'নিজ ভূমে পরবসী'! সীমান্তে প্রথম কোনও প্রার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ওঁদের
এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৪
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে থাকেন। ভোট, চিকিৎসা, এমনকী রুজি রোজগার থেকে পানীয় জল, বিভিন্ন প্রয়োজনে আসতে হয় কাঁটাতারের এপারে। ভোট আসে ভোট যায় অথচ প্রচার তো দুরস্ত একবারের জন্যও তাঁদের কাছে আসেন না নেতা নেত্রী বা প্রার্থীরা। ফলে সীমান্তের ওপারে তাঁদের অবস্থার কোন উন্নতি নেই। এমনই চিত্র দেখা গেল মালদীর কালিয়াচক থানার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের মহব্বতপুর, হাদিনগর গ্রামে। এই প্রথম দক্ষিণ মালদহের বিজেপ প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী প্রচারে গেলেন সেখানে। তাঁকে কাছে পেয়ে নিজেদের সুবিধা অসুবিধার কথা তুলে ধরল মানুষ।কালিয়াচক থানার অন্তর্গত ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের বিস্তৃর্ণ এলাকা কাঁটাতারে ঘেরা। কাঁটাতারের ওপারে রয়েছে কয়েকশো ভোটার। তারা প্রতিটি ভোটে অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু কখনও তাঁরা প্রার্থীদের দেখেননি। তাঁরা কখনও তাঁদের সুবিধা অসুবিধার কথা বলতে পারেনি। প্রতিদিন বিএসএফ গেট খুললে এপারে এসে তাঁরা পানীয় জল সংগ্রহ থেকে শুরু করে রুজি রোজগার, সবকিছু করেন। এদিন সীমান্ত কাঁটাতারের ওপারে ভোট প্রচার করলেন মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। এই কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার। আর কাঁটাতারে ওপারে বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আজও নিজ ভুমিতে কার্যত পরবাসী হয়েই রয়ে গিয়েছেন।
ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বিজেপি প্রার্থীর
এই গ্রামে একসময় বসবাস করত প্রায় এক হাজারের বেশী পরিবার। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার পর আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবারগুলি চলে এসেছে এপারে। কিন্তু আজও আর্থিক ভাবে দুর্বল প্রায় ৩০০টি পরিবার রয়ে গেছে কাঁটাতারের ওপারেই। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়ম মত খোলা হয় সীমান্তের দরজা। আর বন্ধও হয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়মে। দিনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই এলাকার বসবাসকারীদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহ রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করতে হয়। এমনকী বাড়িতে খাওয়ার জলটুকুও সংগ্রহ করে নিতে হয় ওই সময়েই।
এবার সেই এলাকায় প্রচারে গেলেন বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাসিন্দাদের এমন জীবনের জন্য দায়ী এলাকার সাংসদ তথা কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই এলাকার সাংসদ একই পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা ভোটে জিতে এলাকার খবর রাখেন না। তাই আজকের দিনে এমন করুণ পরিস্থিতে বাসিন্দারা রয়েছেন।' শুধু তাই নয় তৃণমূল কংগ্রেসকেও একইভাবে কাঠগড়ায় তুলেছেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, এলাকার সাংসদ ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে সমস্যা সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা নীরবই থেকেছেন। এলাকায় একটি আইসিডিএস সেন্টার নেই। নূন্যতম পরিষেবা নেই এলাকায়। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে মাথার ছাদ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জল জীবন মিশনের মাধ্যমে পানীয় জলের সুব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু তা করা হয় নি। ফলে স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়েও রয়েছে পরাধীন ভাবে। এর দায় কেবল এলাকা শাসকদলের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও কংগ্রেস সাংসদের।
ভোটারদের সঙ্গে কথা প্রার্থীর
এদিকে জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি অর্জুন হালদার বলেন, 'যে অভিযোগ করছেন, তাঁর আগে আইনায় নিজের মুখ দেখা উচিত। তিনি তো ইংরেবাজারের বিধায়ক। তিন বছর পার হয়ে গিয়েছে। তিনি তিন বছরে কী কাজ করেছেন, সেই প্রশ্ন তোলা উচিত আগে। তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগটুকু রাখেননি, কাজ তো দুরের কথা।' রাজ্য তৃণমুল কংগ্রেসের সহ সভাপতি কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, 'তিনি (শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী) তো বড় বড় কথা বলেন। তিনি কী করেছেন? তিনি তো বিধায়ক হয়েছেন। শহরটাও তো তাঁর আওতায়। কী করেছেন শহরে? গ্রামে কী করেছেন? মানুষকে বোকা বানিয়ে কিছু হবে না।'