East West Metro: হাওড়া ময়দানে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় কমেছে বাস-ফেরির যাত্রী
এই সময় | ২৫ মার্চ ২০২৪
সুপ্রকাশ চক্রবর্তী
ধর্মতলা কিংবা পার্ক স্ট্রিটে অফিস যাওয়ার জন্য হাওড়া ময়দান থেকে বাসে বসে অপেক্ষা করতে হতো অনেকক্ষণ। বাসের ড্রাইভারের সময় হলে তবেই বাস ছাড়বে। গরমে নাজেহাল অবস্থা হতো যাত্রীদের। একই ছবি ছিল ফেরিঘাটে। একটি লঞ্চ চলে গেলে অন্যটির জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো যাত্রীদের। এ ভাবে অফিসে পৌঁছতেও দেরি হতো। কিন্তু হাওড়া ময়দান থেকে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার পর এক সপ্তাহেই হাওড়া ব্রিজে যাত্রীর সংখ্যা অন্তত ৪০ শতাংশ কমেছে বলে মনে করছেন বাস চালক-কর্মীরা। ফেরিতেও কমছে যাত্রী। উল্টোদিকে, অফিস টাইমে হাওড়া ময়দান মেট্রোয় তিল ধারনের জায়গা নেই। তবে ভিড় হলেও খুশি যাত্রীরা।দেশে প্রথম নদীর নীচ দিয়ে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার পর বেশির ভাগ ভিড় হচ্ছে অফিস টাইমেই। এখন গঙ্গার নীচ দিয়ে মেট্রো চড়ার ভিড় বলতে গেলে কমই। নেই সেলফি তোলার হিড়িকও। তবে অফিস টাইমে হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলাগামী মেট্রোয় ভিড়ের চাপে দরজা বন্ধ করতে সমস্যা হচ্ছে। মেট্রোয় ১২-১৩ মিনিটের মধ্য মাত্র দশ টাকা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন মানুষ। তাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। এতে খুশি যাত্রীরা। আর বাসে ১৫ মিনিটে রবীন্দ্র সেতুও পার হওয়া যায় না। স্বভাবত বাসে ভিড় কমেছে। বিকেলের দিকেও ধর্মতলা থেকে হাওড়া ও হাওড়া ময়দানের দিকে মেট্রোয় ভিড় হচ্ছে। তবে যাত্রীদের আশা, ট্রেনের সংখ্যা বাড়লে এই সমস্যা অনেকটাই কমবে।
বর্ধমান থেকে ধর্মতলায় অফিস করেন অসীম চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন হাওড়া স্টেশনে নেমে আমাদের বাস ধরতে ছুটতে হতো। বাসে ঘেমে নেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। মেট্রোর সংখ্যা এখন কম থাকলেও সময় জানা থাকলে সমস্যা হচ্ছে না। তা ছাড়া ১৫ মিনিট এসি-তে কাটালে ক্লান্তিও কেটে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেও এখন ভিজতে হবে না।’ হাওড়া ময়দানে অথবা হাওড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে যে সমস্ত বাস কলকাতার দিকে যায়, অফিস টাইমে সেগুলি এখন সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে।
বাসের সিটও ভর্তি হচ্ছে না। রুবি, সায়েন্স সিটি, গড়িয়াগামী সরকারি বাসগুলিতেও ভিড় কম। হাওড়া ময়দান থেকে শিয়ালদহের সরকারি বাসেও যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছে। শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রো চালু হলে হয়তো এই বাস পরিষেবা তুলে দিতে হবে বলে আশঙ্কা বাড়ছে। হাওড়া ময়দান থেকে পার্ক স্ট্রিটগামী বাসের অবস্থাও এক। অনেকেই ধর্মতলায় নেমে পার্ক স্ট্রিট হেঁটে চলে যাচ্ছেন। কিংবা ধর্মতলা থেকে পার্ক স্ট্রিটের মেট্রো ধরে নিচ্ছেন।
যাঁরা হাওড়ায় নেমে ফেরি পার হয়ে কলকাতায় যেতেন তাঁদের একাংশ এখন মেট্রোয় যাতায়াত পছন্দ করছেন। শিবপুর, রামরাজাতলা, কদমতলা প্রভৃতি জায়গা থেকে ই-রিকশায় প্রায় ১৫ মিনিটে পৌঁছে মেট্রো ধরছেন যাত্রীরা। আগে বেশি ভাড়া দিয়ে এসে আবার ফাঁকা অটোর জন্য অপেক্ষা করতে হতো। বেশি টাকা দিয়েও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে ঘাম ছুটত যাত্রীদের।
এখন মেট্রোয় অনায়াসেই কম সময়ে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যাচ্ছেন মানুষ। রামরাজাতলার বাসিন্দা দেবীপ্রসাদ সরকার বলেন, ‘রামরাজাতলা থেকে বাসে ধর্মতলা পর্যন্ত গেলে আগে সময় লাগত প্রায় এক ঘণ্টা। তার পর হাওড়া ব্রিজের যানজট তো আছেই। এখন হাওড়া ময়দান পর্যন্ত এসে মেট্রোতে ধর্মতলা পৌঁছতে কম সময় লাগছে। এক ঘণ্টার জার্নি ছিল। এখন প্রায় পঁচিশ মিনিটে পৌঁছ যাচ্ছি।’
তবে বাস কমে গেলে রাত ৯টার পর সমস্যায় পড়বেন যাত্রীরা। অতসী সিকদার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘সরকারি বা বেসরকারি বাস এ ভাবে লোকসান নিয়ে কতদিন চলবে জানি না। তবে রাতে কিংবা ভোরের দিকে বাসের প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতি হলে ভোরে ও রাতের দিকে বাস চালাতেই হবে।’ যাত্রীরা জানান, ধর্মতলার পুরোনো স্টেশনে নেমে হাওড়া ময়দান বা গ্রিনলাইট মেট্রোর দিকনির্দেশ ঠিক মতো মিলছে না। অনেকে ভুল করে টোকেন জমা করে ফেলছেন। দিকনির্দেশের ব্যবস্থা আরও একটু ভালো হলে যাত্রীদের আরও সুবিধা হবে।