মাদক পাচারে যুক্ত বিজেপি প্রার্থী! সোশাল মিডিয়ায় তথ্য ফাঁস করে ব্যাখ্যা চাইল তৃণমূল
প্রতিদিন | ২৬ মার্চ ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: বিস্তর টানাপোড়েনের পর দু’দফায় বাংলায় ৩৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি (BJP)। দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, কোন্দল কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত রবিবার রাতে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে গেরুয়া শিবির। তার পরে থেকে সেই তালিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। নানা সময় বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত অনেকেই ভোটে প্রার্থী হন দলের অনুমোদনক্রমে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলে মামলা দায়েরের অভিযোগ তোলা হয়ে থাকে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে বারাসত (Barsat)কেন্দ্রে ঘোষিত বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের অতীত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভিনদেশ থেকে ভারতে মাদক পাচারে (Drug smuggling) অভিযুক্ত হয়ে ১০ বছর কারাবাসের শাস্তি পেয়েছিলেন। প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই এই ব্যক্তিই সেই অভিযুক্ত স্বপন মজুমদার কি না, প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। নিজেদের X হ্যান্ডলে বিষয়টি নিয়ে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এবং দলের কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী।
এক্স হ্যান্ডলে স্বপনের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রিপোর্ট সম্বলিত সংবাদপত্রের একটি কাটিং পোস্ট করেছেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার সময় হলফনামায় স্বপন মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলার খতিয়ান উল্লেখ করা হয়েছে সেই পোস্টে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ইনিই কি এবার বিজেপির বারাসতের প্রার্থী? যদি হন, তাহলে তিনি মাদককাণ্ডে ঘোষিত অপরাধী। বিজেপি ব্যাখ্যা দিক।’’ তৃণমূলের আরও দাবি, গেরুয়া শিবির রাজনৈতিক দৈন্যের কারণে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু একজন মাদক পাচারকারীকে প্রার্থী করে তারা কী বার্তা দিতে চাইছে? এভাবে কি মাদক পাচারকে (Drug Smuggling) বৈধতা দিতে চাইছে বিজেপি? তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘দেখুন তো এই হেরোইন পাচারকারী বিজেপি নেতাই ১৭-বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী স্বপন মজুমদার কি না? এ তো রীতিমতো ইন্টারন্যাশনাল ড্রাগ ডিলার তাহলে! অসম পুলিশ মাদক পাচারের অভিযোগে একে গ্রেপ্তার করেছিল।’’
স্বপন মজুমদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মায়ানমার থেকে মাদক এনে অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর-সহ গোটা দেশে তা পাচার করতেন। এই অভিযোগে ২০১৭ সালের মার্চে তাঁকে গ্রেপ্তার করে অসম পুলিশ। গুয়াহাটি-কামরূপ জিআরপি মাদক আইনের ২১/সি ধারায় এফআইআর করে। মামলা নম্বর ১০৫/২০১৭। দায়রা আদালতে দোষী সাব্যস্ত (Convicted) হওয়ার পর তাঁর দশ বছরের কারাদণ্ড হয়। সেসময় প্রকাশিত সংবাদে স্বপন যে বিজেপি নেতা, তাও উল্লেখ করা হয়েছিল। তার পরও ২০২১-এ বিধানসভা ভোটে (WB Assembly Election 2021) তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় নিজের শাস্তির কথাও স্বপন মজুমদার উল্লেখ করেছিলেন। যেহেতু অভিযোগ দায়ের থেকে শুরু করে শাস্তি, সবটাই হয়েছে অসমে, তাই বাংলার তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগও বিজেপি তুলতে পারছে না।
শুধু মাদক পাচার নয়, স্বপন মজুমদার নানা সময়ে নানা মন্তব্য করে বিতর্ক ছড়িয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। গাইঘাটায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে তিনি ক্ষমতায় এলে তৃণমূল নেতাদের এনকাউন্টার করার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁর মন্তব্য ছিল, “শাসকদলের যে নেতারা অবৈধভাবে ফুলেফেঁপে উঠছে এবং মানুষকে চমকাচ্ছে, পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়াচ্ছে, তাদের বলতে চাই, আগামিদিনে এই পুলিশ দিয়েই তাদের এনকাউন্টার করাব।” তাঁর এই মন্তব্যে সেসময় নিন্দার ঝড় উঠেছিল সর্বত্র। এবার সেই ব্যক্তিকেই বারাসতে তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। এনিয়ে তৃণমূল নেতা তথা বনগাঁ কেন্দ্রের প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের বক্তব্য, “এটাই বিজেপির সংস্কৃতি। ওদের কাছে প্রার্থী নেই। তাই স্বপন মজুমদারকে প্রার্থী করতে হয়েছে।”