এই সময়: হোয়াটস ইন আ নেম! শেক্সপিয়ার তো কাব্যি করেই খালাস, ভোটের ময়দানে সে বার কিন্তু এই নামের জ্বালাই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল যুযুধান কংগ্রেস-বিজেপি। বলা ভালো, নেমসেকের জ্বালা! এক আসনেই ভোটপ্রার্থী ১১ জন চান্দুলাল সাহু! প্রথমে বিজেপি রেগে গেল, পরে কংগ্রেস। কমিশনের কর্তারা হেসেই খুন। কারণ টেকনিক্যালি তাঁদেরও কিছু করার ছিল না— সবাইকে ভোটের প্রতীক দিয়ে শেষ দেখা ছাড়া। কী হয়েছিল শেষমেশ? তার আগে বরং গোড়ায় ফেরা যাক।২০১৪-র হাইভোল্টেজ লোকসভা নির্বাচন। দেশের সর্বত্র ‘আসছি-আসব’ রব তুলে দিয়েছে বিজেপি। ফলে কোনও সিটই আর ফেলনা নয়। ছত্তিসগড়ের মহাসমুন্দ লোকসভা কেন্দ্রের আসন ধরে রাখতে রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়েই কংগ্রেসের তরফে নমিনেশন ফাইল করলেন ছত্তিসগড়ের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগী। আর বিজেপির হয়ে, চন্দলাল সাহু। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল।
খেলা শুরু হলো মনোনয়ন জমা দেওয়ার লাস্ট ডেটে। ভোটে লড়ার প্রতীক চেয়ে কোথা থেকে যেন উড়ে এসে কমিশনের ঘরে জুড়ে বসলেন আরও ১০ জন চান্দুলাল সাহু। মানেটা কী? মহাসমুন্দ এমনিতে সাহু পদবি অধ্যুষিত। তা বলে সবাই চান্দুলাল! রে-রে করে উঠেছিল বিজেপি। ভোটারদের বিভ্রান্ত করতেই ১০ জন ডামি চান্দুলালকে ভোটে দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস— এই অভিযোগ তুলে অজিতের প্রার্থিপদ খারিজের দাবিও তোলে গেরুয়া শিবির। এমনকী, ওই ১০ ‘ডামি’ প্রার্থী নাকি কমিশন থেকে যে যাঁর মতো প্রতীক আদায় করে নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছে বলেও সরব হয় তারা। কমিশনের কিন্তু হাত পা বাঁধা।
নিরপেক্ষ ১০ জন প্রার্থীর নাম এক হলেও তাঁদের কিছু করার নেই। যথারীতি তাই ‘হাইলি সাসপিশাস’ ওই দশ চান্দুও চোরাগোপ্তা শুরু করে দিলেন প্রচার। বেলুন, সিলিং ফ্যান, অটো, পাওরুটি, টিভি, বেল্ট, ব্ল্যাকবোর্ড, বোতল, ব্যাটসম্যান— অদ্ভুত সব ভোটচিহ্নে ভরে যায় মহাসমুন্দের দেওয়াল। ভোটের দিন যত এগোচ্ছে, ততই যেন সুর চড়ছে বিজেপির। কংগ্রেসের ঘরে কিন্তু হিরন্ময় নীরবতা। ভোটের দিনও সরগরম মহাসমুন্দ। খেলা ঘুরল কাউন্টিংয়ের দিন, তা-ও একেবারে শেষ প্রহরে। দিব্যি লিড নিয়ে এগোচ্ছিলেন অজিত। হঠাৎ দেখা গেল, চান্দুরা যেন সবাই মিলে তাঁকে হারাকে মরিয়া।
শেষমেশ দেখা গেল, ১২০০ ভোটে বিজেপির চান্দুর কাছেই হারলেন কংগ্রেসের অজিত। আর ওই বাকি ১০ জন চান্দুলাল? তাঁরা দিব্যি কার্যত অন্তরালে থেকেই ৬০ হাজারেরও বেশি ভোট কেটে বেরিয়ে গেলেন! কার ডামি? কে খিলাড়ি— সমীকরণটা আজও স্পষ্ট নয়। তবে নিন্দুকেরা বলেন, বিজেপি-বধের অস্ত্র সে বার আসলে অজিতেরই বুমেরাং হয়ে গিয়েছিল।