এই সময়: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে অনেকদিন আগে থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল। এবার দেবাশিস সেনগুপ্ত (৩৭) নামে দক্ষিণ কলকাতার নেতাজি নগরের এক বাসিন্দার আত্মহত্যার ঘটনার পিছনে সিএএ নিয়ে আতঙ্কই মূল কারণ বলে অভিযোগ দায়ের হলো। দেবাশিসের বাবা তপন সেনগুপ্ত বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পুলিশের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মৃতের বাবা।সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে আতঙ্কেই দেবাশিস আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ তুলে এদিনই সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের পাঁচ নেতার একটি প্রতিনিধি দল নেতাজি নগরে দেবাশিসের বাড়িতে যান। মৃতের পরিজনদের সঙ্গে বিশদে কথা বলেন তাঁরা। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন। এই প্রতিনিধি দলে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ ছিলেন। যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য-সহ বামেরাও দেবাশিসের বাড়িতে যান।
নেতাজি নগরে মৃতের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘সিএএ-র ভয়ে দেবাশিস আত্মহত্যা করেছেন। এই মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিই দায়ী। কারণ, এরাই মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করছে। কত মানুষের মৃত্যু হলে বিজেপি এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারবে?’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বাড়ির লোকের কাছ থেকে শুনলাম, দেবাশিস ভয়ঙ্কর ট্রমার মধ্যে ছিলেন। যারা আধার কার্ড ডি-অ্যাকটিভেট করে আতঙ্ক তৈরি করেছে, এই ঘটনার জন্য তারাই দায়ী।’
মৃতের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, গত ১৯ মার্চ মঙ্গলবার দেবাশিস সুভাষগ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে বুধবার সন্ধ্যায় আত্মহত্যা করেন তিনি। দেবাশিসের মাসি শোভা রায় বলেন, ‘সব সময়ে ও আমাদের বলত, যদি বাংলাদেশ তাড়িয়ে দেয়, তাহলে কী হবে? আমি বলতাম, তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? তোর তো বাংলাদেশে জন্ম হয়নি? তোর দাদু এসেছিল। তোর সব নথি রয়ছে, তা-ও কেন ভয় পাচ্ছিস? তখন ও বলত, আমার ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ডে বয়স ঠিক নেই। তখনও বলেছি, তুই এই নিয়ে ভয় পাস না।’
দেবাশিস যে সিএএ নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন, তা তাঁর মামাও বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘সিএএ নিয়ে ওর মানসিক সমস্যা হচ্ছিল। তাই সুইসাইড করল। ওর বাবার বয়স ৮০ বছর, তাই তিনি সব কাগজ গুছিয়ে রাখতে পারেন না।’ দেবাশিসের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে সোনারপুর থানার পুলিশ। তপন সেনগুপ্তর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে।
লালবাজারের তরফে এ দিন বলা হয়, ‘নেতাজি নগর থানায় যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেই অভিযোগের সত্যতা আমরা খতিয়ে দেখছি।’ এই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন দেবাশিস। তাঁর মৃত্যুর ফলে এই পরিবারের কী ভাবে দিন চলবে, তা নিয়ে পরিজনদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব মৃতের পরিবারের বক্তব্যের সূত্র ধরে এই ঘটনার জন্য সিএএ-কে দায়ী করলেও তা মানতে নারাজ বিজেপি।
দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আত্মহত্যা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। প্রকৃত সত্য সামনে আসা প্রয়োজন। কোনও চাপের মুখে পরিবারের তরফে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে কি না—তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’ যদিও বামেরাও মনে করছে, গেরুয়া শিবির থেকেই আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজ্য পুলিশের উচিত শান্তনু ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা। নিজের ভোটের স্বার্থে বিজেপির এই নেতারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছেন।’