লোকসভা ভোটের প্রচার কেবলমাত্র মাঠ-ময়দান, জনসভা-ব়্যালিতে সীমাবদ্ধ নয়। সোশ্যাল মিডিয়াও এখন ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার অন্যতম বড় অস্ত্র। বিরোধী শিবিরকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে তাই কৌতুকে ভরা ভিডিয়ো পোস্ট করল BJP। আর সেই ভিডিয়ো মুহূর্তের মধ্যেই হইচই ফেলে দিল রাজনৈতিক মহলে। INDIA জোটকে কটাক্ষ করে তৈরি সেই শর্ট ফিল্মে গেরুয়া শিবির আদতে মহিলাদের অসম্মান করেছে বলে অভিযোগ। ব্যাপারটী ঠিক কী?বিরোধী শিবিরের দাবি, BJP-র পোস্ট করা ভিডিয়োতে মহিলাকে অসম্মানিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অসম্মান করা হয়েছে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকেও। ইন্ডিয়া জোটকে কটাক্ষ করে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলিতে একটি রাজনৈতিক প্রচারের ভিডিয়ো পোস্ট করে বিজেপি। ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োটিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতাদের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন অভিনেতাদের। একটি বিয়ের আগে দেখাশোনার জন্য একজোট হয়েছেন তাঁরা। কনেকে পছন্দ করে এসেছে পাত্রপক্ষ। অথচ কে যে আসল পাত্র, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া শুরু করেছেন তাঁরা। কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। সকলেই নিজেকে উপযুক্ত পাত্র হিসেবে তুলে ধরছেন কনের কাছে।
ভিডিয়োতে এক মহিলাকে দেখানো হয়েছে কনের সাজে। তাঁর সামনে বসে থাকা পাত্রটি যে আদতে রাহুল গান্ধীকে নকল করে তৈরি করা হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠিক তেমনই অনায়াসে চেনা যাচ্ছে ‘মাফলারম্যান’ কেজরিওয়াল, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, উদ্ধব ঠাকরে, লালুপ্রসাদ যাদব, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদবদেরও। ভিডিয়োর শুরুতে দেখা যায়, রাহুলরূপী অভিনেতা কনে ও তাঁর অভিভাবকদের সঙ্গে বাকিদের পরিচয় করাচ্ছেন। এখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, তাঁরা সকলে ভাগ বাটোয়ারা করেই খান। যদিও শেষ পর্যন্ত বর কে হবে সেটাই ঠিক করতে গিয়ে কনেকেই বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছেন সকলে।
অখিলেশ থেকে কেজরি, তেজস্বী থেকে উদ্ধব, সকলেই দাবি করতে থাকেন তাঁরা বর হওয়ার যোগ্য দাবিদার তাঁরাই। ভিডিয়োর একেবারে শেষ পর্বে ভয়েস ওভারে শোনা যায়, ‘আপনারা কি মনে করেন? যাঁরা বর ঠিক করতে পারছেন না, তাঁরা প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে পারবেন? বংশগত লুটেরাদের চেষ্টা হবে ব্যর্থ, এবারও চারশো পার।’
এই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, এই ভিডয়োতে কনেরূপী মহিলার অপমান করা হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনেত বলছেন, 'বিয়ে একটি পবিত্র বিষয়। বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে তৈরি একটি সম্পর্ক। BJP একটি অশ্লীল বিজ্ঞাপন দিয়ে আরও একবার নিজেদের রক্ষণশীল মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছে। ওদের নজরে মহিলা মানেই তাঁর কাজ লেহেঙ্গা পরে, বউ সেজে বসে বরের মন জয় করা। ওরা এটুকুও বোঝে না বর খোঁজা এবং গণতন্ত্রে নিজেদের জনপ্রতিনিধি খোঁজা এক নয়।' শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বক্তব্য, 'BJP-র এই বিজ্ঞাপনেই স্পষ্ট ওরা মেয়েদের কী ভাবে দেখে। ওদের কাছে মেয়ে মানেই এভাবে বসে বরকে খুশি করতে হবে।' রাজনৈতিক প্যারোডির নামে আদতে মহিলাদের অসম্মান করেছে গেরুয়া শিবির। এমনটাই মত ইন্ডিয়া জোটের। রাজনৈতিক প্যারোডি ভিডিয়োর একটা প্রভাব যুবসমাজের উপর পড়ে। তাই মজা করা হলেও শালীনতা বোধ রাখাটা জরুরি। এমনটাই মত তাদের।