এই সময়: হিস্ট্রি রিপিটস... দেখতে দেখতে দেশে হাজির আরও একটা ভোট। ২০১৪ থেকে ২০২৪, দিল্লির মসনদে একটি দশক পার করে ফেলেছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। এই একটি দশকে সরযূ দিয়ে বয়েছে অনেক জল, নোট থেকে ভোট— পাল্টেছে অনেক কিছু। কিন্তু বুধবার এই দশটি বছরের সেতুবন্ধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। সূত্র, টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি।২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বিদেশ থেকে কালো টাকা এনে দেশবাসীকে দেওয়ার কথা শুনিয়েছিলেন মোদী। অতঃপর তা নিয়ে রাজনীতিতে তর্ক-বিতর্ক কিছু কম হয়নি। দশ বছর পর ফের মোদীর গলায় টাকা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি। আবার ক্ষমতায় এলে বাংলার বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় ইডি-র বাজেয়াপ্ত করা তিন হাজার কোটি টাকা মোদী ফেরাতে চান ক্ষতিগ্রস্তদের। আর এই প্রতিশ্রুতির সূত্র ধরেই তাঁর পুরোনো বক্তব্য টেনে সরব হলো রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি-ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে ধরে জোর প্রচার শুরু করে দিয়েছে রাতারাতি।
দেশের বাছাই করা কিছু বিজেপি প্রার্থীকে ফোন করে উৎসাহ দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার তিনি ফোন করেছিলেন বসিরহাটের দলীয় প্রার্থী রেখা পাত্রকে। বুধবার মোদীর ফোন আসে কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়ের কাছে। নানা বিষয়ে মিনিট আটেক দু’জনের কথা হয়। বাংলায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানান অমৃতা।
নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী
তাঁকে আশ্বস্ত করে ফোনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা থেকে ইডি যে তিন হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে, তা গরিবের টাকা। নতুন সরকার তৈরি হওয়ার পরে সেই টাকা গরিবদের ফেরত দেওয়ার কোনও না কোনও রাস্তা আমি খুঁজে বের করবই।’ বিষয়টি অমৃতাকে ব্যাখ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। কেউ শিক্ষক হওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন, কেউ ক্লার্ক হওয়ার জন্য। আমার ইচ্ছে, নতুন সরকার তৈরি হওয়ার পরে গরিবের এই তিন হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের ফেরত দেবো, যাঁরা ঘুষ হিসেবে এই টাকা দিয়েছিলেন।’
তাঁর এই আশ্বাসবাণী নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে কৃষ্ণনগরের পদ্ম প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি সাধারণ মানুষকে বলুন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি বলেছেন, ইডির বাজেয়াপ্ত করা টাকা ক্ষতিগ্রস্তরা ফেরত পাবেন। এটা খুব জোর দিয়ে বলুন সবাইকে।’
২০১৪-র লোকসভা ভোটের প্রচারে এক জনসভায় মোদীর মুখে শোনা গিয়েছিল, ‘চোর-লুটেরাদের যে টাকা বিদেশি ব্যাঙ্কে জমা রয়েছে, তা যদি একবার ফেরত আনা যায়, তা হলে দেশের প্রতিটি গরিব মানুষ এমনই ১৫-২০ লাখ টাকা মুফতে পাবেন। যে দিন বিজেপি সুযোগ পাবে, সে দিন এক-একটা পয়সা ফেরত আনা হবে আর দেশের গরিবের কাজে লাগানো হবে। এটা জনতার পয়সা, গরিবের পয়সা। এর উপরে অধিকার দেশের কোটি কোটি গরিব মানুষের। এই টাকা তাঁদেরই পাওয়া উচিত।’
এক দশক আগের সেই প্রতিশ্রুতি মোদী কেন রাখতে পারলেন না, তা নিয়ে সুযোগ পেলে এখনও বিরোধীরা খোঁচা দেয় বিজেপিকে। এ দিন মোদীর মুখে ফের টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি শুনে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্যসভার সচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের দাবি, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের আশ্বাস শুধু অবাস্তবই নয়, বেআইনি এবং সংবিধান বিরোধীও। কারণ নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যাঁদের কাছ থেকে ইডি টাকা উদ্ধার করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। সেগুলি আদালতের বিচারাধীন। কোনও বিচারাধীন মামলায় বাজেয়াপ্ত টাকা ফেরত দেওয়ার কথা এ ভাবে প্রকাশ্যে বলা যায় না। এটা আদালত অবমাননার সামিল।’ সুখেন্দুর কটাক্ষ, ‘এক সময়ে দেশের প্রতিটি মানুষের খাতে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উনি। দেশের মানুষের সব মনে আছে। সেই টাকার কী হলো!’
তৃণমূল নেতৃত্বের প্রশ্ন, ‘গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে ইডি যে টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে, সেই টাকাগুলিও প্রধানমন্ত্রী বিলি করবেন তো সাধারণ মানুষের মধ্যে?’ রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘বাংলার যে বকেয়া টাকা উনি আটকে রেখেছেন, সেটা আগে মেটান। সব ভাঁওতাবাজি। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’