• CPIM: লোকসভায় আসন বাড়বে বামেদের! দাবি ইয়েচুরির, কোন কোন এজেন্ডায় শান লালপার্টির?
    এই সময় | ২৮ মার্চ ২০২৪
  • দুয়ারে লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচনে জোরদার প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলি। এপ্রিল মাস থেকে দলগুলির প্রচারের বহরও বাড়বে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে নিজেদেরকেও প্রস্তুত থাকতে হবে। আর তার জন্যই নতুন কৌশল নিল সিপিএম। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফলের আশা দেখছে বামেরা। বামপন্থীরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এজেন্ডা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছেন সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বেশ কয়েকটি ইস্য়ু তথা ৩৭০ ধারা, সিএএ, কৃষি আইন, নির্বাচনী বন্ডকে হাতিয়ার করে রণকৌশল ঠিক করেছে বাম শিবির।এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়েচুরির দাবি, 'দক্ষিণের দুর্গে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না ভারতীয় জনতা পার্টি।' তাঁর মতে, বিজেপির কাছে এবারও দক্ষিণ জয়ের স্বপ্ন অধরাই থাকবে।' উল্লেখ্য, এবারের লোকসভা ভোট বামেদের জন্য কার্যত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সেই তাগিদ সামনে রেখেই নির্বাচনের কৌশল সাজাচ্ছে সিপিএম। সীতারামের আশা, ২৪-এর নির্বাচনে বামেদের রেজাল্টের উন্নতি হবে। তাঁর কথায়, 'বামেদের জন্য কতগুলি আসনে জয়ী হওয়ার থেকে বড় কথা তারা এবার কি এজেন্ডা নির্ধারণ করেছে? গত পাঁচ বছরে বিজেপি যে ক'টি ইস্যু নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে সেগুলির বিরোধিতা করেছে বামেরা। সেই ইস্যুগুলিকে আমরা সংবিধানের পরিপন্থী বলে মনে করেছি। প্রতিটা ইস্যু নিয়েই এজেন্ডা তৈরি করেছিলাম। মানুষের সংগ্রামের দিকটিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বারবার।'

    ৩৭০ অনুচ্ছেদ- সীতারামের কথায়, '৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই শুরু হয়েছিল আমাদেরই। আমি প্রথম কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে শ্রীনগরে গিয়েছিলাম ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ার পর।' উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ইয়েচুরি দলের নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামিকে দেখতে শ্রীনগর যাওয়ার ছাড়পত্র আদায় করেছিলেন। বস্তুত ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ এবং কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে কার্ফু জারি হওয়ার পরে তিনিই প্রথম কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা যিনি শ্রীনগর ঢুকতে পেরেছিলেন। এর আগে আলাদা ভাবে গুলাম নবি আজাদ, ইয়েচুরিরা শ্রীনগরে যেতে চাইলে তাঁদের বিমানবন্দর থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধী দলের নেতাদের প্রতিনিধি দলকেও শহরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

    সিএএ বিরোধিতা- সীতারামের কথায়, 'সিএএ বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সামনের সারিতে ছিল বামেরা। সিএএ বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টের মামলা হোক, প্রতিবাদ হোক সবেতেই বামেরা এগিয়ে রয়েছে।' প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের জন্য এ দেশে আসা শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই দেশগুলি থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সিএএ-তে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এই আইনে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ ওই ছয় সম্প্রদায় ছাড়া পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান বা অন্য কোনও দেশ থেকে আসা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের শরণার্থীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এই বিষয়গুলির জন্যই বিতর্ক তৈরি হয় এই আইনকে নিয়ে।

    নির্বাচনী বন্ড বিরোধিতা- নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতাতেও প্রথম থেকেই বামেরাও এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেন সীতারাম। বিলকিস বানো মামলা- তাঁর কথায়, 'বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেছিলেন বামেরাই। সেদিক থেকেও বামেরাও প্রথম এজেন্ডা নির্ধারণ করেছিল।' উল্লেখ্য, সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য সুহাসিনী আলি এবং দুই সমাজকর্মী রেবতী লাউল, রূপরেখ ভর্মা মামলা করেছিলেন।

    বিতর্কিতকৃষি আইন প্রত্যাহার- সীতারামের সংযোজন, কৃষি আইন প্রত্যাহারের ক্ষেত্রেও প্রথম বামেরাই প্রথম এজেন্ডা নির্ধারণ করে। বামেদের চাপে পড়েই এই আইন শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয় কেন্দ্রের শাসক দল তথা বিজেপি।' উল্লেখ্য, ২০২০ সালে তিনটি কৃষি আইন প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার। তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করেন কৃষকরা শেষ পর্যন্ত গুরু নানকের জন্মদিন গুরুপরবে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

    ইয়েচুরির মতে, দক্ষিণের রাজ্য়গুলিতে জয়ধ্বজা ওড়াতে সক্ষম হবে না গেরুয়া শিবির। তাঁর মতে, 'বিজেপি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করছে। উত্তরের রাজ্যগুলিতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রণনীতি কাজে এলেও দক্ষিণের রাজ্যগুলেত দাগ কাটতে পারবে নাম মোদী-শাহের দল বলে মনে করেন তিনি।
  • Link to this news (এই সময়)