• Electraol Bond Case : ফার্মা বন্ডের হাফেরও বেশি বিজেপির ফান্ডে
    এই সময় | ২৫ মার্চ ২০২৪
  • অনির্বাণ ঘোষস্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেলাগাম খরচের বহর ক্রমেই বাড়ছে কেন, কেনই বা ওষুধের দামে সরকারি নিয়ন্ত্রণের ফাঁস আলগা হচ্ছে, সে প্রশ্ন গত সপ্তাহেই উঠেছিল। কারণ তখনই সুপ্রিম কোর্টে SBI-এর দেওয়া তথ্যে জানা গিয়েছিল, একটি বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠী ও ৩৬টি ওষুধ কোম্পানি মিলে মোট ৯০৩ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। অনেকেই অনুমান করেছিলেন, তার সিংহভাগই গিয়েছে কেন্দ্রের শাসকদলের তহবিলে। কেননা, সার্বিক ভাবে ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টিই। এবার SBI (স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া) বন্ড সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করার পর দেখা গেল, অনুমান একেবারেই ভুল নয়। ৯০৩ কোটির অর্ধেকেরও বেশি গিয়েছে বিজেপির ফান্ডে।

    SBI বন্ডের আলফা-নিউমেরিক মেমো নম্বর সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন সেই তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছে। তা থেকেই জানা গিয়েছে, কোন কোম্পানি কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকার অনুদান দিয়েছে গত ক’বছরে। তাতেই দেখা গিয়েছে, বিজেপি, বিআরএস, কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেডি, আপ, এসপি, এনসিপি, শিবসেনা, তেলুগু দেশম-সহ দেশের অন্তত ১৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ড মারফত চাঁদা পেয়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্র থেকে।

    এর মধ্যে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে কেন্দ্রের শাসকদলই। ৩৭টির মধ্যে কমপক্ষে ২৯টি কোম্পানির থেকে মোট ৪৬৮.৪৫ কোটি পেয়েছে বিজেপি। এর পরেই রয়েছে ভারত রাষ্ট্র সমিতি। ১৩টি কোম্পানির (অধিকাংশই দক্ষিণ ভারতীয়) থেকে তারা মোট ২৪১.৪ কোটি টাকার বন্ড অনুদান পেয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে কংগ্রেস। ২১টি কোম্পানি থেকে তারা ১৫৩.৯ কোটি টাকা পেয়েছে। তারও পরে রয়েছে তৃণমূল, যাদের প্রাপ্তি ৯টি কোম্পানি থেকে মোট ৫৭.৩ কোটি টাকা।

    ইলেক্টোরাল বন্ড

    এর মধ্যে বিজেপি সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে হেটেরো বায়োফার্মা (৫০ কোটি), টরেন্ট ফার্মা (৪৫ কোটি) ও অরবিন্দ ফার্মা (৩৪.৫ কোটি)-র থেকে। সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বন্ডের পিছনে সবচেয়ে বেশি পয়সা খরচ করেছে হায়দরাবাদের বেসরকারি হাসপাতাল চেন গোষ্ঠী যশোদা হাসপাতাল (১৬২ কোটি)। তারা অবশ্য বিজেপিকে মাত্র ১৫ কোটি টাকা দিয়েছে বন্ডের মাধ্যমে। এর চেয়ে বেশি টাকার বন্ড তারা কিনেছে ভারত রাষ্ট্র সমিতি (৮১ কোটি), কংগ্রেস (২৪ কোটি) ও তৃণমূল (১৬ কোটি)-এর জন্য। মোট ৮টি রাজনৈতিক দলের জন্য বন্ড কিনেছে তারা।

    বন্ডের পিছনে সবচেয়ে বেশি টাকা ঢেলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সার্বিক ভাবে দ্বিতীয় এবং ওষুধ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ডক্টর রেড্ডি’জ় ফার্মা। তাদের কেনা ৮৪ কোটি টাকার বন্ডের টাকা পেয়েছে ভারত রাষ্ট্র সমিতি (৩২ কোটি), তেলুগু দেশম পার্টি (১৩ কোটি), বিজেপি (২৭ কোটি), কংগ্রেস (১১ কোটি) ও শিবসেনা (১ কোটি)। ফার্মা কোম্পানির মধ্যে এর পরেই যারা সবচেয়ে বেশি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত সংস্থা হলো সিপলা, জাইডাস হেলথকেয়ার, মাইক্রো ল্যাবস, অ্যালেম্বিক, গ্লেনমার্ক, টরেন্ট, অরবিন্দ ফার্মা, ভারত বায়োটেক, সিরাম ইনস্টিটিউট, দিভি’জ় ল্যাব, ইনটাস, ম্যানকাইন্ড, ন্যাটকো, পিরামল, সান ফার্মা, অজন্তা ফার্মা, প্যানাসিয়া বায়োটেক।

    স্বাস্থ্য মহলের একটা বড় অংশেরই পর্যবেক্ষণ, অধিকাংশ ওষুধ কোম্পানির ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, একটি নাম কমন— বিজেপি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন মহল এই বন্ডের বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রশ্নে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের বক্তব্য, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে লাগাতার যে খরচ বেড়ে চলেছে, তার পিছনে রয়েছে ওষুধের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি। অথচ, আইন থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগে অনীহা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। অর্থাৎ, ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে উদাসীন কেন্দ্র।

    অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার সরাসরি অভিযোগ, ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (এনপিপিএ) নামে ওষুধের যে কেন্দ্রীয় মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে, তারা কেন বার বার ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার (ডিপিসিও)-এর মতো আইনে বদল এনে গত চার-পাঁচ বছরে মূল্য নিয়ন্ত্রনের কাজ শিথিল করেছে? এর উত্তর জনতার জানা প্রয়োজন।’ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি কৌশক চাকীও একমত। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের শাসকদলের তহবিলে বন্ডের টাকা ঢেলে ওষুধ কোম্পানিগুলি পরোক্ষে সরকারি নীতি প্রভাবিত করেছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ঢিলেঢালা হয়ে যাওয়ার ফাঁকে তারা ব্যবসা করেছে চুটিয়ে। আর কুফল ভুগে চলেছে জনতা।’
  • Link to this news (এই সময়)