এই সময়, শিলিগুড়ি: যে আগুন নেভাতে মাথার চুল ছেঁড়ার দশা বনকর্মীদের, প্রকৃতির হাতযশে সেই পাহাড়ের বনাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়া আগুন অবশেষে নিয়ন্ত্রণে এল। শীতে এ বার বৃষ্টি ছিল না। পাহাড়ে বৃষ্টি না-এলে প্রকৃতি কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সেটা গত এক সপ্তাহ ধরে টের পেয়েছেন দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের বাসিন্দারা।একের পর এক বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডে দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে ভয়ঙ্কর চেহারা নেয় মিরিক, কার্শিয়াংয়ের গিদ্দে পাহাড় ও কালিম্পংয়ের পেডংয়ে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা গিদ্দে পাহাড়ের জঙ্গলের আগুন নেভাতে মিরিক পুরসভা থেকে জলের ট্যাঙ্ক এনে কাজে নামেন বনকর্মীরা।
পেডংয়ের জঙ্গলের খুব কাছেই নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যান। ফলে উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে বনকর্তাদের। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বনকর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে নামিয়েছিল বন দপ্তর। মঙ্গলবার গভীর রাতে বৃষ্টি নামলে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বৃষ্টি নামার পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর।
সেই পূর্বাভাস মিলিয়ে গভীর রাতে পাহাড়-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে ঝড় এবং প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সঙ্গে বুধবার ভোরে প্রবল তুষারপাত শুরু হয় দার্জিলিংয়ের সান্দাকফুতে। মানেভঞ্জন পেরিয়ে টুমলিং থেকে সান্দাকফু পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা সাদা তুষারে ঢাকা পড়ে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের গ্যাংটক শাখার আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘ঘূর্ণাবর্ত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। দিনে কখনও রোদের দেখা মিললেও শনিবার পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলবে।’
ফলে জঙ্গলের আগুন কেবল নিয়ন্ত্রণে আসাই নয়, জঙ্গলে নতুন করে আগুন লাগানোর চেষ্টাও আর সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন রাজ্য বন দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল রাজেশ কুমার। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি আপাতত আমাদের বনাঞ্চলকে রক্ষা করল। যে ভাবে আগুন ছড়াচ্ছিল তাতে আরও ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারত।’
গোরু চরাতে জঙ্গলে যাতায়াত করেন, এমন গো-পালকেরাই শুকনো পাতায় আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বনকর্তারা। পাহাড়ের পাইন গাছের পাতায় জ্বালানি সহায়ক তেল থাকে। তার ফলেই আগুন এতটা ভয়ঙ্কর চেহারা নেয় বলে অনুমান তাঁদের।
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘বনাঞ্চলে আগুন লাগলে কেবল গাছপালার ক্ষতিই হয় না। সেই জঙ্গলের ইকো সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বনকর্মীদের পক্ষে সেই ক্ষতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। বৃষ্টি নামায় সেই ক্ষতি সামাল দেওয়া সম্ভব হলো।’