Baltimore Bridge Collapse : কেন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বালটিমোর ব্রিজ? কারণ ব্যাখ্যা বিশেষজ্ঞের
এই সময় | ২৭ মার্চ ২০২৪
সেতুর স্তম্ভে সজোরে ধাক্কা পণ্যবাহী জাহাজের। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল বিশ্বখ্যাত আমেরিকার বালটিমোর ব্রিজ। মেরিল্যান্ডের এই সেতুটি ফ্রান্সিস কি স্কট ব্রিজ নামেও সুপরিচিত। মঙ্গলবার গভীর রাতে প্যাটাপস্কো নদীর উপর ঐতিহ্যবাহী এই ব্রিজ ভেঙে পড়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ভিডিয়ো, যা দেখে শিউরে উঠছেন দর্শক। সেতু বিপর্যয়ের জেরে হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। এরই মধ্যে হাওয়ায় উড়ছে দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতার আশঙ্কা নিয়ে জল্পনাও। জেনে নেওয়া যাক কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
কী কারণে ভেঙে পড়ল বালটিমোর ব্রিজ?এই প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'যে পণ্যবাহী জাহাজটি ওই ব্রিজের নীচ দিয়ে যাচ্ছিল, তা সম্ভবত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুতে ধাক্কা মেরেছে। আচমকা আঘাতের অভিঘাত সামলাতে ব্যর্থ হয় সেতুর 'পায়ার' বা স্তম্ভ। সংঘর্ষের জেরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বালটিমোর সেতু। যদিও এক্ষেত্রে খতিয়ে দেখতে হবে জাহাজটিতে কোনওরকম যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না। এখনও পর্যন্ত আমরা তার নির্দিষ্ট উত্তর জানি না। তবে প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এটি সেতুর স্তম্ভ এবং জাহাজের মধ্যে একটি বড়সড় সংঘর্ষ।'তবে একটি স্তম্ভে ধাক্কার জেরে কি গোটা ব্রিজ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে? উত্তরে দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ব্রিজগুলি সাধারণত স্তম্ভের উপর রোলার সাপোর্টের সাহায্যে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে ভূমিকম্প হলেও সেতু ভেঙে পড়ে না। কিন্তু, এক্ষেত্রে জাহাজের ধাক্কায় সম্ভবত স্তম্ভটি ভেঙে গিয়েছিল এবং তার জেরে রোলার সাপোর্টও সরে যায়। ফলে এই বিরাট মাপের দুর্ঘটনা ঘটে।' এর পিছনে রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ত্রুটিজনিত কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন স্থাপত্যবিদ।
একই মত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসেরও। এই সময় ডিজিটালকে তিনি বলেন, 'ব্রিজের ভারবাহী পায়ার অথবা স্তম্ভ যে অংশে থাকে এবং জাহাজ যে পথে যাতায়াত করে, দু'টির জোন সম্পূর্ণ আলাদা হওয়ার কথা। অনিয়ন্ত্রণজনিত কোনও কারণে ভারবাহী স্তম্ভে সজোরে ধাক্কা দেয় জাহাজটি, তার জেরেই এই বিপর্যয়। প্রত্যেকটি স্তম্ভ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। একটিও যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে বাকি স্তম্ভগুলির ভারসাম্যও নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। আচমকা ধাক্কা খেয়ে সেতুর ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। আমার মতে, এটি গুরুতর নিরাপত্তা ব্যবস্থাজনিত ত্রুটি।' অধ্যাপকের সংযোজন, 'রবীন্দ্র সেতু কিংবা দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজের নীচে কোনও স্তম্ভ নেই। আবার দক্ষিণেশ্বরে নিবেদিতা সেতুর নীচে স্তম্ভের সারি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জাহাজ চলাচল করলে সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। জাহাজ চলাচলের জন্য আলাদা জোন নির্দিষ্ট থাকে। ফলে বালটিমোর ব্রিজে যা হল, তা অপারেশনাল ত্রুটি বলা চলে।'
কবে তৈরি হয়েছিল বালটিমোর ব্রিজ?বালটিমোরের ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে। ১৯৭৭ সালের ২৩ মার্চ এই সেতু জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। বালটিমোর বন্দর যাওয়ার সুড়ঙ্গে যান চলাচলের চাপ কমানোর জন্যই এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুটি নির্মাণে খরচ পড়েছিল ৬০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
একাধিক প্রাণহানির আশঙ্কাবালটিমোর সেতুতে যে মালবাহী জাহাজটি ধাক্কা মারে, সেটি আদতে সিঙ্গাপুরের। ধাক্কা মারার কয়েক মুহূর্ত আগে জাহাজটিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। অনুমান করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির জেরেই নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। জাহাজে ২২ জন ক্রু ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ইউ এস কোস্ট গার্ড। জানা গিয়েছে, গভীর রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেতু থেকে ছিটকে পড়ে প্যাটাপস্কো নদীর জলে ভেসে গিয়েছে ৭-৮টি গাড়ি। দুর্ঘটনার পরেই জোরকদমে চলেছে উদ্ধারকাজ। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় অন্তত ২০ জন যাত্রী জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে।