Salman Rushdie : মৌলিক সৃষ্টি পারবে না এআই, ভরসা রুশদির
এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৪
প্যারিস: ...On the stroke of midnight, as a matter of fact. Clock-hands joined palms in respectful greeting as I came. Oh, spell it out, spell it out: at the precise instant of India’s arrival at independence, I tumbled forth into the world. There were gasps. And, outside the window, fireworks and crowds.১৯৮১ সালে লেখা মিডনাইটস চিলড্রেনের প্রথম প্যারাগ্রাফ। সলমন রুশদির এই মাস্টারপিস ১৯৮১ সালে তাঁকে বুকার প্রাইজ এনে দিয়েছিল। ১৯৯৪ সালে সারা বিশ্বের বিশিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে বুকার অফ দ্য বুকার্স পুরস্কারও জিতে নিয়েছিল সেই একই বই। সাহিত্য জীবনের অসংখ্য সম্মানের মধ্যে এই দ্বিতীয় পুরস্কারটিকেই নিজের ট্রফি ক্যাবিনেটের সেরা বলে মনে করেন রুশদি। এমন গদ্য কি লিখতে পারবে এআই?
কিছুটা কৌতূহলের বশেই আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স-এর কাছে নিজের স্টাইলে গদ্য লেখার অনুরোধ করেছিলেন রুশদি। চ্যাটজিপিটি মিনিট কয়েকের মধ্যে ২০০ শব্দে রুশদির ‘স্টাইলে’ সেই গদ্য লিখেও দেয়। কিন্তু তা দেখে আপাতত নিশ্চিন্ত কালজয়ী লেখক। থ্রিলার বা সায়েন্স ফিকশন লেখকদের ক্ষেত্রে এআই বিপদের কারণ হলেও, সিরিয়াস সাহিত্য লেখার ক্ষমতা যে এআই-এর নেই, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে চ্যাটজিপিটি-র ওই গদ্যের নমুনা দেখেই।
ফরাসি সাহিত্য পত্রিকা ল্য ন্যুভেল রেভু ফ্রাঁসেজ-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন রুশদি নিজেই। তাঁর কথায়, ‘এআই-এর সেন্স অফ হিউমার বা স্বকীয়তা (অরিজিনালিটি) কোনওটাই নেই।’ তার ফলে তাঁর লেখাকে নকল করে এআই যে বস্তুটি তৈরি করেছে, সেটি রুশদির ভাষায় ‘আ বাঞ্চ অফ ননসেন্স’।
বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স। রোবটের কৃত্রিম মেধা কি কোনওদিন প্রকৃত মানবিক মেধাকে সরিয়ে দিতে পারবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানী থেকে শিল্পী সাহিত্যিকরা। এআই-এর দাপটে ইতিমধ্যেই বিপন্ন হয়ে পড়েছে ফোটোগ্রাফি, স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ের মতো অনেক সৃজনশীল পেশা। নতুন প্রজন্মের কাছে সময়ের অভাব।
তাই দীর্ঘ উপন্যাস, ফুরফুরে ছোটগল্প বা অলস কবিতার জন্য কি আদৌ কোনও অপেক্ষা থাকবে আগামী দিনে? এই প্রশ্ন তাড়া করে বেড়াচ্ছে সৃষ্টিশীল মানুষদের। সম্ভবত নেই তাড়না থেকেই এআই-এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন রুশদি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমার লেখার একটি পাতাও যে পাঠক পড়েছেন, তিনি বুঝবেন ওই লেখা আমার হতে পারে না। এটা ভরসা দিয়েছে আমাকে।’
তবে এআই নিয়ে অন্য বিপদের কথা জানিয়েছেন রুশদি। তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো এই যন্ত্রগুলো খুব দ্রুত শিখে ফেলে। ফলে সায়েন্স ফিকশন বা থ্রিলারের মতো জঁনরের লেখকদের সমস্যা হতে পারে আগামী দিনে। কারণ তাতে তথ্যের প্রয়োজন বেশি হয় মৌলিক ভাবনার থেকে।’ এই প্রসঙ্গে হলিউডের কথাও টেনে এনেছেন স্যাটানিক ভার্সেসের লেখক। গত বছর টানা কয়েক মাস হলিউডে ধর্মঘট ডেকেছিলেন বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলী, চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতারা। অভিযোগ ছিল, তাঁদের কাজ কেড়ে তা এআই দিয়ে সারছে বড় বড় স্টুডিয়োগুলি। এই প্রসঙ্গেই রুশদি বলেছেন, ‘যে ভাবে হলিউড একই ধরনের ছবি তৈরি করে চলেছে তাতে চিত্রনাট্য তৈরি করতে আর মানুষের দরকার হবে না। এআই তা করে দেবে।’
১৯৮৯ সালে স্যাটানিক ভার্সেস লেখার পর থেকে ইসলামি দুনিয়ার বিষ নজরে পড়েন রুশদি। ইরানের প্রয়াত আয়াতোল্লা খোমেইনির জারি করা ফতোয়ার খাঁড়া আজও ঝুলছে তাঁর মাথার উপর। ২০২২ সালের নভেম্বরে নিউ ইয়র্কের এক সাহিত্য সভায় এক লেবানিজ তরুণের ছুরির আঘাতে মারাত্মক জখম হন প্রবীণ লেখক। নষ্ট হয়ে যায় একটি চোখ। কিন্তু শিল্পীর ভবিষ্যৎ দর্শনের ক্ষমতা যে নষ্ট হয় না, তার প্রমাণ মিলল রুশদির কথায়। এআই নিয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকা সৃজনশীল মানুষকে আপাতত ভরসা জোগাবে তাঁর এই সাক্ষাৎকার।