ্টি হিসেবেই জমে এবং ঝরে পড়ে। এই তাপমাত্রাই মাইনাসে থাকলে বরফপাত হয়। এবার যদি সামুদ্রিক বরফের চাদরের উপরে বরফের বদলে টানা বৃষ্টিই পড়তে থাকে, তা ওই চাদরকে গলিয়ে দিতে পারে। কারণ, বরফে সূর্যের আলো রিফ্লেক্ট করার ফলে তার বিকিরণের অনেকটাই মহাকাশে ফিরে যায়। আবার বৃষ্টি পড়লে বরফের সেই ‘বাফার’ ধুয়ে যায়, ভূপৃষ্ঠ বেশি গরম হয়। আর্কটিকের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বরফের চাদর পাতলা হয়ে যাচ্ছে।’

    এখানেই থামছে না সমস্যা। অতিরিক্ত বৃষ্টি আর্কটিক এবং নর্থ অ্যাটলান্টিকে বরফের চাদরের মধ্যে পুকুরের মতো জলাশয় তৈরি করছে। ওই জল সূর্যের আলো অনেক বেশি টেনে নেওয়ায় আশপাশের বরফ তো গলছেই, এই জল থেকে তৈরি হওয়া গরম বাষ্প এখানকার বায়ুমণ্ডলে আটকে রেখে তৈরি করছে হিট-ট্র্যাপিং গ্রিনহাউস গ্যাস। তাতে আশপাশের আরও এলাকার বরফের চাদর গলে যাচ্ছে।

    উত্তর মেরুর এই পরিস্থিতির প্রভাব কিন্তু পড়ছে গোটা বিশ্বেই। নর্থ পোলে তৈরি হওয়া সেই এয়ার মাস নর্থ আমেরিকার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে সাউথ পোলে। ফলে ইউএসএর নাগরিকরা গত কয়েক বছরে পোলার ভর্টেক্স-সহ বিভিন্ন রকমের ‘এক্সট্রিম টেম্পারেচার স্যুইং’ দেখছেন।

    একই ভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে পরিবেশগত পরিবর্তনের জেরে ঘন ঘন এল নিনোর প্রভাব পড়ছে ভারতেও। শীতকালের একটা বড় সময়ে কাশ্মীর-সহ গোটা উত্তর ভারত বরফের দেখা পায়নি এ বার। আর্কটিকের বরফ এভাবে হারাতে থাকলে আরও বড় বিপর্যয় দূরে নয়, আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের
  • Link to this news (এই সময়)