এই সময়, নয়াদিল্লি: তাঁর নাকি মন ভালো নেই, খাবারেও প্রবল অরুচি। বার বারই মনে পড়ে যাচ্ছে বিগত দিনের কথা, যখন বাইকে-গাড়িতে লালমাটিতে ধুলো উড়িয়ে বীরভূমের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়াতেন ভোটপুজো ‘সুসম্পন্ন’ করার লক্ষ্যে৷ এখন দিন কাটছে কয়েকশো মাইল দূরে দিল্লির তিহার জেলে। বন্দি অবস্থায় পুরোনো ব্যস্ততার কথা মনে পড়ায় বার বারই স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়ছেন বীরভূমের একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা, অধুনা গোরুপাচারে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডল। অন্তত এমনই দাবি তিহার প্রশাসনের৷অনুব্রতকে আরও ভারাক্রান্ত করে দিচ্ছে বার বার আইনি-যুদ্ধে ধাক্কার খবর৷ রাউস অ্যাভিনিউ আদালত, দিল্লি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে ধারাবাহিক লড়াই চালিয়েও গত দেড় বছরে শিকে ছেঁড়েনি৷ অসুস্থতার যুক্তিতেও জোটেনি জামিন৷ দেশের তাবড় আইনজীবীদের মাঠে নামিয়েও ফল হয়নি৷ মাঝখানে খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা৷ আদৌ কি তিনি কোনও দিন জেল থেকে ছাড়া পাবেন, ফিরতে পারবেন বীরভূমের বাড়িতে? প্রশ্ন জাগছে কেষ্টর মনে৷ তিহার প্রশাসন সূত্রে দাবি, জেল আধিকারিকদের কয়েক জনের সঙ্গে আলাপচারিতায় অনুব্রত নিজেই ব্যক্ত করেছেন তাঁর হতাশার কথা।
মেয়ে সুকন্যা, প্রাক্তন দেহরক্ষী সেহগল হোসেন, বিএসএফ-এর প্রাক্তন কমাড্যান্ট সতীশ কুমার-সহ আরও অনেকেই তিহারে বন্দি৷ প্রত্যেকেই নিজের নিজের মতো আইনি লড়াই চালাচ্ছেন৷ সেই লড়াইয়ের প্রতিটি স্তরে কী ডেভলপমেন্ট হচ্ছে, কড়া নজর রাখেন অনুব্রত৷ কিন্তু কোর্টে কোনও সুরাহা না-মেলায় হতাশা গ্রাস করছে তাঁকে। ২০২২-এর ১১ অগস্ট সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, পরে ইডিও হেফাজতে নিয়েছিল। বাংলা থেকে দিল্লিতে এনে বন্দি করে রাখা হয়েছে৷ দীর্ঘ বন্দিত্বের সঙ্গে নির্বাচনী ময়দানে থাকতে না-পারাই যেন হতাশার মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে কেষ্ট মণ্ডলের।
প্রসঙ্গত, মাঝে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিল তিহাড়ে। সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বীরভূমে দলীয় দায়িত্ব থেকেও তাঁকে অব্যাহতি দেয়নি তৃণমূল। সভাপতি পদে রয়েছেন তিনিই। এমনকী, অনুব্রত মণ্ডলের কায়দাতেই চালাতে হবে দল, এমনও বার্তা শোনা গিয়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমোর কণ্ঠে। এরপরেই বীরভূমের ব্যানার-পোস্টারে ফিরতে শুরু করেন অনুব্রত মণ্ডল।
এদিকে বীরভূমের দুটি কেন্দ্রকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল। অনুব্রতহীন বীরভূমে রাজনৈতিক লাভ ঘরে তুলতে চাইছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিও।