Calcutta High Court : এমবিবিএসদের সমান বেতন পাবেন আয়ুশ চিকিৎসকরাও, রায় কোর্টের
এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৪
এই সময়: একযাত্রায় পৃথক ফল আর নয়। ডাক্তারিতে যে কোনও শাখার স্নাতককেই এক ব্র্যাকেটে দেখার নির্দেশ দিলো আদালত। বলা হয়েছে, এমবিবিএস চিকিৎসকদের সমান বেতন ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে আয়ুশ ডাক্তারদেরও। মোটের উপর অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদের চেয়ে আলাদা নজরে দেখা যাবে না আয়ুর্বেদ, হোমিয়োপ্যাথি, ইউনানির চিকিৎসকদের। রাষ্ট্রীয় বালস্বাস্থ্য কার্যক্রমে (আরবিএসকে) কর্মরত আয়ুশ চিকিৎসকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে এই মর্মেই রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। নির্দেশ পালনের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে চার মাস সময় দিয়েছে আদালত।ন্যাশনাল হেলথ মিশনের অধীনে ন-তে আরবিএসকে কর্মসূচি চালু হয় দেশে। তখন এই কর্মসূচির মেডিক্যাল অফিসার (এমও) পদে এমবিবিএস পাশ (অ্যালোপ্যাথি) এমও-দের পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে নেওয়া হয় আয়ুশের অধীন বিএএমএস (আয়ুর্বেদ), বিএইচএমএস (হোমিয়োপ্যাথি), বিইউএমএস (ইউনানি) চিকিৎসকদের। সংখ্যায় বেশি যোগ দেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরাই। কিন্তু দেখা যায়, অ্যালোপ্যাথি এমও-দের বেতন মাসিক ৪০ হাজার হলেও আয়ুশ এমও-দের বেতন দাঁড়ায় মাত্র ২৫ হাজার টাকায়। আয়ুশ এমও-দের লাগাতার প্রতিবাদের পরেও বদলায়নি ছবিটা।
২০২০ সাল নাগাদ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর আরবিএসকে-র অধীন অ্যালোপ্যাথি এমও-দের কাজে যোগ দেওয়ার সময়কার মাসিক বেতন বাড়িয়ে ৬০ হাজার করা হলেও আয়ুশ চিকিৎসকদের মাসিক ৩২ হাজার টাকা দেওয়া শুরু হয়। সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ছ’ জন আয়ুশ এমও। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভা, জয়নগর-মাজিলপুর পুরসভা, দক্ষিণ নারায়ণপুর ব্লক হাসপাতাল, নোয়াপাড়া ব্লক হাসপাতাল, রাধানগর গ্রামীণ হাসপাতল ও খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে কর্মরত আয়ুশ এমও-রা। আবেদনকারীদের পক্ষে সেই মামলারই সম্প্রতি রায় দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।'
অ্যালোপ্যাথি-আয়ুশ বৈষম্য নিয়ে ২০২২-এই অবশ্য নৈনিতাল হাইকোর্টে একই ধরনের মামলা করেছিলেন উত্তরাখণ্ডের আয়ুশ এমও-রা। সেখানেও রায় গিয়েছিল আয়ুশ চিকিৎসকদেরই পক্ষে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে উত্তরাখণ্ড সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলেও হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে দেশের শীর্ষ আদালত। ফলে কলকাতা হাইকোর্টও সেই রায়কেই উদ্ধৃত করে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন, চার মাসের মধ্যে চুক্তিভিত্তিক অ্যালোপ্যাথি এমও-দের সমমর্যাদা দিতে হবে চুক্তভিত্তিক আয়ুশ এমও-দেরও।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এই রায়ে উপকৃত হবেন আরবিএসকে কর্মসূচিতে কর্মরত ১২১৯ জন আয়ুশ এমও। স্বাস্থ্যভবনের একাংশ মনে করছে, যেহেতু শীর্ষ আদালতের রায়েরই প্রতিফলন রয়েছে হাইকোর্টের এই রায়ে, তাই সুপ্রিম কোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করার কথা সে ভাবে ভাবা হচ্ছে না। তবে এ নিয়ে আইনি পরামর্শ চলছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম অবশ্য বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’
স্বাভাবিক ভাবেই আদালতের নির্দেশে খুশি আয়ুশ ডাক্তাররা। ন্যাশনাল আয়ুর্বেদা স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য আহ্বায়ক কেশবলাল প্রধান বলেন, ‘অবশ্যই এটা যুগান্তকারী রায়। এই রাজ্যে কর্মরত কন্ট্রাকচুয়াল সব প্রকারের আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের সমবেতনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হোক। কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে এই বেতনের ৬০% দিতে রাজি, সেখানে রাজ্য সরকারের এত সমস্যা কেন?’ রাজ্য স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার ইন-চার্জ (আয়ুর্বেদ) প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র বলেন, ‘খুবই আনন্দের খবর। এই দাবি আয়ুশের সব শাখারই বহু দিনের। এতে পরিষেবারও উন্নতি ঘটবে।’