Varun Gandhi: টিকিট না পেয়ে দল বদল? খোলা চিঠি বরুণ গান্ধীর
এই সময় | ২৮ মার্চ ২০২৪
তাঁকে এবার লোকসভা ভোটে টিকিট দেয়নি বিজেপি। পিলভিট থেকে টিকিট পাননি বিজেপির জয়ী সাংসদ বরুণ গান্ধী। এই আবহে তাঁর পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের অন্দরে আলোচনা চলছে। এই প্রেক্ষাপটেই পিলভিটবাসীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখলেন বিজেপি নেতা বরুণ গান্ধী। স্পষ্ট করেছেন তাঁর পরবর্তী অবস্থান কী হবে সেই বিষয়েও।চিঠিতে পিলভিটবাসীর সেবার কাজ অব্যাহত রাখার বার্তা বরুণের। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা চিঠিতে বরুণ লিখেছেন, 'যত খরচই হোক না কেন, আমি আপনাদের সেবা চালিয়ে যাব।'
বিজেপি টিকিট দেয়নি বরুণকে
এবার বরুণের জায়গায় জিতিন প্রসাদকে টিকিট দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের অন্দরে গুঞ্জন সাম্প্রতিক সময়ে বরুণের বেশ কয়েকটি পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট ছিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁকে যে এবার টিকিট দেওয়া হবে না তার আভাস-ইঙ্গিত মিলেছিল আগে থেকে। শোনা গিয়েছিল তিনি যে এবার টিকিট পাবেন না তা আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন বরুণ। টিকিট না পেলে নির্দলের টিকিটে লড়ার প্ল্যান বি-ও নাকি সাজিয়ে রেখেছিলেন। আবার এও শোনা গিয়েছিল তিনি সমাজবাদী পার্টির হয়েও লড়তে পারে। দিন কয়েক আগেই কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বরুণকে সাদরে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন কংগ্রেস শিবিরে। বলেছেন, 'বরুণ যদি কংগ্রেসে যোগ দিতে চান তবে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে।' তখনই জোরাল গুঞ্জন ওঠে তবে কি এবার পারিবারিক দ্বন্দ্বকে দূরে সরিয়ে ভাই-ভাইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবেন বরুণ-রাহুল? এর ঠিক পরেই শোনা যায় বরুণ কংগ্রেসের দিকে না ঝুঁকে সুলতানপুরে তাঁর মা মেনকার প্রচারের কাজেই মন দেবেন। তবে এত সবকিছু পুরোটাই গুঞ্জন। বরুণ নিজে কোনও দাবির সাপেক্ষেই সিলমোহর দেননি। তাই তাঁর প্ল্যান আসলে কী তা এখনও পর্যন্ত আস্তিনের নীচেই লুকনো রয়েছে। এই আবহে পিলভিটবাসীকে বরুণের আবেগঘন চিঠি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
চিঠিতে কী লিখেছেন বরুণ?
চিঠির ছত্রে ছত্রে ধরা পড়েছে বরুণের আবেগ। লিখেছেন, 'চিঠি লিখতে গিয়ে হাজারও স্মৃতি ভিড় করে আসছে। সেসব কথা মনে পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছি। ১৯৮৩ সালে মায়ের হাত ধরে যে ছোট্ট তিন বছরের ছেলেটা পিলভিটে পা রেখেছিল সেদিন সে জানতই না একদিন এই পিলভিট তাঁর কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠবে, এখানকার মানুষ তাঁর পরিবারের সদস্য হয়ে উঠবেন। বছরের পর বছর পিলভিটবাসীর সেবার করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি আমি। শুধু সাংসদ হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে বড় হয়ে উঠতে যা যা প্রয়োজনীয় যেমন আদর্শ, সরলতা এবং উদারতা তার সবটাই পিলভিটের মাটি থেকেই মিলেছে।'
পিলভিটের সাংসদ হওয়াকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান হিসেবে বর্ণনা করেছেন বরুণ। চিঠিতে লিখেছেন, 'আপনাদের প্রতিনিধি হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান। সর্বদা আমি আমার সাধ্য মতো আপনাদের স্বার্থের সপক্ষে কথা বলতে আওয়াজ তুলেছি। সাংসদ হিসেবে আমার মেয়াদ শেষ হতে পারে কিন্তু পিলভিটের সঙ্গে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার সম্পর্ক থাকবে। সাংসদ না হলেও পিলভিটের ছেলে হিসেবে আমি সারাজীবন আপনাদের সেবার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আগের মতো আপনাদের জন্য আমরা দরজা সবসময় খোলা থাকবে। আমি রাজনীতিতে এসেছি সাধারণ মানুষের হয়ে আওয়াজ তুলতে। যাতে সেই কাজ সর্বদা চালিয়ে যেতে পারি তার জন্য আজও আপনাদের আশীর্বাদ চাই।'
'পিলভিটের সঙ্গে সম্পর্ক রাজনৈতিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে'
পিলভিট থেকে এবার বিজেপির টিকিট না পেয়ে বরুণ চিঠিতে লিখেছেন, 'পিলভিট ও আমার মধ্যে সম্পর্ক ভালোবাসা ও বিশ্বাসের। এই সম্পর্ক রাজনৈতিক সম্পর্কের অনেক ঊর্ধ্বে। আমি আপনাদের ছিলাম, আছি ও থাকব।'
দেখুন বরুণ গান্ধীর চিঠি
বরুণের চিঠির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরাও। তাঁকে প্রার্থী না করাতে অনেকের গলাতেই সমবেদনার সুর। এক এক্স হ্যান্ডেলে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আপনার প্রতি জনগণের ভালোবাসা অটুট।' অপর একজন লিখেছেন, 'শুধু পিলভিটই নয়, সমগ্র সম্প্রদায় বরুণ ভাইয়ের জীবনীশক্তি এবং উৎসর্গে মুগ্ধ। তিনি যে ভাবে জনসাধারণের সেবা করেছেন তা প্রশংসনীয়। ভারতের যে কোণা থেকেই আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন না কেন আপনার জয় নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আপনার সমর্থকরা। ' অন্য এক ব্য়বহারকারী লিখেছেন, 'আপনার পিলিভিট থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত ছিল।'
উল্লেখ্য, পিলভিট লোকসভা কেন্দ্র থেকে ২০০৯ সালে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন সঞ্জয় গান্ধীর ছেলে বরুণ গান্ধী। ওই কেন্দ্রে ২০১৪ সালে প্রার্থী করা হয় তাঁর মা মেনকা গান্ধীকে। তিনিও জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে নিজের পুরনো কেন্দ্রে ফিরে আসেন বরুণ। আড়াই লক্ষের বেশি ব্যবধানে সেবার জিতেছিলেন তিনি।