Indian Premier League : আইপিএল বেটিংয়ে দেড় কোটি ধার, আত্মঘাতী স্ত্রী
এই সময় | ২৭ মার্চ ২০২৪
বেঙ্গালুরু: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ভারতে প্রবল জনপ্রিয় একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। একদিকে তারকার ছড়াছড়ি, অন্য দিকে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। আইপিএল চলাকালীন যে কেউ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দল গড়তে পারেন। তা নিয়ে চলে নানা রকম খেলা, যা আদতে বেটিং। আমাদের দেশে যা নিষিদ্ধ। আর তাতে নাম লিখিয়েই দেড় কোটি টাকা দেনা করে ফেললেন বেঙ্গালুরুর সরকারি ইঞ্জিনিয়ার দর্শন বালু।আর অনলাইন ক্রিকেট বেটিংয়ের ভয়াবহ পরিণতির শিকার হলেন বালুর স্ত্রী রঞ্জিতা ভি। ঋণ পরিশোধ করার জন্য ক্রমাগত ওই পরিবারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছিল পাওনাদাররা। সেই মানসিক চাপ আর সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ঘটনাস্থল থেকে যে সুইসাইড নোট মিলেছে, তাতেও সে কথাই লেখা রয়েছে। সূত্রের খবর, দ্রুত অর্থ উপার্জনের জন্য বালু বাজার থেকে ৮৫ লক্ষ টাকা মোটা সুদে ধার করে বেটিংয়ে নিঃস্ব হয়ে যান।
চিত্রদুর্গর হোসাদুর্গয় রাজ্যের সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার বালু। তাঁর স্ত্রী রঞ্জিতা ভি। বছর ২৪-এর ওই তরুণী গত ১৯ মার্চ নিজের ঘরে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার পর পাওয়া সুইসাইড নোটে রঞ্জিতা তার স্বামীকে টাকা ধার দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেছেন। দর্শন ও রঞ্জিতার দু’বছরের একটি ছেলে রয়েছে। মাত্র তিন বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। সেই সময়ে রঞ্জিতা ছিলেন ফার্স্ট ইয়ারের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী। কিন্তু বিয়ের জন্য তাঁর আর পড়াশোনা এগোয়নি।
ইতিমধ্যেই ১৩ জন ব্যক্তি, যারা ঋণশোধের জন্য বালুদের নিয়মিত চাপ দিত ও হুমকি দিত, তাঁদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আত্মঘাতী রঞ্জিতার বাবা বেঙ্কটেশ। অভিযোগের ভিত্তিতে, ১৩ জন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে আইপিসি ৩০৬-ধারার অধীনে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাদের মধ্যে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিরা এখনও পলাতক।
বেঙ্কটেশ জানান, তাঁর জামাইকে বেশ কিছু ব্যক্তি ক্রিকেট বেটিংয়ের জন্য প্ররোচিত করেছিল। তিনি জানান, ঋণ নেওয়া ১.৫ কোটি টাকার বেশিরভাগটাই পরিশোধ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। যদিও সূত্রের খবর, বাজারে এখনও ৫৪ লক্ষ টাকা ধার রয়েছে বালুর। তাঁর কথায়, ‘আমার জামাই নির্দোষ। সে ক্রিকেট বেটিং করতে ইচ্ছুক ছিল না। কিন্তু কিছু ব্যক্তি তাঁকে প্ররোচিত করে এবং বলে এটা চটজলদি বড়লোক হওয়ার সহজ উপায়। তারা এই বেটিং-এর জন্য টাকা জোগান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরিবর্তে তাঁর কাছ থেকে কিছু ব্ল্যাঙ্ক চেক নেওয়া হয়েছিল।’
যদিও পুলিশের দাবি, বালু গ্যাম্বলিং অ্যাডিক্ট। সেটা তাঁর স্ত্রীও জানতেন। রঞ্জিতা যখন বুঝতে পারেন ‘মিটার বাড্ডি’-র মাধ্যমে বিরাট অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছেন বালু, তিনি তখন থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। এমনকী দু’ই বাড়ির সকলে একসঙ্গে বসে পাওনাদারদের সঙ্গে কথাও বলেন ও কথা দেন ধাপে ধাপে পুরো টাকাই শোধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি। বালুর নেশা আরও বাড়ে। বহু আত্মীয়-বন্ধুরা জেনে যেতে থাকেন। তাতে রঞ্জিতার ডিপ্রেশন বেড়ে যায় বহুগুণ। অবশেষে নার্চ মাসের ১৯ তারিখ আত্মহত্যা করেন তিনি।
বেঙ্কটেশ বলেন, ‘২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বালু অনলাইন ক্রিকেট বেটিংয়ে কিছু অর্থ বাজি ধরেছিলেন। কিন্তু সেই বাজি ধরে লোকসানের সম্মুখীন হয়। এরপর থেকেই ওই ব্যক্তিরা বালুকে অবিলম্বে তাদের কাছ থেকে ধার নেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিল।’
সূত্রের খবর, ২০২১ থেকেই আইপিএল বেটিং-এ যুক্ত ছিলেন বালু এবং প্রতিবারই বিরাট অঙ্কের টাকা বাজি ধরেও ক্ষতির মুখে পড়েন। যদিও তাতে না থেমে তিনি বাজার থেকে টাকা ধার করে বেটিং করতে শুরু করেন। যেখানে তাঁর প্রায় ১.৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, আইপিএলের সময়ে ফুলেফেঁপে ওঠে ‘মিটার বাড্ডি’ মার্কেট। বালু সেখান থেকেই লোন নিতেন। এখানে দিনের বা ঘণ্টার হিসেবে ধার দেওয়া হতো মোটা সুদের বিনিময়ে। যেমন, কেউ যদি ১০০০ টাকা ধার নেন, তাঁকে দেওয়া হবে ৯০০ টাকা। আর সেদিনই সন্ধের মধ্যে ১০০০ টাকা ঋণদাতাকে ফেরত দিতে হবে। যদি কেউ ওই সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারেন, তা হলে পরদিন তাঁকে ১১০০ টাকা দিকে হবে! বালুকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ। তাঁর থেকে অনেক কিছু জানা যাবে বলে তাঁদের অনুমান।