স্পিরিচুয়াল লিডার বা আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক সদগুরু। বিশ্ব জুড়ে তাঁর কোটি-কোটি ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর কথা-বাচন ভঙ্গি বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি অসুস্থ। বুধবার ব্রেন সার্জারি হয়েছে তাঁর। স্বভাবতই তাঁর স্বাস্থ্য চিন্তি ভক্তকুল। তবে আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বাবা সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেয়ে রাধেও। ভক্তদের চিন্তা দূর করতে স্বমহিমায় একটি ভিডিয়ো বার্তায় সুস্থ রয়েছেন বলে আশ্বস্ত করেছেন সদগুরু। এই প্রতিবেদনে জানুন সদগুরুর সম্বন্ধে কিছু অজানা কথা। কে তিনি?সদগুরু কে?
সদগুরুর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও ব্যক্তিত্ব কোটি কোটি মানুষের বিপথগামী জীবনকে ইতিবাচক দিক নির্দেশনা করেছে। সদগুরু হলেন একজন পবিত্র সত্ত্বা, যোগী, দূরদর্শী, কবি, লেখক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা ও ব্যক্তিত্ব, যিনি জীবন ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বে। বিশ্বের প্রায় ৫০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সদগুরুর নাম। প্রথম জীবনেই তিনি যে সদগুরু হয়েছেন এমনটা নয়। নেপথ্য রয়েছে অজানা কাহিনি। জগ্গি বাসুদেব থেকে গুরু ও তারপর সদগুরু হিসেবে পরিচিত হয়েছেন বিশ্বমঞ্চে।
কোথায় কবে জন্ম সদগুরুর?
১৯৫৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, কর্নাটকের মাইসোরের একটি ধনী তেলেগু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সদগুরু জগ্গি বাসুদেব। তাঁর পুরো নাম জগদীশ 'জগ্গি' বাসুদেব। ছোটবেলায় তার পড়াশোনা ডেমোনস্ট্রেশন স্কুলে। দ্বাদশ ক্লাস পাস করার পর মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে স্নাতক। পড়াশোনা শেষ করে সদগুরু ব্যবসা শুরু করেন। তাতেও একজন সফল ব্যবসায়ীও হয়ে ওঠেন। এছাড়া পোল্ট্রি ফার্ম, ইটভাটা ও নির্মাণ ব্যবসাতেও নিজেকে নিযুক্ত করেন। সদগুরু ভিজ্জি নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন ও বিবাহিত জীবন শুরু করেন। বিয়ের ছয় বছর পর ১৯৯০ সালে তাদের এক কন্যা সন্তান হয়। সদগুরুর কন্য়ার নাম রাধে জাগ্গি।
না জানা কথা
শৈশব থেকেই মননশীল ছিলেন সদগুরু। চেনা না ছকে না ভেবে সবকিছু ভাবতেন একটু অন্য় ভাবে। যে কোনও কিছু দেখলেই তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করতেন। বিভিন্ন প্রকারের জিনিসগুলি দেখে মনের মধ্যে কৌতূহল চেপে ধরত। তারপর থেকেই মনকে শান্ত করার জন্য নিজে থেকেই প্রশ্ন করা শুরু করতেন। একদা বক্তৃতায় সদগুরু জানিয়েছেন, কেউ যদি তাঁকে জল দিতেন তাহলে জল সম্পর্কে তাঁর মনে অনেক প্রশ্ন জাগত। যেমন জল কী, কার জন্য, কীভাবে এবং কেন ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি। এমন বিচিত্র এই অভ্যাস নিয়ে তাঁর বাবাও অত্যন্ত চিন্তিত হতে থাকেন। বয়স যত বাড়তে শুরু করে, তাঁর মনে প্রশ্নের পাহাড় জমতে থাকে। শৈশবে গাছের নীচে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন তিনি। মাত্র ১১ বছর বয়সে অনুশীলন শুরু করেছিলেন যোগ গুরু রাজেন্দ্র ভাবজি মহারাজের কাছ থেকে ।
২৫ বছর বয়সে নিজের ব্যবসা এক বন্ধুকে দেখাশোনা করতে দিয়ে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। পরে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ব্যবসায় তিনি নেমেছিলেন টাকা উপার্জন করে বিশ্বভ্রমণ করবেন বলে। ১৯৭৪ সালে ঋষি প্রভাকরের কাছে তিনি সমাধি যোগ শিখতে যান। কয়েক বছরের চেষ্টায় সেটি রপ্ত করেন বাসুদেব। এই যোগব্যায়ামই তার 'ইশা যোগ' নামে বিখ্যাত। ১৯৮২ সাল থেকে তিনি যোগ শিক্ষার পাঠ দিতে শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে মহীশূরে সাত জন অনুগামীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রথণ যোগ ক্লাস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিসরও বাড়তে থাকে। ওই সময় কর্নাটক এবং হায়দরাবদেও ক্লাস করাতে থাকেন।
সদগুরুর বাণী যা পথ দেখায়
Sadhguru Quotes Teachings:সদগুরুর বাণী যা পথ দেখায় ভক্তদের
ঈশা ফাউন্ডেশন
১৯৯২ সালে কোয়াম্বাটুরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'ঈশা ফাউন্ডেশন'। সেখানে পাঠ দেওয়া হয় যোগ এবং আধ্যাত্মিক জীবনের। প্রতিষ্ঠানের প্রধান এখনও পর্যন্ত জগ্গি বাসুদেবই। বিশ্বের বহু দেশে এই প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সব রকম কাজই সম্পন্ন হয় স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা। সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে 'ইশা ফাউন্ডেশনে'-এর হয়ে পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার স্থায়ী এবং প্রায় নব্বই লাখ অস্থায়ী স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। দেশে-বিদেশের বহু কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আধ্যাত্মিক জীবন নিয়ে বক্তৃতা দেন। রচনা করেছেন বেশ কয়েকটি বইও। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক নেতা-মন্ত্রী থেকে সিনেমাজগতের অনেক তারকাও। সদ্গুরুর সমর্থনও রয়েছে বিপুল। ইউটিউবে তাঁর বক্তৃতারও লাখ লাখ ভিউ হয়।