নয়াদিল্লি: যেদিন থেকে সুপ্রিম কোর্ট এসবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছিল যে নির্বাচনী বন্ডের ইউনিক কোড-সহ সব তথ্য ইলেকশন কমিশনকে দিতে হবে ও ইসি তা তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করবে, তখন থেকেই তুমুল জল্পনা ছিল সর্বত্র — ‘মোদী ঘনিষ্ঠ’ মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানির সংস্থা কত কোটি টাকার বন্ড দিয়েছে বিজেপিকে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাড়ার চায়ের দোকান — সর্বত্রই চলেছে এই আলোচনা। ‘রিলায়েন্স’-এর সঙ্গে ‘যুক্ত’ যাও বা কিছু সংস্থার নাম পাওয়া গেছে, তার মধ্যে একটি ‘কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড’ যা তৃতীয় সর্বোচ্চ মূল্যের বন্ড কিনেছে। তাদের বন্ডের মাধ্যমে মোট অনুদান ৪১০ কোটি টাকা! যদিও রিলায়েন্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটা তাদের সাবসিডিয়ারি সংস্থা। কিন্তু রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানির নথি অন্য কথাই বলছে। সূত্রের খবর, এ ছাড়াও এমন ৩৮৩০টি সংস্থা আছে যাদের রেজিস্টার্ড অ্যাড্রেস এক এবং সবগুলিই নাকি রিলায়েন্সের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই ‘লেসার নোন’ সংস্থাগুলি নাকি বন্ড কিনে বিজেপিকে অনুদানও দিয়েছে। তবে ‘এই সময়’ স্বতন্ত্র ভাবে এই তথ্য যাচাই করেনি।তবে শোরগোল পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর নামে বন্ড-ক্রেতাদের মধ্যে দেখা না যাওয়ায়। আর তা নিয়েই চলছে মুখোরোচক আলোচনা। কেউ বলছেন, আছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে না! আবার কারও কারও মতে, শেল কোম্পানির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে ফলে নাকি এত দ্রুত কিছু বোঝা যাচ্ছে না। একদল মনে করছেন, আদানিরা বন্ডের মাধ্যমে নয়, ট্রাস্টের মাধ্যমে অনুদান দিয়েছে। কোনও কোনও সমালোচক আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘পুরোটাই তো কালো টাকা। ফলে সবই ক্যাশে হয়েছে!’ ঘটনা যাই হোক না কেন, এসবিআই-এর দেওয়া প্রকাশিত তালিকায় আদানি সংস্থার অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে বিরোধীরা যেখানে কথায় কথায় মোদীকে বিঁধতে আদানি-আম্বানিদেরই টার্গেট করেন, সেখানে প্রথম সংস্থার অনুপস্থিতি আরও বেশি জল্পনার ফানুস তুলেছে।
এরই মধ্য প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষ গর্গের বক্তব্য, প্রথম দিন সুপ্রিম কোর্টকে মিথ্যে হলফনামা জমা দিয়েছিল এসবিআই! কেন না সেদিন ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক হলফনামায় জানয়, তাদের কাছে দু’টো সিলোতে ফিজ়িক্যালি (হার্ড কপি) রাখা রয়েছে, তা ম্যাচ করাতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। তাই ৩০ জুন অবধি সময় বাড়ানো হোক। সুপ্রিম কোর্ট তা পত্রপাঠ খারিজ করে বলে দেয় যে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যেই তা এসবিআই-কে কমিশনকে জমা দেবে। তাতেই গর্গের বক্তব্য, যেটা দু’দিন আগে ৩ মাস লাগছিল, সেটা কী করে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা শুনে ৪৮ ঘণ্টায় প্রকাশ করল তারা? তার মানেই তো তারা ডিজিটাইজ়ড ফর্মে ছিল। ব্যাঙ্কটি মিথ্যে বলেছে শীর্ষ। পাশাপাশি, এসবিআই যে ইউনিক কোড রেখে দিয়েছে, সেটাও অনৈতিক। তা বন্ডের আইন অনুযায়ী করা ঠিক হয়নি।