Chhattisgarh Maoists: ৩ শর্তে পিস টকে রাজি ছত্তিশগড়ের মাওবাদীরা
এই সময় | ২৫ মার্চ ২০২৪
চিত্রদীপ চক্রবর্তীএক টেবিলে বসার উদ্যোগটা চলছিল অনেক দিন ধরেই। তবে একপক্ষ অদ্ভুত কিছু শর্ত সামনে রেখে খারিজ করে দিচ্ছিল সেই প্রচেষ্টা। অবশেষে দীর্ঘদিন পরে জমে থাকা বরফ গলার একটা ইঙ্গিত এলো নারাজ-পক্ষের তরফ থেকে। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার ইতিবাচক বার্তা দিল ছত্তিশগড়ের মাওবাদীরা। যা দেশের রাজনৈতিক দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
অন্ধ্রপ্রদেশ, তারপর বাংলায় এই শান্তি উদ্যোগ শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। প্রাথমিক ভাবে ঠিকঠাক গতিতে তা এগোলেও সেই প্রক্রিয়া জোর ধাক্কা খায় মাওবাদীরা মাঝপথে সরে আসায়। তার কারণ, অন্ধ্র ও বাংলা—দু’জায়গাতেই দেখা যায়, আলোচনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের তরফে যৌথ বাহিনীকে মাওবাদীদের গোপন ডেরায় অপারেশনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যখনই দলের শীর্ষ নেতারা শান্তি আলোচনার ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, সেই সুযোগে সশস্ত্র স্কোয়াড মেম্বারদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন প্রশিক্ষিত জওয়ানরা। এই স্ট্র্যাটেজিতেই অন্ধ্রপ্রদেশে শক্তিশালী মাওবাদী সংগঠন, যৌথ বাহিনীর অপারেশনে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছিল। একাধিক নেতা হয় মারা যান, নয়ত ধরা পড়েন। অন্যদিকে, বাংলার ক্ষেত্রেও মাওবাদীদের প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা হয় বলে দাবি সংগঠনের নেতাদের।
ঠিক এই যুক্তিতে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্যে মাওবাদী শীর্ষনেতা, প্রয়াত কিষেণজিও বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, শান্তি আলোচনার নামে যাঁদের সরকারের তরফ থেকে পাঠানো হয়েছিল, তাঁরা আসলে পুলিশের চর হিসেবে কাজ করেছেন। তাই সরকারের সঙ্গে আর কোনও আলোচনায় বসবেন না তাঁরা। যদিও এই ঘোষণার এক মাসের মধ্যে কিষেণজি বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
আলোচনার ৩ শর্ত
ফলে পুরোনো সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দণ্ডকারণ্যের মাওবাদী স্পেশাল জোনাল কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, কথাবার্তা এগোতে হলে তাঁদের দেওয়া অন্তত তিনটি শর্ত মেনে নিতেই হবে ছত্তিশগড় সরকারকে। প্রথমত, ৬ মাসের জন্য বাহিনীর গতিবিধি ব্যারাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোনও জায়গায় নতুন ক্যাম্প তৈরি করা যাবে না। তৃতীয়ত, ফেক এনকাউন্টার বন্ধ করতে হবে।
শনিবার এক বিবৃতি জারি করে দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির পক্ষ থেকে মুখপাত্র বিকল্প জানিয়েছেন, সম্প্রতি ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা বিজাপুরের জাঙ্গলায় ঘোষণা করেছেন মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাঁর সরকার তৈরি। বিকল্পের কথায়, ‘সরকার মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তৈরি। আমাদেরও এতে আপত্তি নেই। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম তিনটি শর্ত সরকার মেনে নেওয়ার পরে আলোচনার টেবিলে বসা যেতে পারে। আলোচনা হবে গরিব, ভূমিহীন কিষাণদের বিভিন্ন সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে।’
তিনি আরও জানান, আলোচনা করতে হলে, কর্পোরেটদের ইচ্ছেমতো জমি দেওয়া যাবে না। মোদ্দা কথা, আদিবাসী, দলিত এবং মুসলমানদের উন্নতির জন্য সরকারকে খোলা মনে এগিয়ে আসতে হবে। এদের জন্য শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। মহিলাদের জন্য পুরুষদের মতো সমকাজে সমবেতন দেওয়া ছাড়াও তাঁদের উপর সব রকমের হিংসাও বন্ধ করতে হবে। এরই পাশাপাশি বিকল্প জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনও আলোচনায় বসার জন্য দু’পক্ষকে অনুকূল পরিবেশ এবং পরিস্থিতি তৈরি করতে হয়। সে জন্য মাওবাদীরা তাঁদের তরফে এই শর্ত সরকারের কাছে জানিয়ে দিচ্ছেন। যদি সরকার এই আলোচনায় আগ্রহী থাকে, তবে তাঁদের দিক থেকে কোনও আপত্তি নেই।