এই সময়: ভারতের বেকার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি যুবক। সম্প্রতি এক রিপোর্টে এমন তথ্যই দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)। ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (আইআইএইচডি) সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রকাশিত ‘দ্য ইন্ডিয়ান এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে দশম শ্রেণি বা তার বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে এমন কমবয়সী বেকার ব্যক্তির হার মোট বেকারের ৬৫.৭ শতাংশ ছিল।২০২০ সালে যা মোট বেকার সংখ্যার ৩৫.২ শতাংশ ছিল। কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণ এই রিপোর্ট উন্মোচন করেন। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। বুধবার তাঁর এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডেলে এক হাত নিয়েছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
তিনি বলেন, ‘মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন কেন্দ্র বেকারত্বের সমস্যা দূর করতে পারবে না। যদি এটি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কথা হয়ে থাকে তা হলে আমাদের দৃঢ় ভাবে বিজেপিকে বিদায় নেওয়ার কথা বলতে হবে।’ পুরোপুরি বেকার বা যোগ্যতার তুলনায় নিম্নমানের কাজ করছেন এমন যুবকের সংখ্যা ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বেড়ে গেলেও করোনাভাইরাস অতিমারীর বছরগুলিতে তা কমে যায় বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বেকারদের মধ্যে ৭৬.৭ জন শিক্ষিত যুবক এবং ৬২.২ শতাংশ শিক্ষিত যুবতী। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশে বেকারত্ব কমলেও কোভিড অতিমারীর সময় এই হার আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই সময়ে কাজ হারান বহু সংখ্যক শিক্ষিত এবং পেশাদার মানুষ।
আইএলও এবং আইআইএইচডি তাদের যৌথ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, স্নাতক স্তরের শিক্ষা অর্জন করেও চাকরি পাননি এমন যুবকের সংখ্যা সব থেকে বেশি। মহিলা স্নাতকরা এর ফলে সব থেকে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। ২০২২ সালে নিয়োগ, শিক্ষা বা কোনও ধরনের প্রশিক্ষণে যোগ দেননি এমন মহিলার সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ ছিল।
পুরুষদের মধ্যে ৯.৮ শতাংশ যেখানে এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল না, সেখানে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৪৮.৪ শতাংশ।
কমবয়সী পুরুষদের তুলনায় কমবয়সী মহিলাদের মধ্যে নিয়োগ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার সংখ্যা অনেক কম ছিল। ২০-২৪ বছর এবং ২৫-২৯ বছর বয়সের কমবয়সী পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি দেখা গিয়েছে। তুলনায় ১৫-১৯ বছর বয়সের পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে কম দেখা গিয়েছে বেকারত্বের হার।
নিজস্ব ব্যবসা বা কাজ এবং অনিয়মিত কাজ এখনও দেশের যুব সমাজের একটা বড় অংশের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে। ২০০০-২০২২ সালের মধ্যে এ ধরনের কাজের প্রবণতা সব থেকে বেশি দেখা গিয়েছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ভারতের মোট কর্মীর মধ্যে নিয়মিত চাকরির তুলনায় অনিয়মিত চাকরির সঙ্গে যুক্ত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ ছিল। যা ২০১৮ সালের পর থেকে কমলেও ২০২০ সালের পর থেকে ধারাবাহিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ফলে জীবনধারণের ক্ষেত্রে সুরক্ষাহীনতার বড় ধরনের প্রভাব দেখা গিয়েছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সব থেকে উদ্বেগজনক যে বিষয় রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো দীর্ঘদিন বেতন বৃদ্ধি না পাওয়া। পণ্যের খুচরো ও পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি বাড়লেও সেই অনুপাতে ভারতীয় কর্মীদের বেতন হার বাড়েনি। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বা নিয়মিত কাজের বদলে চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ বেড়েছে। ২০১২-২২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কর্মীদের বেতন হয় এক থেকেছে, না হয় তা কমেছে। ২০০০-২০১৮ সালের মধ্যে লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট, ওয়ার্কার পপুলেশন রেশিও এবং বেকারত্বের হার ক্রমাগত খারাপের দিকে গেলেও ২০১৯ সালের পর থেকে পরিস্থিতিতে কিছুটা বদল আসে।
ভারতকে এই সমস্যা থেকে বাঁচাতে নতুন কাজ তৈরি, কাজের গুণমান বাড়ানো, শ্রম বাজারের বৈষম্য দূর করা, দক্ষ কর্মী তৈরিতে উদ্যোগ এবং কর্মীদের অজ্ঞানতা কমানোর জন্য উপযুক্ত নীতি তৈরির কথা বলা হয়েছে আইএলও রিপোর্টে।