বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান মুসলিম তার নয়ন মনি হিন্দু তাহার প্রাণ'। নজরুলের সেই কবিতা সত্য়ি হল, ফের স্থাপন হল ভ্রাতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত। হরিয়ানার ফরিদাবাদ জেলার উনচা গ্রামে অবস্থিত মসজিদ সংলগ্ন শীতলা মায়ের মন্দিরে সংস্কারে এগিয়ে এলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। মন্দিরে টাইলস বসানোর কাজে উদ্যোগী হলেন তাঁরা। গ্রামে এখন খুশির হাওয়া। মুসলিমদের এহেন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সকলে। মসজিদ কমিটির প্রধান শেরখান মালিক, মসজিদের ইমাম মাওলানা জামালুদ্দিন, বাবু খান সিদ্দিকী মাহমুদ খান হাজী, সুলেমান সাইফি হাজী, কামান সাইফি শওকিন এবং সাহিল খান জাভেদ ঠিকাদার উমরি খানের সঙ্গে আলোচনা করে হোলির আগে গ্রামের শীতলা মায়ের মন্দির মেরামতির সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই প্রস্তাবে এগিয়ে আসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও। সহযোগিতা করেন এই কাজে।বয়সজনিত কারণে মন্দিরের দশা বেশ জরাজীর্ণই হয়ে পড়েছিল। একাধিক জায়গায় ধরেছিল ফাটল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল মেঝেও। এহেন জরাজীর্ণ মন্দিরের হাল ফেরাতে উদ্যোগী হন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। মন্দির মেরামতির সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তাঁদের এই উদ্য়োগ দেখে এগিয়ে আসেন গ্রাম সেবা সমিতির প্রধান প্রেম সিং আধানা, শ্যামবীর নরসিংহ আধনা, সতীশ আধানা। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধান প্রেম সিং আধানা বলেন, উঞ্চা গ্রাম সবসময়ই শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার প্রতীক।
প্রধান শেরখান মালিক জানান, হোলির আগে তিনি শীতলা মাতার মন্দির মেরামতের জন্য বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে এই বিষয়ে একমত হয়ে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। এই কাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও সহযোগিতা করেছেন বলে জানান তিনি। গ্রাম সেবা সমিতির প্রধান প্রেম সিং আধানা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনের এই কাজের প্রশংসা করেছেন এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের গ্রাম ভ্রাতৃত্বের জন্য পরিচিত। আমাদের গ্রাম ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার প্রতীক। মুসলিম সম্প্রদায়ের এই কাজের মধ্য দিয়ে আবারও ভ্রাতৃত্বের বার্তা দেওয়া হল।'
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের ইসলামকোটে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো রাম মন্দির রয়েছে । আশেপাশের এলাকা থেকে হিন্দুরা সেখানে প্রার্থনা জানাতে আসেন। সেই মন্দিরের ইঁট-কাঠ-পাথরে এখন বয়সের ভার। মন্দিরটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই এখন এটি পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যে সমস্ত কারিগর এবং শ্রমিকরা এই নতুন ভবনটি তৈরি করেছেন তাঁরা সবাই মুসলিম।