রণজয় সিংহ: সীমান্ত কাঁটাতারের ওপারে ভোট প্রচার করলেন মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। এই কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার। আর কাঁটাতারে ওপারে বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আজও নিজ ভূমিতে পরবাসী হয়ে রয়েছেন। স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়েও দুই দেশের সীমান্ত কাঁটাতার প্রায় ৩০০টি পরিবারকে পরাধীন করে রেখেছে। কার্যত বন্দী জীবনযাপন করছেন সীমান্ত কাঁটাতারের ওপারে ৩০০টি পরিবার।
মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের কালিয়াচক থানার অন্তগর্ত মহব্বতপুর,হাদিনগর-সহ বেশ কয়েকটি কাঁটাতারের ওপারে গ্রাম রয়েছে। এই গ্রামে একসময় বসবাস করতেন প্রায় ১ হাজারের বেশী পরিবার। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার পর আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবার এপারে চলে এসেছেন। কিন্তু আজও আর্থিকভাবে দুর্বল প্রায় ৩০০টি পরিবার রয়ে গেছে কাঁটাতারের ওপারে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়মমত খোলা হয় সীমান্তের দরজা। আর বন্ধও হয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়মে।দিনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই এলাকার বসবাসকারীদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী-সহ রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করতে হয়। সেই সময়ে বাড়িতে খাওয়ার জলটুকুও নিতে হয়। এই এলাকায় ভোট প্রচারে গিয়ে বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, 'মনোহারা বিবি, সঞ্জয় মন্ডল, নকিমুদ্দিন-সহ একাধিক বাসিন্দাদের এমন জীবনের জন্য দায়ী এলাকার সাংসদ তথা কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই এলাকার সাংসদ একই পরিবারের সদস্যরা। তারা ভোটে জিতে এলাকার খবর রাখেন না।'তাই আজকের দিনে এমন করুণ পরিস্থিতে বসবাসকারী বাসিন্দারা রয়েছেন। শুধু তাই নয় তৃণমূল কংগ্রেসকেও একইভাবে কাঠগড়ায় তুলেছেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। তাঁর দাবী এলাকার সাংসদ ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে সমস্যা সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা নীরবেই থেকেছেন। এলাকায় একটি আইসিডিএস সেন্টার নেই। নূন্যতম পরিসেবা নেই এলাকায়। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে মাথার ছাদ হয় নি। প্রধানমন্ত্রী জল মিশনের মাধ্যমে পানীয় জলের সুব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু তা করা হয় নি।ফলে স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়েও রয়েছে পরাধীনভাবে। এর দায় কেবল এলাকার নির্বাচন শাসকদলের প্রতিনিধি ও কংগ্রেস দলের সাংসদের। যদিও জেলা কংগ্রেস দলের সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তণ বিধায়ক ভূপেন্দ্র চন্দ্র হালদার বলেন, 'যিনি অভিযোগ করছেন। তাঁর নিজের মুখটা আয়নাতে দেখা উচিত। তিনি তো ইংরেজবাজার বিধানসভার বিধায়ক। তিন বছর অতিক্রান্ত। তাঁর কাজের খতিয়ান কি?'তিনি আরও বলেন, 'এলাকার সাংসদ কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী ছলচাতুরি করে তো সাংসদ হননি। এলাকার মানুষের কাজ করে, এলাকার উন্নয়ন করে হয়েছেন। তাই মানুষ তাকে নির্বাচিত করছেন বহুবার।' অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ সভাপতি কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীও কংগ্রেস নেতার সুরে বলেন, 'বিজেপির প্রার্থী বড়বড় কথা বলেন। বিগত দিনে সাংসদ প্রয়াত গণিখান চৌধুরী,প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি প্রণব মুখ্যার্জী এলাকার কি উন্নয়ন করেছেন। তা মালদাবাসী জানেন। উনি তো বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক। উনি তো কিছু করতে পারতেন দিল্লীতে দরবার করে। নিজেকে তিনি নির্ভয়া দিদি বলেন। কিন্তু মানুষ এখন বলছেন নিরুদ্দেশ দিদি। এই ইস্যু নিয়ে সরগরম মালদার ভোট রাজনীতি।'