Terrorist Attack : এই হলই তো কাঁপিয়ে গিয়েছিলেন সোনু নিগম!
এই সময় | ২৫ মার্চ ২০২৪
সুদেষ্ণা ঔরঙ্গবাদকর * মস্কোপ্রথমে চকচকে কালো স্যুট। পরে দুধ-সাদা কুর্তার সঙ্গে ছাইরঙা ফেডেস জিন্স। একের পর এক বলিউড-ধামাকায় স্টেজ কাঁপাচ্ছেন সোনু নিগম। খুব ভুল না করলে, সময়টা ২০১৩-র ১০ অগস্ট। ওভারসিজ় বিহার অ্যাসোসিয়েশনের আমন্ত্রণে রাশিয়া সফরে এসে এই ক্রকাস সিটি হলেই পারফর্ম করে গিয়েছিলেন সোনু। সেই হলেই এত বড় জঙ্গি হামলা হয়ে গেল? মারাত্মক সিকিউরিটি। তার পরেও কী ভাবে? বারবার এই প্রশ্নটাই অস্থির করে দিচ্ছে।
শুক্রবার সারারাত টিভির পর্দা আর স্মার্ট স্ক্রিনে চোখ রেখে আতঙ্কের প্রহর গুনেছে মস্কো। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল জঙ্গি হামলার একাধিক ছবি-ভিডিয়ো দেখে বুক কেঁপেছে প্রত্যেকের। এর মধ্যে কখন যে ভোর হলো, টেরই পারিনি। উইকেন্ড, কিন্তু এ যেন আর পাঁচটা ছুটির দিনের মতো নয়। সকাল থেকেই শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। দেশের প্রায় সর্বত্র। বসন্ত এসে গেছে। কিন্তু সেই আবেশটাই যেন মিসিং। রাতারাতি সবই যেন বদলে গিয়েছে। শনি-রবি স্কুল ছুটি। শুক্রবার স্কুলের পরে তাই অনেকেই ছুটি কাটাতে মস্কো ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। কিন্তু সম্ভবত তাঁদেরও মন পড়ে রয়েছে মস্কোতেই।
আকাশের মুখ ভার। রাশিয়ানদেরও। সকালে রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম, থমথম করছে চারপাশ। একটু যেন খালি-খালি। কিন্তু সেই অর্থে প্যানিকড বলা যায় না। বরং বেলা যত গড়িয়েছে, ততই যেন স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন মস্কোবাসীরা। চমকে গেলাম হাসপাতালগুলোর চেহারা দেখে। প্রায় সবকটার বাইরে লাইন। সকাল ৭টা থেকে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দেওয়ার জন্য ভিড় জমিয়েছেন নানা বয়সের রাশিয়ানরা। আমি আদতে কলকাতার মেয়ে। মস্কোয় পড়াতে এসেছি। ৩৪ বছর ধরে রাশিয়ায় রয়েছি। এ ভাবেও যে বিপদের দিনে স্বজাতির পাশে দাঁড়ানো যায়, রাশিয়ানদের না-দেখলে বোধহয় বুঝতে পারতাম না। অসম্ভব শৃঙ্খলাবদ্ধ একটা জাতি।
জঙ্গি হামলার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু বিকেলের দিকে মস্কো ছাড়িয়ে এক বন্ধুর কান্ট্রিহাউস যাওয়ার পথে দেখলাম ধীরে ধীরে ভিড় জমছে মলে-মলে। ক্যাফেতেও দিব্যি যাতায়াত লেগে রয়েছে। ফাঁকে ফাঁকে খবরেও চোখ রাখছেন অনেকে। সোমবার শোকদিবস পালনের কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট।
২০০২-এ মস্কোর দুব্রোভকা থিয়েটার হলে হামলা চালিয়েছিল চেচেন জঙ্গিরা। সেবার প্রাণ গিয়েছিল ১৭২ জনের। তবে ক্রকাস সিটি হলে এমন হামলা আগে হয়নি। অনেকেই এর সঙ্গে ২০১৫-য় প্যারিসের বাতাক্লঁ থিয়েটারে আইএসের হামলার মিল পাচ্ছেন। সেখানে প্রাণ গিয়েছিল অন্তত ১৩০ জনের। কিন্তু ক্রকাসে সিটি হল কেন নিশানায়? অনেকেই মনে করছেন, গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান এবং ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ার কারণেই হামলার জন্য ওই হলকে বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা।
ভেগাল সিটি হল-সহ আরও একাধিক প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে ওই চত্বরে। রয়েছে ক্রকাস এক্সপো, বহু নামী হোটেল ও রেস্তরাঁ। শুক্রবার ওই চত্বরেই পাশের একটি হলে ছেলেকে নিয়ে কনসার্ট শুনতে যান আমার এক বান্ধবী। ওঁদেরও সবাইকে সুষ্ঠু ভাবে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ভাবতে পারেন, এত বড় জঙ্গি হামলার পরেও কোনও পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা নেই! অন্তত আমি তো শুনিনি। বরং টিভিতেই দেখলাম, গোলাগুলি বন্ধের পরে পুলিশি তৎপরতায় কী ভাবে হুড়োহুড়ি না-করে লাইন দিয়ে অভিশপ্ত ওই হল থেকে বেরিয়ে আসছেন দর্শকরা।