এই সময়: ইডি-সিবিআইয়ের মতো এজেন্সিকে মোদী সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হাতিয়ারে পরিণত করেছে বলে বার বারই অভিযোগ করে বিরোধীরা। একাধিক বিরোধী নেতার তরফে মামলায় বিভিন্ন আদালতেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক মামলাতেও এই অভিযোগ রয়েছে। এ বার দেশের শীর্ষ আদালতও ইডি-সিবিআইয়ের মতো এজেন্সির তদন্তের ধরন এবং তার ‘উদ্দেশ্য’ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলল।কোনও অভিযোগে কেন্দ্রীয় এজেন্সি কাউকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তে কেন অনন্ত সময় লাগাবে, ‘তদন্ত চলছে’, ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হবে’ যুক্তিতে কেন অনির্দিষ্টকাল বন্দিকে জামিনে বঞ্চিত করা হবে--সে প্রশ্ন তুলল বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর বেঞ্চ। তদন্তে ইডি’র এই প্রবণতাকে প্রবল তিরস্কার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ইডি’র হাতিয়ার পিএমএলএ বা প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের চেয়ে যে সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে কথাও মনে করিয়ে দেন বিচারপতি খান্না।
ওই ২১ অনুচ্ছেদের রক্ষাকবচ উড়িয়ে কাউকে অনির্দিষ্টকাল বিচারাধীন বন্দি করে রাখা যে মেনে নেওয়া হবে না--বুধবার তেমন ইঙ্গিতও দিয়েছে বিচারপতি খান্না ও বিচারপতি দত্তর বেঞ্চ। ঝাড়খণ্ডে বেআইনি খনন এবং সেই সূত্রে অর্থের অবৈধ লেনদেন সংক্রান্ত মামলায় বন্দি প্রেম প্রকাশের জামিন-আর্জির শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। প্রেম প্রকাশ ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, এখন জেলবন্দি, হেমন্ত সরেনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ১৮ মাস ধরে বিচারাধীন বন্দি হিসেবে জেলে রয়েছেন প্রেম। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কারও গ্রেপ্তারির পর ৬০ বা ৯০ দিনে তদন্ত শেষে চার্জশিট পেশ না হলে সেই বন্দি এমনিতেই জামিন পাওয়ার অধিকারী। যা আইনি পরিভাষায় ‘ডিফল্ট বেল’।
কিন্তু ইডি-সিবিআই (এনআইএ’ও)-এর মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি বহু ক্ষেত্রেই এক দফা চার্জশিট পেশ করে ‘তদন্ত চলছে’ বলে রিপোর্ট দেয় আদালতে। এবং সেই ‘তদন্ত চলা’র যুক্তিতেই বন্দিকে ডিফল্ট বেল-এ বঞ্চিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইডি’র আবার বিশেষ অস্ত্র পিএমএলএ’র ৪৫ ধারা। এই কঠোর ধারায় ইডি’র স্পেশাল কোর্ট যদি নিঃসন্দেহ হয় যে বন্দি প্রকৃত অপরাধী নন এবং জামিন দিলে অপরাধ করবেন না--একমাত্র তখনই জামিন মঞ্জুর হয়। পিএমএলএ’র এই ধারাটি সাধারণ ফৌজদারি কার্যবিধির পরিপন্থী। কারণ, অন্য ফৌজদারি অপরাধে বিচারাধীন বন্দি প্রকৃত অপরাধী কি অপরাধী নন--তা জামিন-আর্জির শুনানিতে বিচার্যই নয়।
কেননা, অপরাধ নির্ধারিত হওয়ার কথা বিচারের শেষে। জামিন একটা অন্তর্বর্তী পর্যায়। যেখানে সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারই বিবেচ্য। বেল ইজ রুল, জেল একসেপশন--সেই ১৯৭৮-এ রাজস্থান বনাম বালিয়া মামলায় রায়ে জানিয়েছিল বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ারের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ। কিন্তু পিএমএলএ’র ধারায় কাউকে যখন গ্রেপ্তার করে ইডি, তাঁর জামিন পাওয়া হয়ে ওঠে প্রায় অসম্ভব। ইডি’র ‘তদন্ত চলছে’ যুক্তিতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশের সুযোগ যেহেতু থাকে, জামিনে বঞ্চিত হন বন্দি। এ দিন শীর্ষ আদালত আইনগত এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং বন্দির অধিকারের পক্ষেই কার্যত সওয়াল করেছে।