মণিশংকর চৌধুরী: এ মাঠ তাঁর অচেনা। তিনি অভ্যস্ত ক্রিকেটের ২২ গজে। উইলো হাতে আগুন ঝড়ানো বোলারদের শক্তিশেল অবলীলায় মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া তাঁর জন্য জলভাত। কিন্তু এবার তাঁকে খেলতে হবে সম্পূর্ণ অচেনা পিচে। লড়াইটা সহজ নয়। প্রতিপক্ষকে ইতিমধ্যেই ব্রেট লির (Bret Lee) সঙ্গে তুলনা করে দিয়েছেন খোদ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু ইউসুফ পাঠানও তৈরি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন, ?আমি জানি বাউন্সার আসবে। আমিও হেলমেট পরে তৈরি।?
রাজনীতির ময়দানে প্রথমবার পা রেখেই অধীর চৌধুরীর (Adhir Ranjan Chowdhury) মতো জাতীয় স্তরের দাপুটে নেতাকে তাঁরই ঘরের মাঠে হারানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে ইউসুফকে। অধীর চৌধুরী ১৯৯৯ থেকে টানা বহরমপুরের সাংসদ। পরিসংখ্যান বলছে, গত আড়াই দশকে বহরমপুরের মাটিতে কেউ তাঁকে সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। ২০১৯ নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান অনেকটা কমেছিল বটে, কিন্তু সেবার তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন একদা অধীরেরই ছায়াসঙ্গী অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড। অধীরের মতোই তিনি ছিলেন বহরমপুরের ঘরের ছেলে। গোটা লোকসভা কেন্দ্র হাতের তালুর মতো চিনতেন। চেনা মাটিতে তাই লড়াইটাও সেভাবে লড়তে পেরেছেন। ইউসুফের জন্য কাজটা কঠিন।
বহরমপুর থেকে বরোদা। দূরত্বটা প্রায় দুহাজার কিলোমিটার। এই দূরত্ব ঘোচানোটাই তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা জানেন গুজরাটের ইউসুফও। তাঁর নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষিত হতেই ?বহিরাগত? তকমা সেঁটে দেওয়া হয়েছে। তাঁর নামের পাশে। কিন্তু সেই তকমা ঘুচিয়ে ফেলতে মরিয়া ইউসুফ। কলকাতায় নেমেই তাই সিনিয়র পাঠান বলছেন,?জানি কঠিন লড়াই। কিন্তু আমিও হাল ছাড়ব না। লড়াই করার চেষ্টা করব।? ক্রিকেট মাঠে ইউসুফের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল বাউন্সার। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) বলে দিয়েছেন বহরমপুরে অধীর চৌধুরীকে সামলানো ব্রেট লির বাউন্সার সামলানোর মতোই। কিন্তু সেই বাউন্সারে তিনি যে পিছিয়ে আসবেন না, সেটা বুঝিয়ে দিলেন ইউসুফও। বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী বলছেন, ?চেষ্টা করব মানুষের আওয়াজ হয়ে ওঠার। আমিও হেলমেট পরে নিয়েছি। পুল শটও খেলতে জানি।? অধীর অবশ্য প্রতিপক্ষকে খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না। তিনি বলছেন,?ইউসুফ পাঠানকে আমি সম্মান করি। যারা খেলা দেখে টি-২০ দেখে তারা ওঁর খেলা দেখেছে। ওরা খেলোয়াড় আজ আসবে কাল থাকবে না। তাছাড়া আজকাল ক্রিকেটাররা টাকা নিয়ে খেলতে আসে। আমরা খেলি হৃদয় দিয়ে।?
ব্রেট লি মানে অধীরের মোকাবিলা করতে ইউসুফের (Yusuf Pathan) যাতে বিশেষ অসুবিধা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে সবরকম চেষ্টা করছে তাঁর দলও। তৃণমূল জানে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অর্ধেক ভোটারই সংখ্যালঘু। পাঠানকে প্রার্থী করার নেপথ্যে সেই অঙ্ক কাজ করেছে শাসকদলের ভোট ম্যানেজারদের মাথায়। তাছাড়া বহিরাগত তকমা ঘোচাতে পাঠান বহরমপুরেই ঘাঁটি গেঁড়ে বসবেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, বহরমপুরে প্রার্থীর থাকার জন্য আলাদা বাড়ি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আর তাঁর সেনাপতি হিসাবে কাজ করার জন্য দলের তরফে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই ?ডেভিড?কে। এই ডেভিডের সাহায্যে ইউসুফ পাঠান কি বহরমপুরের গোলিয়াথকে হারাতে পারবেন? জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৪ জুন পর্যন্ত।