Population Growth: জনসংখ্য়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বড় সাফল্য ভারতীয়দের! জন্মহার হ্রাসের সুবিধা-অসুবিধা কী কী?
এই সময় | ২৩ মার্চ ২০২৪
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। তবে সম্প্রতি মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমাগত কমছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ১৯৫০ সালে প্রজনন হার (মহিলা প্রতি জন্মের হার) ছিল ৬.২, যা ২০২১ সালে নেমে গিয়েছে ২-এরও নীচে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতে প্রজনন হার হ্রাসের এই সময়কাল অব্যাহত থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ভারতে প্রজনন হার দাঁড়াবে ১.৩। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে ভারতের প্রজনন হারের এই পতন দেশের জন্য কল্যাণকর, এতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হবে, জন বিস্ফোরণ হবে না। তা যেমন একদিকে ঠিক তেমনই প্রজনন হারের হ্রাসএকাধিক অসুবিধাও রয়েছে।প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে ১৯৫০ সালে গড়ে মহিলা প্রতি গর্ভধারণ ক্ষমতার হার ছিল ৪.৮, ২০২১ সালে যা নেমে এসেছে ২.২-এ। ল্যানসেট রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গর্ভধারণ ক্ষমতার হার ২০৫০ সালের মধ্যে ১.৮-এ নেমে আসবে। ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী গর্ভধারণের ক্ষমতা হবে ১.৬। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৫০ সালে ভারতে ১.৬ কোটি শিশুর জন্ম হয়। ২০২১ সালে ভারতে ২.২ কোটি শিশুর জন্ম হয়েছিল। প্রতিবেদনে পূর্বাভাস ২০৫০ সালে ভারতে মাত্র ১.৩ কোটি শিশু জন্মগ্রহণ করবে। সমীক্ষা অনুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ১২.৯ কোটি শিশুর জন্ম হয়েছে। এই সংখ্যা ১৯৫০ সালে বিশ্বব্যাপী জন্মগ্রহণকারী ৯৩ মিলিয়ন শিশুর চেয়েও বেশি। অন্যদিকে ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৪.২ কোটি শিশুর কম।
কেন ভারতে প্রজনন হার কমছে?
পপুলেশন ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পুনম মুত্রেজার মতে, প্রজননের হ্রাস ভারতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামগ্রিক পরিকাঠামোর একাধিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। লিঙ্গ পছন্দের কারণেও সামাজিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হতে এখনও কয়েক দশক দেরি। চিকিৎসকদের মতে, প্রজনন হার কমে যাওয়ার বড় কারণ হল আগের চেয়ে দেরিতে বিয়ে হওয়া। বেশি বয়সে বিয়ের কারণে সন্তান পরিকল্পনাতেও দেরি হচ্ছে। সেই কারণে কমে যাচ্ছে প্রজনন হার। বর্তমান সময়ে দম্পতিরা আগের তুলনায় কম সংখ্য়ক সন্তান নিতেই উৎসাহী।
নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে উচ্চ প্রজনন হার বজায় থাকবে
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ (GBD) ২০২১ ফার্টিলিটি অ্যান্ড ফোরকাস্টিং কোলাবোরেটরদের মতে, একাধিক নিম্ন আয়ের দেশগুলিকে ২১ শতকে উচ্চ প্রজনন হারের মুখোমুখি হতে হবে। বেশিরভাগ শিশু বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করবে। অনুমান করা হচ্ছে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জীবিত শিশু জন্মের ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলির অংশ ১৮ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ হয়ে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হবে। এই কারণে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারগুলি কাজ না করলে অবকাঠামোর উপর চাপ বাড়তে থাকবে।
বিশ্ব এখন প্রজনন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বলে মত চিকিৎসকদের
চিকিৎসকদের মতে, সারা বিশ্বে প্রজনন সংক্রান্ত একাধিক চ্যালেঞ্জ উঠে আসছে সাম্প্রতিক সময়ে। চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা না করা হয়ে পরবর্তীকালে ঝুঁকি বাড়তে পারে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণ অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন এবং ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে মহিলাদের প্রজননের বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। এছাড়া নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, কম শিশু জন্মালে দেশের জনসংখ্যা কমবে এবং সুফল পাওয়া যাবে। তাঁদের অবশ্যই জানা উচিত যে প্রজনন হার হ্রাসের একাধিক অসুবিধাও রয়েছে।
প্রজনন হার হ্রাসের অসুবিধাগুলি কী কী?
গবেষকদের মতে, শিশু না থাকলে যে কোনও দেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে। এক গবেষণায় নারীর প্রজনন হার কমে যাওয়ায় দেশ ও সমাজের ওপর কী ধরনের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে তা মূল্যায়ন করা হয়েছে। সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রজনন হার কমে গেলে, শিশুদের থেকে বয়স্কদের আধিক্য় চোখে পড়বে। প্রজননের হার কমে গিয়ে দেশে বয়স্কর হার বেড়ে গেল শ্রমশক্তির ঘাটতি হবে। বিশ্বব্যাপী প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের অর্থ হল অর্ধেকেরও বেশি দেশে জন্মহার কমে যাওয়া। যখনই কোনও দেশে প্রজনন হার ২.১-এর নীচে নেমে আসে, তখনই কমতে থাকে জনসংখ্যা।
প্রজনন হার কমার সুবিধা কী?
সায়েন্টিফিক রিপোর্টে প্রকাশিত একটি সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, প্রজনন হার কমলে মহিলাদের গড় বয়স বাড়বে। গবেষণা অনুসারে, মহিলারা কম প্রজনন হার থেকে সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন। এ কারণে তাঁদের গড় বয়স বাড়ছে। গবেষণা অনুসারে, যে মহিলারা একটি সন্তানের জন্ম দেন তাঁরা ১৫ বা তার বেশি সন্তানের জন্ম দেওয়া মহিলাদের তুলনায় গড়ে ছয় বছর বেশি বাঁচেন। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এলিজাবেথ বোল্যান্ডের মতে, এই ফলাফলগুলি জনসংখ্যার পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া প্রজনন হার কমে গেলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কর্মক্ষেত্রে কমবে কম্পিটিশন। দেশের সম্পদও বাড়তে পারে।