এই সময়: জন্মের হার কমছে বলে চিন, জাপানের মতো দেশ ইতিমধ্যেই চিন্তিত। সেই সব দেশে কর্মক্ষম, নবীন প্রজন্মের উপস্থিতি কমছে, উল্টে বাড়ছে নির্ভরশীল প্রবীণের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে দু’য়ের বেশি সন্তান হলে সরকারি তরফে নানা সুযোগ-সুবিধা, ফ্রি পরিষেবা ঘোষণা করে মহিলাদের সন্তান উৎপাদনে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে এই সব দেশের সরকার।তবে চিন্তাটা ভারত-সহ অন্য দেশের ক্ষেত্রেও যে বাড়ছে, সেটা বুঝিয়ে দিল ‘দ্য ল্যান্সেট’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্ট। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৫০ সালে ভারতে সন্তান উৎপাদনশীলতার হার ছিল ৬.২, যেটা ২০২১ সালে নেমে গিয়েছে ২-এ! ২০৫০ সালে এই হার ১.২৯ এবং ২১০০-তে ১.০৪-এ নেমে যাওয়ার পূর্বাভাসও রয়েছে রিপোর্টে।
সন্তান উৎপাদনশীলতার হার কমে যাওয়ার এই ট্রেন্ড অবশ্য বিশ্বজুড়ে। ১৯৫০ সালে বিশ্বের ‘টোটাল ফার্টিলিটি রেট’ (টিএফআর) মহিলা পিছু ছিল ৪.৮ সন্তান, সেটা ২০২১ সালে কমে হয়েছে ২.২। ২০৫০ সালে বিশ্বজুড়ে এই হার ১.৮ এবং ২১০০ সালে ১.৬ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে ১২.৯ কোটি নতুন প্রাণ জন্ম নিয়েছে। ১৯৫০ সালে সংখ্যাটা ৯.৩ কোটি ছিল, সেই তুলনায় অনেকটা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু ২০১৬ সালে সংখ্যাটা ১৪.২ কোটিতে পৌঁছেছিল, যা ৫ বছরে অনেকটাই কমেছে। ভারতের ক্ষেত্রে ১৯৫০ সালে ১.৬ কোটি শিশু জন্ম নিয়েছিল, ২০২১ সালে সংখ্যাটা ২.২ কোটি, কিন্তু ২০৫০ সালে সেই সংখ্যা কমে ১.৩ কোটিতে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
বিশ্বজুড়ে সন্তান উৎপাদনশীলতার হারে এমন নিম্নমুখী ট্রেন্ড কেন?
‘গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ ২০২১ ফার্টিলিটি অ্যান্ড ফোরকাস্টিং কোলাবোরেটর্স’-এর রিপোর্ট বলছে, মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার এবং জন্মনিয়ন্ত্রকের ব্যবহার জন্মের হার অনেকটাই কমিয়েছে। তবে, যে সব দেশে মাথাপিছু আয় বেশ কম, সেখানে একবিংশ শতাব্দীতেও সন্তান উৎপাদনশীলতার হার অনেকটাই বেশি।
কারণ, সেই সব দেশে যত বেশি সন্তান, তত বেশি উপার্জনের হাত— এমনটাই মনে করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। রিপোর্ট বলছে, মাথাপিছু স্বল্প আয়ের দেশে হাই-ফার্টিলিটি রেট এবং উন্নত দেশে লো ফার্টিলিটি জনবিন্যাসগত দিক থেকে বিশ্বকে দু’ভাগে ভাগ করে দেবে। শিশুদের সিংহভাগই জন্মাবে গরিব দেশে।
তবে একই সঙ্গে আগামী কয়েক দশকে গরিব দেশগুলিতে বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহের মতো বিপর্যয়ের আশঙ্কা বেশি। ফলে, খাদ্য, জল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্কট বাড়বে। তার জেরে অসুস্থতা এবং মৃত্যুও বাড়বে। ফলে, গরিব এবং উন্নত দেশের মধ্যে অর্থনীতি, খাদ্যের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ নানা বিষয়ে একটা আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
গবেষকদের দাবি, উন্নত দেশেও প্রবীণদের জন্য হেলথ ইনসিওরেন্স, সিকিউরিটি প্রোগ্রাম এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করার মতো অর্থ মজুত রাখতে হবে সরকারকে, না হলে এই প্রবীণ টিমের বেড়ে চলা সংখ্যাকে সামাল দেওয়া যাবে না। একদিকে যেমন জনসংখ্যায় রাশ পড়লে কার্বন নির্গমন, পৃথিবীর সম্পদের ব্যবহার কমবে, পাশাপাশি উন্নত দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হওয়ায় মাথাপিছু ভোগের হার বাড়বে, ফলে লাভের লাভ বিশেষ কিছু হবে না বলেই দাবি রিপোর্টে।
পপুলেশন ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর পুনম মুর্তেজার মতে, ‘এই রিপোর্ট ভারতের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধি, লেবার ফোর্সে টান এবং সামাজিক বৈষম্যের একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি ভারতও হতে চলেছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাই এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। আর্থিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা এবং পেনশন সংস্কারের বিষয়টিকেও সরকারি নীতিতে গুরুত্ব দিতে হবে।’