• শাস্তির মুখে পড়তে পারেন একাধিক পুলিশকর্তা, দিনহাটার সংঘর্ষে উদ্বিগ্ন কমিশন
    এই সময় | ২১ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়, কোচবিহার ও কলকাতা: লোকসভা ভোটের প্রথম দফার আগে কোচবিহারের দিনহাটায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন। জেলাশাসকের কাছ থেকে ঘটনার বিশদ রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে তারা। কোচবিহার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে ই-মেল করে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ করবে। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যারপরনাই বিরক্ত কমিশন। সূত্রের খবর, এর জেরে কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে।দিনহাটার ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও আলাদা করে রিপোর্ট চেয়েছেন। ঘটনার খোঁজখবর নিতে এদিন তিনি সটান দিনহাটায় পৌঁছে যান। শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার পর সড়কপথে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ তিনি পৌঁছন দিনহাটায়। যেখানে সংঘর্ষ হয়েছিল, সেখানে গিয়ে জখম তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর তিনি চলে যান বুড়িরহাটে বাবলু বর্মণ নামে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি চাই, রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এখান থেকে অশান্তির খবর শুনেছিলাম। অশান্তির খবর পেয়েই আমি এখানে ছুটে এসেছি।’

    দিনহাটায় সংঘর্ষের ঘটনায় কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিদায়ী প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক-সহ মোট ৪৫ জন বিজেপি নেতা-কর্মীর নামে দিনহাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। পাল্টা বিজেপির তরফেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার দিনহাটায় চব্বিশ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। যদিও বিকেল চারটেয় বন্‌ধ প্রত্যাহার করে নেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। উদয়ন এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এদিন জেলার এসপি অফিস ঘেরাও করে বিজেপি। ব্যারিকেড ভেঙে বিজেপি কর্মীরা এগনোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্ত ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

    এসডিপিও ধীমান মিত্র জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে। কিন্তু এতবড় ঘটনার পর পুলিশ কেন অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারল না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

    নির্বাচন কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘মঙ্গলবার রাতে দিনহাটায় দু’পক্ষের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছে, তার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও সেই খবর সম্প্রচারিত হয়েছে। সেখান থেকে অপরাধীদের চিহ্নিত করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তা সত্ত্বেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এটা খুবই বিস্ময়ের।’

    দিনহাটার সংঘর্ষের জন্য আসলে দায়ী কে, কারা প্রথম হামলা চালাল, তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। নিশীথের অভিযোগ, ‘প্রচার শেষ করে ভেটাগুড়িতে বাড়ির ফেরার সময়ে আমার কনভয় লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে তৃণমূল কর্মীরা। তারপরই উদয়নের নেতৃত্বে একদল দুষ্কৃতী হাতে বাঁশ, রড, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা চালায়।’ যদিও তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, হামলা চালিয়েছে বিজেপিই।

    কোচবিহার জেলার দিনহাটায় পৌঁছলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। নির্বাচনের আগে অশান্তি রুখতে কড়া বার্তা দিলেন তিনি। পাশাপাশি, দিনহাটার মানুষ একজোট হয়েছেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো এবার আর অশান্তি ছড়াবে না বলেও বার্তা দেন তিনি। রাজ্যপাল জানান, নির্বাচনে অশান্তি রুখতে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলা হবে। তিনি জানান, দুই মন্ত্রীকে এখানকার মানুষ বার্তা দিয়ে দিয়েছে।
  • Link to this news (এই সময়)