• প্রয়াত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ মহারাজ
    এই সময় | ২৭ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়, বেলুড়: প্রয়াত হলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষোড়শ অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। মঙ্গলবার রাত ৮.১৪ মিনিটে দক্ষিণ কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ওই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন প্রবীণ সন্ন্যাসী। গত ৩ মার্চ রাতে আচমকা শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রেসিডেন্ট মহারাজকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। তার পর থেকে টানা ২৩ দিন তিনি ভেন্টিলেশন সাপোর্টেই ছিলেন।বেলুড় মঠের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছ, প্রয়াত সঙ্ঘাধ্যক্ষের পার্থিব শরীর বেলুড় মঠের সাংস্কৃতিক ভবনে শায়িত থাকবে। বুধবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। সন্ন্যাসীর নশ্বর শরীরের শেষকৃত্য শুরু হবে বুধবার রাত ৯টায়। বেলুড়মঠের নিজস্ব শ্মশানেই শেষকৃত্য হবে। তার আগে তাঁর পার্থিব দেহ দর্শনের জন্য মঙ্গলবার সারা রাত ভক্তদের জন্য খোলা রাখা হয় বেলুড় মঠের দরজা। অধ্যক্ষ মহারাজের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    অধ্যক্ষ মহারাজের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ পরিচয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মোদী বলেন, '২০২০ সালে আমি বেলুড় মঠে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করি। কয়েক সপ্তাহ আগে কলকাতায় গিয়ে হাসপাতালেও তাঁকে দেখে এসেছিলাম।' নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মমতা লিখেছেন, 'তাঁর জীবদ্দশায় মহারাজ সারা বিশ্বের অগণিত ভক্তকে জ্ঞানের দিশা দেখিয়েছেন।' গত ১৮ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। পরে কিছুটা সুস্থ হলে সংক্রমণ এড়াতে তাঁকে নিয়ে রাখা হয় নরেন্দ্রপুরে। ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে।

    গত ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী মোদী কলকাতায় তাঁর কয়েকটি নির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে বিমানবন্দর থেকে সোজা সেবা প্রতিষ্ঠানের সাত তলার ৫০ নম্বর কেবিনে অসুস্থ প্রবীণ সন্ন্যাসীকে দেখে যান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হাসপাতালে অধ্যক্ষ মহারাজকে দেখে এসেছেন। ১৯২৯ সালে তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর জেলার আন্দামি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন স্বামী স্মরণানন্দ। খুব কম বয়সে নিজের মাকে হারান তিনি। ১৯৪৬ সালে স্কুলের পড়া শেষ করে মহারাষ্ট্রের নাসিকের কলেজে বাণিজ্যে শিক্ষা নেন।

    ১৯৪৯-এ মুম্বই যান তিনি। মাত্র ২০ বছর বয়সেই শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে মুম্বই রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের সপ্তম অধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দের কাছে দীক্ষা নেন ১৯৫২ সালে। যোগ দেন রামকৃষ্ণ মিশনের মুম্বইয়ের আশ্রমে। ১৯৫৬ সালে ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে সন্ন্যাস লাভ করেন। সন্ন্যাসজীবনে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে সারা দেশ ও দুনিয়ার বহু জায়গায় গেলেও জীবনের সিংহভাগ সময়ই তিনি কাটিয়েছেন কলকাতায়। ১৯৫৮ সাল থেকে স্মরণানন্দজি একটানা ১৮ বছর অদ্বৈত আশ্রমের মায়াবতী আশ্রম ও কলকাতা কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন।

    বিবেকানন্দ প্রবর্তিত ইংরেজি পত্রিকা 'প্রবুদ্ধ ভারত'-এর সম্পাদকের দায়িত্বও সামলেছেন কয়েক বছর। এরপর ১৯৭৬ সালে বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠের সম্পাদক হন। প্রায় ১৫ বছর সেই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর সময় সারদাপীঠের শিক্ষার মান ও গ্রামীণ এলাকায় তাদের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায় উল্লেখযোগ্য ভাবে। ১৯৮৩ সালে রামকৃষ্ণ মিশনের গভর্নিং বডির সদস্য হন তিনি।

    ১৯৯১ সালে চেন্নাই রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। পরবর্তী সময় সাধারণ সম্পাদক, সহ-অধ্যক্ষের পদে দায়িত্ব পালন করে ২০১৭ সালে পঞ্দশ অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দের প্রয়াণের পর ১৭ জুলাই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষোড়শ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন স্বামী স্মরণানন্দ। এ দিন বেলুড় মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ জানিয়েছেন, 'স্বামী স্মরণানন্দকে তাঁর আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সহজসরল জীবনযাত্রা ও দারুণ রসবোধের জন্য মনে রাখবেন তাঁর অগণিত ভক্ত। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হলো তা পূরণ হওয়ার নয়।'
  • Link to this news (এই সময়)