• Abhishek Banerjee : অভিষেকের বিরূদ্ধে প্রার্থী কে, চূড়ান্ত নয়
    এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৪
  • প্রসেনজিৎ বেরা

    ব্রিগেডে তৃণমূলের জনগর্জন সভায় গত ১০ মার্চ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জোড়াফুল প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারে অন্তত চার লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জোড়াফুলকে জয়ী করার কথা ঘোষণাও করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে অভিষেকের নাম ঘোষিত হওয়ার পর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কে প্রার্থী হবেন, তা প্রতিপক্ষ কোনও দলই চূড়ান্ত করতে পারেনি।আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকি ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন বলে একাধিক বার হুঙ্কার দিলেও শেষ পর্যন্ত আদৌ ময়দানে নামবেন কি না, তার কোনও ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত নেই। নওশাদের দল আইএসএফ প্রথম দফার যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, সেখানে ডায়মন্ড হারবার আসনে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

    রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-র পরিচিত দাপুটে নেতারা কেউই ডায়মন্ড হারবারে লড়াই করতে খুব একটা আগ্রহী নন বলে দলের একাংশের বক্তব্য। শুভেন্দু অধিকারী সাম্প্রতিক অতীতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, বিজেপি ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলকে এ বার পরাজিত করবে। যদিও অভিষেকের বিরুদ্ধে দাপুটে হেভিওয়েট কোনও নেতাকে গেরুয়া ব্রিগেড ময়দানে নামাতে পারবে, এমন সম্ভাবনা এখনও কম।

    গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতার বক্তব্য, ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হিসেবে অভিজ্ঞ নেত্রী সোনালি গুহর নাম নিয়ে বিজেপির অন্দরে আলোচনা হলেও সাতগাছিয়ার ওই প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ককে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সোনালি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিলেও গত তিন বছরে তাঁকে বিজেপির ব্যানারে মিটিং-মিছিলে খুব বেশি দেখা যায়নি। সোনালিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই সে ভাবে দেখা যায়নি বলে একাধিক বিজেপি নেতার পর্যবেক্ষণ।

    তবু বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছেন। অসুস্থ থাকার কারণে এই নিয়ে সোনালির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সোনালির পরিবারের তরফে বলা হয়েছে, ‘গলায় ইনফেকশন থাকায় তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই।’ বিজেপির একাংশ সোনালির নাম ডায়মন্ড হারবারের জন্য প্রস্তাব করলেও অসুস্থতার কারণে পোড়খাওয়া এই নেত্রী নিজে ভোট দাঁড়াতে কতটা আগ্রহী, সেটা স্পষ্ট নয়।

    ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে এ বারের প্রার্থী হিসেবে সোনালি গুহ ছাড়াও বিজেপির যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা এবং অভিজিৎ দাসের (ববি) নাম বঙ্গ বিজেপির তরফে প্রস্তাব করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন বিজেপির সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিটি এই তিন জনের মধ্যে থেকে কাউকে টিকিট দেবে, নাকি একেবারেই অন্য কোনও নামে সিলমোহর দেবে, সেটা স্পষ্ট নয়।

    প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের জন্য হাইকম্যান্ডের কাছে যুব কংগ্রেস সভাপতি আজহার মল্লিক এবং সৌম্য আইচ রায়ের নাম প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছে। যদিও প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘আজাহার বর্ধমান জেলার কংগ্রেস কর্মী। তাই, ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হতে আজহার মোটেই আগ্রহী নন। আজাহার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে লড়াই করতে চান। কিন্তু বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে সিপিএম প্রার্থী দিতে চায়।’

    বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতায় যদি ডায়মন্ড হারবারে সিপিএমের প্রার্থী থাকে, তা হলে এই আসনে ছাত্রনেতা প্রতিকউর রহমানকে প্রার্থী করার কথা ভেবে রেখেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সিপিএম এবং আইএসফের মধ্যে কোনও সমঝোতা এখনও হয়নি এবং এই পরিস্থিতিতে আইএসএফ ছ’টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে সমঝোতা যাতে হয়, তার চেষ্টাও চলছে। সমঝোতা হলে আইএসএফকে ডায়মন্ড হারবার আসন সিপিএম ছাড়তে পারে, এমন সম্ভাবনা রয়েছে।

    বিপক্ষ শিবিরের এই চিত্রের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার চার লক্ষ ভোটের বেশি ব্যবধানে জয়ী হবেন। ডায়মন্ড হারবারের মানুষ এটা জানেন। বিরোধীরা অভিষেক-ফোবিয়ায় ভুগছে, তাই প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না।’ প্রতিপক্ষ ঘর গোছাতে না-পারলেও তৃণমূলের দুর্গ অটুট রাখতে আগামী ২৭-২৯ মার্চ অভিষেক ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনের অন্তর্গত বিধানসভাগুলোয় পর পর কর্মিসভা করতে পারেন। ওই কর্মিসভার পরেই তিনি শুরু করবেন নির্বাচনী জনসভা।
  • Link to this news (এই সময়)