• Arvind Kejriwal : কেজরির ফেয়ার ট্রায়াল চায় বাইডেন প্রশাসন
    এই সময় | ২৭ মার্চ ২০২৪
  • নয়াদিল্লি: দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারিকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নয়াদিল্লি। জার্মানির পরে এ বার আমেরিকা। ওয়াশিংটনে বিদেশ দপ্তরের এক শীর্ষ মুখপাত্র সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নজরে রাখা হচ্ছে। কেজরিওয়ালের ব্যাপারে স্বচ্ছ, যথাযথ, নিরপেক্ষ ও দ্রুত আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে আমরা আশা রাখছি।’তবে জার্মানির ক্ষেত্রে যেমন নয়াদিল্লি তড়িঘড়ি ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এই ধরনের মন্তব্য অবাঞ্ছিত’ বলে প্রতিবাদ করেছিল, মঙ্গলবার রাত অবধি অবশ্য আমেরিকার সেই একই ধরেনর মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি মোদী সরকার। তবে কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সরকার মুখে যাই-ই বলুক, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা ভালো হচ্ছে না ভারতের। অন্য দিকে, কেজরিকে জেলে পুরেও তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব এখনও কাড়তে পারেনি বিজেপি। তিনি ইডি হেফাজত থেকেই ‘প্রশাসন সামলাচ্ছেন।’ এ দিন দিয়েছেন দ্বিতীয় নির্দেশ। এটাও নজিরবিহীন। সিএম তো নন-ই, এমনকী কোনও মন্ত্রীও জেল থেকে কখনও সরকার চালাননি।

    গত রবিবার দিল্লির জল পরিষেবা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি লিখেছিলেন মন্ত্রী আতিশিকে। এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির স্বাস্থ্য পরিষেবা ও মহল্লা ক্লিনিক নিয়ে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ তা সাংবাদিক বৈঠকে পড়ে শোনান —‘জেলবন্দি থাকলেও দিল্লির মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী। আমাকে দিল্লির মহল্লা ক্লিনিকের সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দিল্লির কিছু হাসপাতালে ও মহল্লা ক্লিনিকে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও আবার ওষুধ অমিল। দিল্লির লক্ষাধিক গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য এই মহল্লা ক্লিনিকের উপর নির্ভরশীল। তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’

    বস্তুত এই মহল্লা ক্লিনিকে নানা অনিয়ম, ভুয়ো প্যাথলজিক্যাল টেস্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। সেই আবহে এই নির্দেশের তাৎপর্য আলাদা বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ভরদ্বাজকে পাঠানো কেজরির এই নির্দেশকে অবশ্য জেলের মধ্যে থেকে কেজরিওয়ালের ‘ভাঁওতা’ বলে দাবি করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের নেতা হরিশ খুরানা বলেন, ‘জেলে থেকে ভাঁওতা দিচ্ছেন উনি। হঠাৎ দিল্লির মানুষের জন্য ওঁর ভালোবাসা উথলে উঠেছে। আসলে উনি চাইছেন ভোটের আগে জেল থেকে মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে।’ তাঁকে ‘ক্ষমতালোভী’ মন্তব্য করে ফের একবার পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপি।

    এ দিকে তাঁর গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়াল যে মামলা করেছেন, তার শুনানি হবে আজ, বুধবার। আদালতে গ্রেপ্তারি ও রিমান্ড আদেশ দু’টিই বেআইনি বলে দাবি করা হয়েছে। তাই তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন কেজরিওয়াল৷

    এ দিকে, কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে৷ মঙ্গলবার আপের নেতা-মন্ত্রী-কর্মী-সমর্থক সকলেই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন ঘেরাও করার চেষ্টা করেন৷ যদিও দিল্লি পুলিশ তাঁদের রাস্তাতেই আটকে দেয়। দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল ধস্তাধস্তি হয়। এই খণ্ডযুদ্ধে পুলিশ আটক করে পাঞ্জাবের আপ সরকারের মন্ত্রী হরজ্যোত সিং বাইন-সহ বেশ কিছু আপ কর্মী-সমর্থককে৷ দিল্লির প্যাটেল চক মেট্রো স্টেশন থেকে তাঁদের বাসে করে তুলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ বন্ধ ছিল একাধিক মেট্রো স্টেশনের আউটলেটও। যানবাহন চলাচলও দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যাহত হয়। ট্র্যাফিক জ্যামে নাজেহাল হয়ে যায় রাজধানী।

    কেজরির গ্রেপ্তারির দিন থেকেই সরব হয়েছে ইন্ডিয়া ব্লক। আগামী রবিবার ৩১ মার্চ দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে তারা। লোকসভা নির্বাচনের আগে ইডি, সিবিআই-র মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির ব্যবহারের মাধ্যমে একের পর এক বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে — এই অভিযোগেই সেদিনের সমাবেশ।

    এর প্রস্তুতিতে দিল্লিতে আপ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ‘ডোর টু ডোর’ প্রচার — গত পাঁচ বছরে কী ভাবে বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে বারবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি ঝাঁপিয়ে পড়ে বিরোধী নেতাদের কণ্ঠরোধ করেছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে দিল্লিবাসীকে রামলীলা ময়দানে যেতে অনুরোধ করেছেন আপ নেতা-কর্মীরা। আপ নেতা ও দিল্লি সরকারের মন্ত্রী গোপাল রাইয়ের দাবি, ‘কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে ৩১ মার্চ রামলীলা ময়দানের সমাবেশ ভেস্তে দেওয়ার৷ তবে তারা সফল হবে না, কারণ সে দিন আমাদের সমর্থনে, ন্যায়ের সমর্থনে পথে নামবেন লাখ লাখ দিল্লিবাসী৷’

    রামলীলা ময়দানের ওই সমাবেশে প্রথমে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পরে তৃণমূল সূত্রে বলা হয়েছে, সেদিনই কৃষ্ণনগরে নির্বাচনী জনসভায় ব্যস্ত থাকার কারণে দিল্লি যেতে পারবেন না তিনি। তবে, তাঁর জায়গায় উপস্থিত থাকবেন দলের শীর্ষ স্থানীয় কোনও নেতা। শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও অংশ নিতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। উপস্থিত থাকার কথা শরদ পাওয়ার, সীতারাম ইয়েচুরি-সহ ইন্ডিয়া জোটের একাধিক নেতৃত্বের।

    আম আদমি পার্টির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ পাঠক দাবি করেছেন, ‘প্রায় ১৪,০০০ বুথ রয়েছে দিল্লিতেই। প্রতিটি বুথ থেকে ১০ জন করে লোক নিয়ে রামলীলা ময়দানে পৌঁছনো লোকের সংখ্যা হবে ১.৫ লাখ।’ দলের পক্ষ থেকে কর্মী সমর্থকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘ম্যায় ভি কেজরিওয়াল’ পোস্টার গাড়িতে বা হাতে নিয়ে রামলীলা ময়দানে যেতে।
  • Link to this news (এই সময়)