• সরকারি কর্মীদের জীবনশিক্ষার পাঠ, নবান্নে আসছেন বিহারের বাঙালিবাবু
    প্রতিদিন | ২৬ মার্চ ২০২৪
  • গৌতম ব্রহ্ম: আরও বেশি পেশাদার হোক সরকারি অফিসার ও কর্মীরা। তাই বিহার থেকে ‘লাইফ স্কিল ট্রেনার’ নিয়ে আসছে নবান্ন। ঘরে বাইরে চাপ সামলে কীভাবে জনগণকে উন্নততর পরিষেবা দেওয়া যায়, তাই শেখাবেন সেই ট্রেনার। দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়। আপাদমস্তক বাঙালি।

    এক্সএলআরআই-এর এই প্রাক্তনীর বাড়ি বিহারের ভাগলপুরে। এই দেবজ্যোতিকেই ?লাইফ স্কিল ট্রেনিং? দিতে কলকাতায় নিয়ে আসছে রাজ্যের সমবায় দপ্তর। এই প্রথম নয়, আগেও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অতিমারীর সময়, ভারচুয়ালি। এবার সশরীরে আসছেন। সেনাবাহিনী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিয়মিত ট্রেনিং দেন দেবজ্যোতি। ৮৮টি সেনা ক্যাম্পে লাইফ স্কিল ট্রেনিং দিয়েছেন। আর্টিকল ৩৭০ ওঠার আগে সেনার ডাকে কাশ্মীরে গিয়ে ছাত্র-যুবদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। স্টেট ব্যাঙ্কে ওয়ার্কশপ লেগেই আছে। কিন্তু নিজের পূর্বপুরুষের রাজ্যেই সেভাবে ক্যাম্প করানোর সুযোগ হয়নি। এবার নিজভূমে জীবন শিক্ষা শেখানোর ডাক।

    স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত দেবজ্যোতি। জানালেন, “করোনার সময় টাইম ম্যানেজমেন্ট ও কাস্টমার ডিলিং নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তবে ভারচুয়ালি। এবার সশরীরে আমন্ত্রণ। বাঙালি হয়ে বাংলায় কাজ করার আনন্দই আলাদা।” বাংলায় অবশ্য দেবজ্যোতি আসেননি তা নয়। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের ডাকে কয়েকবার শান্তিনিকেতনে এসেছেন বক্তৃতা করতে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনও দপ্তর থেকে সরাসরি আমন্ত্রণ এই প্রথম। দেবজ্যোতি জানালেন, সিবিএসই স্কুল পাঠ‌্যক্রমে লাইফ স্কিল বাধ্যতামূলক করেছে। ইউজিসি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দিয়েছে, লাইফ স্কিল নিয়ে পড়ুয়াদের ক্লাস করাতে। সেখানে সরকারি কর্মীরাই বা ব্রাত্য থাকে কেন? আসলে আমাদের ঘরে বাইরে প্রচুর চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়। সেই সব ঝড়ঝাপটা ম্যানেজ করার বৈজ্ঞানিক কৌশল আছে। পেশাদারিত্বের সঙ্গে মানবিকতাকে মেশাতে হবে। তবেই সার্থক হবে জীবন। আর সরকারি কর্মীদের লাইফ স্কিল বাড়লে, জনপরিষেবার মানও উন্নত হতে বাধ্য। দেবজ্যোতির পর্যবেক্ষণ, ?জীবনে কেবল সফল হলে চলবে না। সার্থক হওয়া প্রয়োজন। লাইফ স্কিল জীবনকে সার্থকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে। মানুষের মধ্যে থেকে এক নতুন মানুষকে টেনে বের করে।”

    ভাগলপুরে দেবজ্যোতিদের কয়েক পুরুষের বাস। বাড়ির আশপাশে মণিমুক্তো ছড়ানো স্মৃতি। সাহিত্যিক বনফুলের বাড়ি। এখান থেকেই বহু কালজয়ী উপন্যাসের জন্ম দিয়েছেন বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মামার বাড়িও ঢিল ছোড়া দূরত্বে। এমন ঘেরাটোপে থাকার জন্যেই বোধহয় ছোট থেকেই প্রখর জীবনবোধ। তাই সেনা থেকে ব্যাঙ্ক, পুলিশ থেকে সরকারি দপ্তর, সবাই আমন্ত্রণ জানায় দেবজ্যোতিকে। সব ঠিক থাকলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই কলকাতায় আসবেন এই বিহারী বাঙালিবাবু।
  • Link to this news (প্রতিদিন)