• ৪৪ বছর আগের খুন! কিনারা চুইংগামে
    এই সময় | ২৫ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়: মুখ থেকে ছুড়ে ফেলা একটা চুইং গাম আর সেটা থেকেই ৪৪ বছর আগের একটা খুনের মীমাংসা! পুলিশের ক্রাইম সলভের এমন গল্প হার মানাবে যে কোনও হলিউডি সিনেমাকে। ঠিক যেমন ১৯৯৪ সালে লন্ডনে খুন হওয়া এক যৌনকর্মীর আংটিতে জড়িয়ে যাওয়া একটা চুল ৩০ বছর পর ধরিয়ে দিয়েছিল খুনিকে!

    ১৯৮০ সালের খুনের ঘটনাটি আমেরিকার ওরেগনের। সেখানে ১৯ বছরের এক কলেজ ছাত্রীর খুনের ঘটনায় গত সপ্তাহে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ৬০ বছরের রবার্ট প্লাইম্পটন। ১৯৮০-এর ১৫ জানুয়ারি মাউন্ট হুড কমিউনিটি কলেজের পড়ুয়া বারবারা টাকারকে অপহরণ, যৌন হেনস্থার পর পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। পরদিন কলেজ ক্যাম্পাসে পার্কিং লট থেকে বারবারার দেহ উদ্ধার করেন কলেজেরই অন্য পড়ুয়ারা।ঘটনার দিন ধর্ষক-খুনিকে দেখেননি কেউ। অল্প কয়েকজন সাক্ষী পাওয়া গেলেও তাঁরা কেউ বারবাবার চিৎকার শুনেছেন, কেউ শুধু ঝোপের আড়াল থেকে কাউকে পালাতে দেখেছেন। তদন্ত শুরুর সময়ে প্রায় কোনও ক্লু ছিল না তদন্তকারীদের হাতে। ময়নাতদন্তের সময়ে বারবারার দেহ থেকে সোয়াব সংগ্রহ করে রাখেন তদন্তকারীরা। তা থেকে অভিযুক্তের একটা ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হয়। ভার্জিনিয়ার ডিএনএ প্রযুক্তিভিত্তিক সংস্থা প্যারাবন ন্যানোল্যাব সেই ডিএনএ প্রোফাইলিং অনুযায়ী খুঁজতে থাকে সম্ভাব্য ম্যাচ। প্যারাবনের চিফ জেনেটিক বিশেষজ্ঞ সিসি মুরে জানান, ডিএনএ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তের শারীরিক গঠনের আঁচ পাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু সেটা খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজা।

    সাক্ষীদের কেউ একজন দেখেছিলেন ঝোপ থেকে পালিয়ে যাওয়া লোকটির লাল চুল। পুলিশের কাছে থাকা ক্রিমিনালদের ডিএনএ প্রোফাইল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বেশ কিছু মানুষের ডিএনএ রেকর্ড দেখে লাল চুলের মানুষদের খোঁজ শুরু হয়। তৈরি করা হয় তাঁদের ফ্যামিলি ট্রি। সেই সূত্র ধরে ডিএনএ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তের খোঁজ শুরু হয়। তথ্য ঘাঁটতে ঘাঁটতে অবশেষে একটি পরিবারের সঙ্গে ডিএনএ প্রোফাইলের কিছুটা ম্যাচিং পায় পুলিশ। ২০২১-এর মার্চে মুরে জানান, রবার্ট প্লাইম্পটনই সম্ভাব্য অপরাধী, কিন্তু পোক্ত প্রমাণ ছাড়া শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কোর্টে কেস টিকবে না। ফলে, শুরু হয় প্রমাণের খোঁজ।

    তদন্তকারীরা প্লাইম্পটনের উপর নজরদারি শুরু করেন। একদিন দেখা যায় মাঠের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে মুখে থাকা চুইং গামটা ঘাসের উপর ছুড়ে ফেলল প্লাইম্পটন। সঙ্গে সঙ্গে সেটা তুলে নিয়ে প্রোফাইল ম্যাচিংয়ের জন্য ডিএনএ টেস্টে পাঠান তদন্তকারীরা। তাতেই বাজিমাত। দেখা যায়, বারবারার ময়নাতদন্তের সোয়াবে পাওয়া ডিএনএ-র সঙ্গে চুইং গামে লেগে থাকা লালার ডিএনএ এক্কেবারে এক! ২০২১-এর ৮ জুন গ্রেপ্তার করা হয় প্লাইম্পটনকে। গত সপ্তাহে বারবাবার ধর্ষণ-খুনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সে। প্লাইম্পটনের অবশ্য দাবি, সে নির্দোষ। তবে আপাতত মাল্টনোমাহ কাউন্টির কাস্টডিতে রয়েছে প্লাইম্পটন। তার সাজা ঘোষণা জুন মাসে।

    ১৯৯৪-এর লন্ডনের কেসটাও একই রকম ইন্টারেস্টিং। মারিনা কোপ্পেল নামে এক যৌনকর্মী তাঁর নিজের বাড়িতে খুন হন। পরনে শুধু অন্তর্বাস, দেহ রক্তে মাখামাখি। যৌনকর্মীর বাড়িতে কে এসেছিলেন, কিছুই বুঝতে পারছিল না পুলিশ। প্রমাণ বলতে, মারিনার আংটিতে আটকে থাকা একটি চুল। সেটাকেই সযত্নে সংরক্ষণ করেছিলেন তদন্তকারীরা। তখন ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। ইতিমধ্যে ২০১২ সালে প্রেমিকাকে মেরে রক্তাক্ত করে দেওয়ার অভিযোগে ব্রিটিশ পুলিশ ধরে সন্দীপ প্যাটেল নামে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে । তার ডিএনএ প্রোফাইলিং ওঠে পুলিশি রেকর্ডে। ২০২২ সালে মারিনার আংটিতে লেগে থাকা চুলের ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হয়। ম্যাচিং করতে দেখা যায় সন্দীপের ডিএনএ-র সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে!

    ইতিমধ্যে ফাইল ঘেঁটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিপোর্ট বের করে দেখা যায় মারিনার রান্নাঘরের প্লাস্টিকে পাওয়া আঙুলের ছাপ সন্দীপেরই! কিন্তু ১৯ বছরের ছেলে কেন মেরেছিল মারিনাকে? পুলিশের ধারণা, যৌনকর্মীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিল সন্দীপ, কিন্তু নিজের যৌন অক্ষমতা প্রকাশ্যে চলে আসায় রাগে, ক্ষোভে প্রায় ১৪০ বার মারিনাকে কুপিয়েছিল সে! এখন পঞ্চাশের কোঠায় পৌঁছেও আইনের হাত এড়াতে পারেনি সন্দীপ। ব্রিটেনের আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে তাকে।
  • Link to this news (এই সময়)