এই সময়, কলকাতা ও মেদিনীপুর: দল চাইলে মেদিনীপুর ছাড়বেন দিলীপ ঘোষ। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে ছুটতেও তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু দিলীপের সেই যাত্রা-পথে যে একরাশ মন খারাপ মিশে থাকবে তা চেপে রাখেননি মেদিনীপুরের বর্তমান সাংসদ। দিল্লিতে বিজেপির প্রার্থী তালিকা চূ়ডান্ত হওয়ার দিন দিলীপের আক্ষেপ, 'দল যা বলবে, সেটা তো মানতেই হবে। তবে মেদিনীপুরের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক।'তাঁর অনুপস্থিতিতে মেদিনীপুরে অসামাজিক কার্যকলাপ বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির। দিলীপের কথায়, 'আমার আসন পরিবর্তন হতে পারে, এই জল্পনায় উদ্বিগ্ন মেদিনীপুরের ব্যবসায়ী মহল। খড়্গপুরের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী আমাকে ফোন করে বলেছেন যে, আপনি না থাকলে মেদিনীপুরে আবার অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু হয়ে যাবে। আপনার আমলে আমরা অনেক নিশ্চিন্তে ছিলাম।' শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে আস্থা রাখার বার্তা দিয়েও দিলীপ নানাভাবে দিল্লিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, মেদিনীপুর থেকে ভোটে লড়লে তাঁর জয় নিশ্চিত।
লোকসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে শনিবার রাতে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। গেরুয়া শিবিরের একাংশের দাবি, সেখানেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে মেদিনীপুর আসনে কে বিজেপির টিকিটে লড়বেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ অর্থাৎ, রবিবার রাতেই বাংলার বাকি ২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেবে বিজেপি। সেই তালিকায় মেদিনীপুরের প্রার্থী হিসেবে দিলীপের নাম থাকবে কি না, তা নিয়েই এখন চর্চা রাজনৈতিক মহলে।
‘দিলীপদা মানসিক চাপে আছেন’ কটাক্ষ জুন মালিয়ার
কারণ, বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপির অন্দরে জোর গুঞ্জন, এ বার আর দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুর থেকে টিকিট দেবে না দল। এই জল্পনায় যে সারবত্তা আছে, ঘনিষ্ঠ মহলে তা স্বীকারও করে নিয়েছেন দিলীপ। সূত্রের খবর, তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে ভোটে লড়াতে চাইছেন অমিত শাহ, জগৎপ্রকাশ নাড্ডারা। কারণ, বিভিন্ন সমীক্ষা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাঁদের মনে হয়েছে, মেদিনীপুরের কুড়মি সমাজ দিলীপের উপর ক্ষেপে আছে। সে কারণে দিলীপকে মেদিনীপুর থেকে ঠেলে বর্ধমান-দুর্গাপুরে পাঠাতে চাইছেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে প্রাক্তন পুলিশ কর্তা ভারতী ঘোষের মেদিনীপুর থেকে বিজেপির টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
মেদিনীপুরে দিলীপপন্থী বিজেপি নেতারা অবশ্য এত সহজে হাল ছাড়তে চাইছেন না। শনিবার রাতে দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি বৈঠকে বসার আগেই তাঁরা শীর্ষ নেতৃত্বের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মেদিনীপুরকে 'মেদিলীপুর' লিখে প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন দিলীপ অনুগামীরা। গত পাঁচ বছরে সাংসদ হিসেবে মেদিনীপুরের জন্য তিনি কী কী কাজ করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হচ্ছে তার ফিরিস্তিও। এমনকী, মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গায় বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দিলীপ ঘোষের নামে দেওয়ালও লেখা হয়েছে শনিবার। ওই লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি নেতা শমিত দাস বলেন, 'এ সব অতি-উৎসাহী কর্মীদের কাজ হতে পারে। কে কোথায় প্রার্থী হবে তা দল ঠিক করবে। দিলীপ ঘোষ টিকিট পাবেন নাকি ভারতী ঘোষ, তা দল বলে দেবে।'
দিলীপ ঘনিষ্ঠদের দাবি, গত দেড়মাসে নির্বাচনী প্রচারে মেদিনীপুরে অনেক টাকা ব্যয় করে ফেলেছেন দিলীপ। এখন অন্য কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়লে তাঁকে পার্টি-ফান্ডের টাকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। শুধু তাই নয়, দিলীপের বিকল্প যে ভারতী ঘোষ হতে পারেন না, সেটাও জোর গলায় দাবি করছেন মেদিনীপুরের দিলীপপন্থীরা। বিজেপির টিকিটে জেতা খড়্গপুর পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার বেলা অধিকারী কোনও রাখঢাক না করেই বলেন, 'ভারতী ঘোষ এসপি থাকাকালীন অত্যাচার করেছেন বিরোধীদের উপর। ২০১৫ সালে আমরা বিজেপির টিকিটে জিতেছিলাম, জোর করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করতে বাধ্য করেছিলেন উনি। সেকথা কেউ ভুলে যায়নি। ভারতীকে মেদিনীপুরের বিজেপি কর্মীরা মেনে নেবেন না।'