Kuno National Park Cheetah: কুনোয় জন্মানো প্রথম চিতা আজ পা রাখছে এক বছরে
এই সময় | ২৪ মার্চ ২০২৪
তোমার নাম কী? নাম নেই। কেউ নাম দেয়নি।জন্মের তিন মাসের মাথায় তিন ভাইবোন মারা গেছে চোখের সামনে। মা তাকে আর কাছে টানেনি। অসুখে ভুগে বাবাও মারা গেছে গত জানুয়ারিতে। খেতে শিখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই, হাঁটতে শেখানোর কেউ নেই, দৌড়ে শিকার ধরা তো আরও দূরের প্রশ্ন! সবার আশঙ্কা ছিল, ও বাঁচতে পারবে তো? পেরেছে! আজ, ২৪ মার্চ ১ বছরে পা রাখছে ৭৫ বছর পর ভারতের মুক্ত জঙ্গলে জন্ম নেওয়া প্রথম চিতাশাবকটি।নামহীন ঠিকই। তবে অস্তিত্বহীন নয়। ২০২৩-এর ২৪ মার্চ মধ্যপ্রদেশের কুনোর জঙ্গলে একসঙ্গে চারটি শাবকের জন্ম দিয়েছিল নামিবিয়ান চিতা সিয়ায়া ওরফে জ্বালা। ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে আফ্রিকা থেকে ৮টি চিতা উড়িয়ে আনার পরে প্রথম সুখবর ছিল এটাই। হোক না মা-বাবা নামিবিয়ান, ভারতের মাটিতে জন্মানো চার শাবককে ভারতীয় চিতার নতুন প্রজন্ম হিসেবেই মেনেছেন সবাই। গত মে মাসের প্রবল গরমে জ্বালার তিন সন্তান মারা যায় ডিহাইড্রেশনে। কোনওক্রমে বাঁচানো গিয়েছিল একটি মাদি চিতাশাবককে। সুস্থ করার পরে তাকে মা জ্বালার কাছে ফেরানোর চেষ্টা সফল হয়নি। তাই তার ঠিকানা কুনোর জঙ্গলের 'কোয়ারান্টিন বোমা' বা ঘেরাটোপ। সেই শাবকই আজ পূর্ণ করছে এক বছর।
বেলুন ফাটুক না ফাটুক, আজ বসন্ত। এতদিনে কুনোর নতুন প্রজন্ম আরও ডালপালা মেলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথমে ৩টি সন্তান হয় নামিবিয়ান চিতা আশার। তার পর জানুয়ারির শেষে ফের চারটি শাবকের জন্ম দেয় জ্বালা। নবাগতদের নিয়ে সুস্থ আছে সে, তবে প্রথম সন্তানের প্রতি কোনও টান নেই। এর পর গত ১০ মার্চ রীতিমতো রেকর্ড গড়ে কুনোয় একসঙ্গে ৬টি শাবকের জন্ম দেয় সাউথ আফ্রিকান চিতা গামিনী। ফলে ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া চিতার নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি এখন ১৪। এদের মধ্যে ১৩টি শাবকই তাদের মায়ের সঙ্গে রয়েছে। একমাত্র প্রথম চিতাটিই মা থাকতেও পুরোপুরি একা। তার বাবা, নামিবিয়ান চিতা 'রকস্টার' ফ্রেডিও অসুখে ভুগে আচমকা মারা যায় জানুয়ারিতে।
কোথায় আছে কুনোর প্রথম চিতাশাবকটি? মধ্যপ্রদেশের প্রধান মুখ্য বনপাল অসীম শ্রীবাস্তবের কথায়, 'ওকে আমরা কোয়ারান্টিন বোমায় রেখেছি। সুস্থ আছে। রোজ খাবার দেওয়া হয়, জল খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার ও বনকর্মীদের মনিটরিংয়ে থাকে ওই মাদি শাবকটি।' ওর নাম নেই কেন? 'আসলে নাম কেউ দেয়নি। পূর্ণবয়স্ক চিতাদের নামকরণ হয়েছে, ওরটা বাকি আছে। আমরাও ওকে বিশেষ কোনও নামে ডাকি না। মানুষের আওয়াজ পেলে, গাড়ির শব্দ শুনলে ও সাড়া দেয়। এগুলোয় ও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে'- বলছিলেন অসীম।
মায়ের অভাব বোধ হয় না? কুনোর এক শীর্ষ বনাধিকারিকের কথায়, 'মায়ের কি বিকল্প হয়? তবে ও মাকে দেখতে পেত। এখনও পায়। আমরা ওর মাকে (জ্বালা) যে বিশাল এনক্লোজ়ারে ছেড়েছিলাম, সেটা ওর কোয়ারান্টিন বোমার ঠিক পাশে। কিন্তু মায়ের কাছে দিতে পারিনি। কারণ কোনও কারণে জ্বালা যদি খেপে গিয়ে ওর ওপর হামলা করে বসে, একটা থাবাও সামলাতে পারবে না শাবকটি। এখনও বেশ ছোট তো ও।'
জ্বালা এখন ব্যস্ত নতুন সন্তানদের নিয়ে। চিতাশাবক জন্মানোর পরে জঙ্গলের পরিবেশে বেঁচে থাকার প্রাথমিক পাঠ মায়ের থেকেই আসে। শাবক জন্ম দেওয়ার ক'দিন পর থেকেই মা শিকারে বেরোয়। কোনও নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে শাবকদের তারা রাখে ৬-৮ সপ্তাহ। তবে সেটা কোনও একটা জায়গায় নয়, অন্য জানোয়ারের থেকে বাঁচাতে শাবকদের জন্য বেশ কয়েকটি জায়গা বেছে রাখে মা চিতা। জন্মের ৬ সপ্তাহের মাথায় মায়ের সঙ্গে প্রথম হাঁটতে বেরোয় চিতা শাবকরা। ৪-৬ মাস বয়েসে ছোটাছুটি শুরু করে, লাফিয়ে গাছে চড়ার চেষ্টাও করে। বছর গড়ালে মায়ের সঙ্গে থেকেই শুরু হয় শিকারের প্রশিক্ষণ।
কুনোর প্রথম চিতাশাবক তো কার্যত অনাথ। ওর কী হবে? বনকর্তারা জানাচ্ছেন, আপাতত ঘেরাটোপেই বড় হবে ভারতীয় চিতার উত্তর প্রজন্মের প্রথম প্রতিনিধি। কারণ তার সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকাটাই প্রায়োরিটি। আরও কমপক্ষে মাস ছয়েক পরে তাকে দৌড়নো শেখানো হবে, রোজ মাংস না দিয়ে ছোটখাটো শিকার ধরা শেখানো হবে। প্রধান মুখ্য বনপাল অসীমের কথায়, 'ওর রিওয়াইল্ডিং প্রোসেসটা সব বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করা হবে। ও তো মানুষের কাছাকাছি বড় হচ্ছে। আচমকা জঙ্গলে ওকে কখনওই ছাড়া যায় না।' হয়তো একদিন ছাড়া হবে। দেখাও হবে মায়ের সঙ্গে। নামহীন সেই মেয়ে। অস্তিত্বহীন নয়!