সারাদিন তুমুল দোল খেলার পর ভাং মেশানো একগ্লাস ঠান্ডাইয়ে গলা ভেজানোই হোক কিংবা দোল খেলার আগে ভাংয়ের সরবতে চুমুক দিয়ে আমেজে দোল খেলা, দুটোতেই যে খায় তার হেলদোল থাকে ন। বর্তমান জীবনের কচকচানির উপরে উঠে বিন্দাস কিছু মুহুর্ত সেলিব্রেট করার আস্থাভাজন জিনিসের নামই হল ভাং। আদি অনন্ত কাল ধরে চলে আসা ভাং মিশ্রিত ঠান্ডাই হোলির প্রধান আকর্ষণ। এমনকি জেনারেশন ওয়াইয়ের কাছেও ভাং ‘কুল’ জিনিস।কিন্তু কেন? গাঁজার নাম শুনলেই নাক সিটকে যায়। অথচ ভাংয়ের আবেদন স্বীকৃত। ভাং বানানো হয় ক্যানাবিস অর্থাৎ গাঁজা গাছের পাতা থেকে। আর গাঁজা আসে একই গাছের বীজ অথবা বোঁটা থেকে। অথচ গাঁজা খাওয়র কথা উঠলেই রে রে করে তেড়ে আসে হাজারটা নিষেধাজ্ঞা। এমনকি আছে অনেক আইনি বাধাবিপত্তিও। কিন্তু ভাংয়ের ক্ষেত্রে এরকম কিছুই নেই। উল্টে সমাজ সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরেই ভাংয়ের মাহাত্ম্য এবং আবেদন দুইই বেশ স্বীকৃত।
ভাংয়ের রঙ আর রূপ অনেক। কতরকম ভাবে খাওয়ার অপশন আছে। এলাচের সুমিষ্ট আস্বাদের সঙ্গে লস্যির মতই হোক কিংবা কুলফি মালাই আকারেই হোক খাওয়া যায় অনেকভাবেই। চাইলে চকোলেট, কেক, কুকিজে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
একযাত্রায় পৃথক ফল কেন?গাঁজা এবং ভাং আসলে এক মায়ের দুই সন্তান। কিন্তু তা হলেও একযাত্রায় পৃথক ফল কেন? এর পেছনে রয়েছে ভারতের ১৯৮৫ সালের নারকোটিক্স ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্স আইন। গাঁজা গাছের উপাদান সেবন আইনসিদ্ধ কিনা তা নিয়ে বিতর্ক বহুদিন আগে থেকেই ছিল। তবে আশির দশক থেকে গাঁজা সেবন ও অপরাধ প্রবণতাকে এক করে দেখা হয়। এর পেছনের অন্যতম কারণ খানিকটা মার্কিন প্রভাবও বটে। এমত অবস্থায় ভারতে আইন পাশ হয়ে যায়। তবে আইনে খুব বুদ্ধি খাটিয়ে লেখা হয়, গাছের ফুল, ফল, বীজ সবকিছু নিষেধাজ্ঞার আওতায় গেলেও গাছের বাদ রাখা হয় গাছের পাতাকে। এর ফলে আইনের হাত থেকে জোর বাঁচা বেঁচে যায় ভাং।
সূত্রের দাবি, যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই ভাংকে বাদ রাখা হয়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে ভাঙের ব্যবহার এবং সেবন দুইই অত্যন্ত প্রাচীন। অথর্ববেদেও ভাংয়ের নজির উপস্থিত। মধ্যভারতের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গাঁজা পাতা গুঁড়ো করে বা পিষে ঠান্ডা জল বা দইয়ের সঙ্গে খাওয়ার চল আছে।