Trinamool Congress : ৪ জেলাশাসক বদলিতে 'বিজেপির হাত', তোপ তৃণমূলের
এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৪
এই সময়: রাজ্য পুলিশের ডিজিপি-কে বদল করার পর এ বার চার জন জেলাশাসককে অপসারণ করল নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূমের জেলাশাসককে একসঙ্গে বদলি করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটা বাড়তে পারে বলে কমিশন সূত্রের খবর। গত শনিবার, ১৬ মার্চ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষিত হওয়ার পর পরই নির্বাচন কমিশন একের পর শীর্ষস্থানীয় আমলা, পুলিশকর্তাকে বদলির নির্দেশ জারি করছে। এই নিয়ে একদিকে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন মহলে যেমন চাঞ্চল্য, অন্য দিকে তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেনের অভিযোগ, 'কেন্দ্রের শাসক দল নির্বাচন কমিশনকে করায়ত্ত করে ফেলেছে। স্বাধীন ভারতে এই ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। বিজেপির সদর দপ্তরে পরিণত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিজেপি যা চাইছে, কমিশনের সিদ্ধান্তে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। সেই কারণেই আমরা সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে লোকসভা ভোট চাইছি।' উল্টো দিকে, বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার বক্তব্য, 'নির্বাচন কমিশন শুধু পশ্চিমবঙ্গের অফিসারদের সরায়নি। বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের অফিসারদের সরানো হয়েছে। আসলে মানুষের উপর তৃণমূলের ভরসা নেই। ভোটে জেতার জন্য অফিসাররাই ওদের ভরসা। সেই জন্যই কোনও অফিসার বদলি হলে ওরা চিন্তিত হয়ে পড়ে।'
এই ব্যাপারে কমিশনের কর্তাদের ব্যাখ্যা— ভোটের সময়ে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেই দেশ জুড়েই এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে এবং এমনটা প্রতিটি ভোটেই হয়। এ দিন যাঁদের বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অন্যতম পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তনভির আফজল। ২০২৩-এর সেপ্টেম্বরে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক হন। তার আগে তিনি ছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিশেষ সচিব। গোড়া থেকেই বিজেপির অভিযোগ, তনভির শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন। বীরভূমের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ উঠেছে। এর আগে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ছিলেন।
সেই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক বার সরব হয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিধান রায় এবং ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়ালের কাজকর্ম নিয়েও অভিযোগ ছিল বিজেপির। এই পটভূমিকাতেই চার জেলাশাসকের বদলির নির্দেশ ঘিরে রাজনীতির ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে ওই আইএএস অফিসারদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগ ওঠায় লোকসভা ভোটের দায়িত্ব থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ১৮ মার্চ রাজীব কুমারকে সরিয়ে রাজ্যের ডিজিপি করা হয়েছিল বিবেক সহায়কে। তার পর দিন অবশ্য তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই জায়গায় আইপিএস অফিসার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে রাজ্য পুলিশের নতুন ডিজিপি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও একাধিক রাজ্যের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বদলির নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গুজরাটের ছোট উদয়পুর এবং আমেদাবাদ গ্রামাণ জেলার এসপি, পাঞ্জাবের পাঠানকোট, ফাজিলকা, জলন্ধর গ্রামীণ ও মালেরকোটলা জেলার এসএসপি, ওড়িশার ঢেঙ্কানল জেলার ডিএম এবং দেওগড় ও কটক গ্রামীণ জেলার এসপি।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পাঞ্জাবের ভাটিন্ডার এবং অসমের শনিতপুরের এসএসপি-কে দ্রুত বদলি করার নির্দেশ কার্যকর করতে বলেছে কমিশন। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর ক্যাফে বিস্ফোরণ নিয়ে তামিলনাড়ুকে জড়িয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শোভা করন্দলাজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য কর্নাটকের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে নির্দেশ দেয় জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুতে চারটি এফআইআর হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁর বেঁফাস মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।