• বউকে কুপিয়ে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা বৃদ্ধের, সাতসকালে চাঞ্চল্য সল্টলেকে
    বর্তমান | ২৮ মার্চ ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ডাইনিং টেবিলের পাশে চেয়ার থেকে ঝুলছে অর্ধেকটা শরীর। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। মুখে অ্যাসিডের ক্ষত। বাথরুমে পড়ে রয়েছে স্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। সঙ্গে পোড়া দাগও! গুরুতর জখম স্বামীর পাশেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল রান্নাঘরের তিনটি ছুরি। মিলেছে একটি দা’ও। পাশে পাওয়া গিয়েছে কিছু ট্যাবলেট। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা সুইসাইড নোটও মিলেছে। তারপরই কিনারা হয় ঘটনার। পুলিস জানতে পারে, স্ত্রীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন প্রাক্তন সেনা চিকিৎসক! বুধবার সাত সকালে সল্টলেকের জিসি ব্লকের এই ঘটনায় শোরগোল ছড়িয়েছে।

    পুলিস জানিয়েছে, মৃত স্ত্রীর নাম মন্দিরা মিত্র। বয়স প্রায় ৭৫ বছর। জখম চিকিৎসক তথা মৃতার স্বামীর নাম ডাঃ যদুনাথ মিত্র। তাঁর বয়স ৮৪ বছর। বিধাননগর দক্ষিণ থানার অন্তর্গত সল্টলেকের জিসি ব্লকে তাঁদের দোতলা বাড়ি। দোতলায় থাকতেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। নীচের তলায় থাকেন এক ভাড়াটিয়া। চক্ষু বিশেষজ্ঞ যদুনাথবাবু সেনা হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। পরে বহরমপুর হাসপাতালেও চাকরি করেছেন। তাঁর বড় মেয়ে থাকেন সিঙ্গাপুরে। ছোট মেয়ে থাকেন কলকাতাতেই। সবার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল।

    ঠিক কী ঘটেছিল? যদুনাথবাবুর বাড়ির পাশেই বিধাননগরের মেয়র পারিষদ (বাজার) রাজেশ চিরিমারের বাড়ি। পরিচারিকার চিৎকারে তিনিই প্রথম হাজির হন ওই বাড়িতে। রাজেশবাবু বলেন, দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে একটি গ্রিলের গেট আছে। পরিচারিকরা ও সাফাই কর্মীরা যাতে সকালে ঢুকতে পারেন, তার জন্য সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রতিদিন তাঁরা ওই গেট খুলে রাখেন। এদিনও রেখেছিলেন। সকাল ৮টা নাগাদ পরিচারিকা কাজে গিয়ে দেখেন, ডাক্তারবাবু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। সেই সময় সাফাই কর্মীও যান। ওদের দু’জনের ডাকে আমি গিয়ে দেখলাম, ডাক্তারবাবুর শরীরের অর্ধেকটা চেয়ারে। বাকি অর্ধেকটা ঝুলছে। বাথরুমের দরজা খোলা। সেখানে গিয়ে দেখি, তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। ডাক্তারবাবুর প্রাণ আছে বুঝেই পুলিসকে খবর দিই। পুলিস এসেই তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠায়।

    বাইপাসের একটি বেসরসকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন যদুনাথবাবু। খবর পাওয়ার পরই বিধাননগরের পুলিস কমিশনার গৌরব শর্মা নিজে ঘটনাস্থলে যান। পৌঁছন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুও। পুলিস কমিশনার বলেন, আমরা সুইসাইড নোট পেয়েছি। তাতে ওই চিকিৎসক বাংলায় লিখেছেন, স্ত্রীকে খুন করে উনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। সেখানে কাউকে দোষী করেননি। ইংরেজিতে লেখা নোটে অনেকগুলি বিষয় উল্লেখ করেছেন। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মানসিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলেও উল্লেখ করেছেন। হ্যান্ড রাইটিংও পরীক্ষা করা হবে। ফরেন্সিক নমুনার জন্য বাড়িটি সিল করা হয়েছে। শরীরে ধারালো অস্ত্রের কোপ আছে। মুখের উপর দাগটা অ্যাসিডের হতে পারে। ময়নাতদন্তে তা পরিষ্কার হবে। তদন্ত চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)