এই সময়: পরীক্ষার মরশুম এখনও পুরো শেষ হয়নি। ছোটদের বার্ষিক পরীক্ষা মিটে গেলেও সিবিএসই, আইসিএসই কিংবা আইএসসি-র দশম ও দ্বাদশের পরীক্ষা এখনও চলছে। আর তার মধ্যেই চোখের সংক্রমণ ও অ্যালার্জি মাথাচাড়া দিয়েছে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই মরশুমে কনজাংটিভাইটিস, কর্নিয়ার সংক্রমণ, চোখের অ্যালার্জি আর আঞ্জনি হচ্ছে দেদার। সবচেয়ে বেশি ভুগছে ছোটরাই। প্রায়ই তার নেপথ্যে থাকছে অ্যাডিনোভাইরাস। সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দেদার।
যদিও মরশুমি অ্যালার্জিটাই বেশি বলে জানাচ্ছেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় দত্ত। তিনি বলেন, ‘প্রচুর কনজাংটিভাইটিস হচ্ছে। ভাইরাল কম, মূলত অ্যালার্জির কারণেই হচ্ছে।’ পেডিয়াট্রিক অপথ্যালমোলজিস্ট অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভয় দিয়ে বলছেন, অ্যালার্জি থেকে হওয়া কনজাংটিভাইটিস এক জন থেকে অন্য জনে ছড়ায় না। তিনি জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই এই মরশুমে, মার্চ আর এপ্রিল নাগাদ এমনটা হয়। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি দত্তর অভিজ্ঞতা, ‘শুধু ছোটদেরই নয়, বড়দেরও হচ্ছে কনজাংটিভাইটিস। তবে ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস বেশি হচ্ছে ছোটদের।’
কেন? হিমাদ্রি দত্তর ব্যাখ্যা, ‘ওরা অসতর্ক ভাবে বারবার না-ধোয়া হাত চোখে দেয় বলে সমস্যা। সহপাঠীর পাশে বসা, আক্রান্তের ব্যবহার করা জিনিস ছুঁয়ে চোখে হাত দেওয়া—এ সবের জেরে অসুখটা ছড়াচ্ছে।’ একই বক্তব্য চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি জানাচ্ছেন, বয়স নির্বিশেষে কনজাংটিভাইটিস হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, ‘অধিকাংশই ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস। ঋতু বদলের কারণেই সংক্রমণ বেশি মাথাচাড়া দিচ্ছে।’ তবে তিনি জানাচ্ছেন, আজকাল দূষণের কারণে সারা বছরই প্রায় লেগে থাকে কনজাংটিভাইটিস।
সৌভিকবাবুর অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক সময়ে শ্বাসনালীর ভাইরাল ইনফেকশনের সঙ্গেই হচ্ছে চোখে সংক্রমণ। এবং ছোটরাও বাদ পড়ছে না। চিকিৎসকদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, শিশুদের মধ্যে ৫-১০ বছর বয়সেই চোখের সংক্রমণটা বেশি হচ্ছে। কারও কারও বা সামান্য কনজাংটিভাইটিস দিয়ে ব্যাপারটা শুরু হয়ে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়ে যাচ্ছে। তখন কর্নিয়া পড়ছে সংক্রমণের কবলে। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, আসল ভিলেন হলো অ্যাডিনোভাইরাস। আই সার্জেন দেবাশিস ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, তাঁদের হাসপাতালে প্রচুর এমন রোগী আসছে। মূলত কম বয়সে ইমিউনিটি দুর্বল থাকে বলেই সংক্রমণটা এত ভোগাচ্ছে। অনেকের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রণের জন্যে চোখের পাতায় বা চোখের কোলে মারাত্মক বেদনাদায়ক আঞ্জনিও হচ্ছে।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অ্যালার্জি কিংবা ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার কারণেও অনেকের কনজাংটিভাইটিস হচ্ছে। অ্যালার্জির ক্ষেত্রে চোখ কড়কড় বেশি করে, চোখ লাল হয়ে ওঠে। সংক্রমণটা ভাইরাল হলে চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়ে, ব্যথা হয়। আর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে কনজাংটিভাইটিসে চোখ ফুলে ওঠে, চোখ দিয়ে এমন পিচুটি কাটে যে চোখের পাতা বুজে আটকে যাওয়ার উপক্রম হয়। তবে সেকেন্ডারি ইনফেকশনের ক্ষেত্রে সারতে বেশ সময় লাগছে। কখনও বা দু’সপ্তাহও লেগে যাচ্ছে। অন্যথায় ৩-৭ দিনের মধ্যেই মিটে যাচ্ছে ঝামেলা। চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড-সহ নানা রকম আইড্রপ ও ট্যাবলেট।