• Arvind Kejriwal : কোর্টে স্বস্তি নয়, দুর্নীতি নিয়ে কেজরি সরব আজ?
    এই সময় | ২৮ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়, নয়াদিল্লি: দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েও রেহাই পেলেন না অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আবগারি দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর গ্রেপ্তারিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। গ্রেপ্তারিকে বেআইনি বলে দাবি করে অবিলম্বে মুক্তি চেয়েছিলেন কেজরিওয়াল, কিন্তু তা দেয়নি আদালত। বরং কেজরির পিটিশনের জবাব দিতে ইডি-কে সাত দিন সময় দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। ৩ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি।আপাতত ইডি-র দিল্লির অফিসের লকআপে বন্দি কেজরি। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর সাত দিনের ইডি-কাস্টডি শেষ হচ্ছে। ফলে আজই তাঁকে দিল্লির রাউজ় অ্যাভিনিউ কোর্টে তোলার কথা। সেখানেই সম্ভবত তাঁকে আরও বেশি দিন হেফাজতে চাইবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে ইডি-র লকআপ থেকেও একের পর এক প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে চলেছেন কেজরি। আম আদমি পার্টি (আপ) স্পষ্ট করে দিয়েছে, কেজরিওয়ালই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন।

    প্রয়োজনে জেল থেকেও সরকার চালাবেন তিনি। ইতিমধ্যেই দিল্লির জল-সমস্যা এবং মহল্লা ক্লিনিক নিয়ে দু’টি প্রশাসনিক নির্দেশিকা মন্ত্রীদের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন কেজরি। আর তাতেই আপত্তি বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের। বুধবার ‘টাইমস নাও সামিট’-এ দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এ বিষয়ে।

    কেন্দ্র নিযুক্ত উপরাজ্যপালের বক্তব্য, ‘দিল্লিবাসী নিশ্চিন্তে থাকুন, জেল থেকে তাঁদের সরকার চলবে না। ছোটবেলায় একটা প্রবাদ শুনেছিলাম—লোহার ছোলা চিবোনো। দিল্লিতে আসার পর এই প্রবাদের আক্ষরিক অর্থ বুঝেছি। দিল্লিতে কোনও কাজ করানো লোহার ছোলা চিবোনোরই সমান। আপনি কিছু করার চেষ্টা করলেই কিছু শক্তি আপনাকে থামানোর চেষ্টা করবে। আর যদি আপনি কাজটা কোনও ভাবে করে ফেলেন, তাহলে সেই বাধা দেওয়া শক্তিই কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করবে...’

    দিল্লির আমলা নিয়ন্ত্রণ নীতি থেকে আবগারি দুর্নীতিতে তদন্তের নির্দেশ— উপরাজ্যপালের সঙ্গে দিল্লি সরকারের পরিচিত দ্বৈরথই এদিন উঠে এসেছে সাক্সেনার কথায়।এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল এদিন বিস্ফোরক দাবি করেন, তথাকথিত আবগারি দুর্নীতির টাকা আসলে কোথায় আছে, তা বৃহস্পতিবার রাউজ় অ্যাভিনিউ আদালতেই খোলসা করবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী! ঠিক কী বলবেন কেজরি? তা স্পষ্ট না হলেও বুধবার দিল্লি হাইকোর্টে জমে উঠেছিল ইডি বনাম কেজরির আইনজীবীর তরজা।

    ইডি-র তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজুর দাবি ছিল, কেজরিওয়ালের পিটিশনের কপি তিনি দেরিতে পেয়েছেন, তা খতিয়ে দেখে জবাব দিতে অন্তত তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। ইডির ‘দেরি করানো’র প্রবণতা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানান কেজরির আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি।

    তাঁর অভিযোগ, ‘জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই গ্রেপ্তারি বুঝিয়ে দিচ্ছে, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কোনও তথ্য বা বিষয় সম্পর্কে জানতে নয়, এই গ্রেপ্তারি করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দলের ভারসাম্য নষ্ট করতে৷ আমাদের আর্জি, অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে৷ ভুলে গেলে চলবে না, এই গ্রেপ্তারির সঙ্গে দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, স্বাধীন দেশের নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের প্রশ্ন জড়িত৷ অন্যায় গ্রেপ্তারির জেরে কোনও ব্যক্তির এক ঘণ্টা লকআপে কাটানোও অন্যায়।’

    পাল্টা এসভি রাজুর দাবি, ‘কোনও অভিযুক্ত স্থির করতে পারেন না, কখন কী ভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে৷ আবগারি দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে৷ এই দুর্নীতির শিকড় খুঁজে বের করার জন্যই এই গ্রেপ্তারি দরকারি ছিল।’ উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনেই দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি স্বর্ণকান্ত শর্মা নোটিস জারি করে ইডির জবাব তলব করেন এবং ৩ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেন। প্রসঙ্গত আগের শুনানিতে ইডি দাবি করেছিল, আবগারি দুর্নীতির টাকা গোয়ার ভোটে খরচ করেছে আপ। বুধবারই আবগারি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আপের গোয়া শাখার প্রধান এবং আরও কয়েকজন আপ নেতাকে ২৮ মার্চ তলব করেছে ইডি। পানজিমের অফিসে হাজিরা দিতে হবে তাঁদের।

    এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী সুনীতা এর আগেও অরবিন্দের বিবৃতি পড়ে শোনাতে গিয়ে তাঁর বিকল্প মুখ হিসেবে জল্পনার স্তরে উঠে এসেছেন। এদিন সুনীতা বলেন, ‘অরবিন্দজি আমাকে বলেছেন, গত দু’বছর আবগারি দুর্নীতি মামলায় ইডি ২৫০টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও বেআইনি এক পয়সা উদ্ধার করতে পারেনি। ওরা আমাদের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে, পেয়েছে মাত্র ৭৩ হাজার টাকা। যদি আবগারি দুর্নীতি হয়েই থাকে, তা হলে সেই টাকা গেল কোথায়? অরবিন্দজি বলেছেন, বৃহস্পতিবার আদালতে তিনি সব ফাঁস করবেন। পুরো দেশ তার সাক্ষী থাকবে। অরবিন্দজি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে প্রমাণ আছে।’

    এদিকে, ইডি হেফাজত থেকে কেজরিওয়ালের সরকারি নির্দেশিকা জারি করা নিয়ে সরব বিজেপি, এমনকী উপরাজ্যপালও। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী-পত্নীর বক্তব্য, ‘আমি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অরবিন্দজির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওঁর ডায়াবিটিস রয়েছে...সুগার লেভেল খুব ওঠানামা করছে। কিন্তু তার পরও উনি দিল্লির মানুষের কথা ভাবছেন। তাঁদের জন্য নির্দেশিকা জারি করছেন। আপনারাই বলুন, এতে অন্যায় কোথায়? কেন্দ্র কি দিল্লিকে ধ্বংস করতে চায়?’ আপের একটি সূত্রের দাবি, কেজরিওয়ালের ব্লাডসুগার ৪৬-এও নেমে গিয়েছিল! যদিও এদিন হাইকোর্টের শুনানিতে কেজরির শারীরিক অবস্থার কথা তাঁর আইনজীবী আলাদা করে উল্লেখ করেননি।

    তবে বিজেপি আক্রমণ জারি রেখেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ‘টাইমস নাও সামিট’-এ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আট বার সমন পাঠানো হয়েছে। কাজের অজুহাত, বিধানসভা অধিবেশন, ভোটের প্রচারের কথা বলে তিনি হাজিরা দেননি। তখন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা তো তাঁর মুখে শোনা যায়নি? এখন যখন আদালত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইডি দপ্তরে হাজিরা দিতে বলল, তখন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠছে?’

    একই বক্তব্য সামিটে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিরও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে অন্যায় ভাবে ব্যবহার করে বিরোধীদের চাপে ফেলার অভিযোগ একাধিকবার উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে স্মৃতির মন্তব্য, ‘আমরা তো গ্রেপ্তার করছি না...ইডি প্রমাণ পেয়েছে বলেই গ্রেপ্তার করেছে। এতে অন্যায় কী আছে?’
  • Link to this news (এই সময়)