Garden Reach Building Collapsed : কাঁচা টাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা মেটাচ্ছে ৬ জনের সিন্ডিকেট
এই সময় | ২১ মার্চ ২০২৪
সোমনাথ মণ্ডল
জালে এক, রইল বাকি পাঁচ! ছ’জনের প্রোমোটার-সিন্ডিকেটকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা হোক— চাইছেন গার্ডেনরিচের বাসিন্দারা। যদিও তাঁদের প্রশ্ন, পাটিগণিতের এই হিসেব কি আদৌ মেলাতে পারবে কলকাতা পুলিশ ও কলকাতা পুরসভা?তদন্তে উঠে এসেছে, কাঁচা টাকায় ফ্ল্যাট কেনার চাহিদা থাকায় ওই তল্লাটে বেআইনি বহুতলের রমরমা বেড়েছে গত কয়েক বছর ধরে। বাম জমানায় বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ ছিলই। পরবর্তী সময়ে সে জিনিস যে বন্ধ হয়নি, তার টাটকা উদাহরণ গার্ডেনরিচের আজহুড় মোল্লা বাগানে নির্মীয়মাণ বহুতল বিপর্যয়ে মৃত্যু মিছিল। অভিযোগ, পুরসভার নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ওই এলাকায় বহুতলটি তৈরি হচ্ছিল। স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ, প্রোমোটারদের অসাধু চক্রকে মদত দিচ্ছেন পুলিশ ও পুরসভার আধিকারিকদের একাংশে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে রাজনৈতিক যোগ নিয়েও।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল বিপর্যয়ে স্থানীয় প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমের নাম সামনে এসেছে। তবে অভিযোগ, ওয়াসিম একা নন, আরও পাঁচ জন প্রোমোটারের রীতিমতো দাপট রয়েছে ওই এলাকায়। তাঁদের সিন্ডিকেটই ঠিক করে, বেআইনি বহুতলের কোন ফ্লোরে ফ্ল্যাটের দাম কত হবে, সেটা। তাঁদের ঠিক করে দেওয়া স্কোয়ার ফিট পিছু দরে ফ্ল্যাট কিনতে হয় ইচ্ছুক ক্রেতাদের। ওই চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের একাংশ প্রতিবাদ করলে তাঁদের খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল, এমন অভিযোগ এখন সামনে আসছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েক জন বাসিন্দা জানাচ্ছেন, যেখানে জলা বা ডোবা রয়েছে, অথবা দীর্ঘদিন ধরে বস্তি রয়েছে, সেই জায়গাই বেআইনি নির্মাণের ‘এপিসেন্টার’। এই কারবার সুবিধে মতো চালানোর জন্য চক্রের ‘সদস্য’ প্রোমোটাররা নিজেদের মধ্যে এলাকা ভাগ করে নিয়েছেন। অভিযোগ, দীনু মিস্ত্রি বাগান, আজহুড় মোল্লা বাগান লেন ও ব্যানার্জি পাড়ায় বেআইনি নির্মাণের রাশ রয়েছে সুরেশ নামে এক জনের হাতে। আবার ফতেপুর, পাহাড়পুর রোডে মুকেশই শেষ কথা। আবার ওই পাহাড়পুরে অজয় ও প্রদীপের নামেও অভিযোগ রয়েছে ভূরি ভূরি। রাজকুমার নামে উঠতি এক প্রোমোটারের বিরুদ্ধেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ নালিশ করছেন। এই এলাকা ভাগ করে নেওয়া অনেকটাই দুষ্কৃতী বা মস্তানদের কায়দায়।
কিন্তু ফ্ল্যাটের চাহিদা কেন এত বাড়ছে ওই তল্লাটে?
বন্দর এলাকায় বহু মানুষ ভিন রাজ্য থেকে আসছেন। আগে তাঁদের বড় অংশ ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু ভাড়া দিতে তাঁদের যে টাকা প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে ফ্ল্যাট কেনাই আয় দেবে বলে মনে করে তাঁরা সে দিকে ঝুঁকছেন। ডক এলাকা বলে স্বভাবতই কাঁচা টাকার কারবার বেশি। যাঁরা সেই কারবারি বা যাঁদের হাতে কাঁচা টাকা পৌঁছচ্ছে ভালো পরিমাণে, বেআইনি ভাবে নির্মিত ফ্ল্যাট মূলত তাঁদেরকে গছাচ্ছেন প্রোমোটারদের একাংশ। তাতে দু’পক্ষেরই লাভ বলে পুলিশ ও পুরসভার বক্তব্য।
করোনাকালের আগে ওই এলাকার যুবকরা ব্যবসার খাতিরে নেপাল, ভুটান, চিন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কার মতো দেশে প্রায়ই যাতায়াত করতেন। বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, দামি জুতো, জামা-কাপড়, চশমার আমদানি করতেন তাঁরা। কিন্তু ২০২২ সালের পর সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সেই যুবকদের একাংশ রোজগারের বিকল্প উপায় হিসেবে জুড়ে গিয়েছেন প্রোমোটারদের সঙ্গে।
নিয়ম মেনে যে সব প্রোমোটার কাজ করছেন, তাঁরা পড়ছেন সমস্যায়। পুরকর্তাদের কানে অভিযোগ পৌঁছলেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। ওই এলাকায় সঙ্কীর্ণ রাস্তার মধ্যেই চার-পাঁচতলা বহুতল মাথা তুলেছে। দু’টি বহুতলের মধ্যে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় দূরত্বও থাকছে না। আজহুড় মোল্লা বাগানের মতো ফের কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বাসিন্দাদের উদ্ধার করা যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন। যদিও কলকাতা পুরসভার বক্তব্য, সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের পর অভিযুক্ত ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে।