• মালদায় নদী ভাঙন নিয়ে স্থায়ী সমাধান চেয়ে চিঠি নাগরিক কমিটির
    ২৪ ঘন্টা | ২৮ মার্চ ২০২৪
  • রণজয় সিংহ: নদী ভাঙন নির্বাচনের সময়ে বড় ইস্যু মালদা জেলার ক্ষেত্রে। নদী ভাঙন প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতির উপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরনী পার করে শাসক, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু ভোট মিটলেও নদী ভাঙনের সমাধান সেই তিমিরেই থেকে যায়। যার ফলে প্রতিবছর গৃহহীন হয় হাজার হাজার বাসিন্দা।মালদা জেলার পাঁচটি ব্লক গঙ্গা ভাঙন কবলিত এলাকা। বর্ষার মরসুমে অস্থায়ীভাবে কিছু বালির বস্তা ফেলে গঙ্গার ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা বার বার তা বিফলে যায়।

    এখনও কেন্দ্র বা রাজ্যে সরকারের তরফে ভাঙন প্রতিরোধের কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়নি। লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়। তাই এমন পরিস্থিতিতে গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের খোলা চিঠি দিতে চলেছে।গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটি সদস্য মুসারেফুল আনোয়ার জানান, ‘১৯৭১ সালের পর থেকে মালদা জেলায় গঙ্গা ভাঙন হয়েই চলেছে। মালদা জেলায় ইতিমধ্যে ৭৬টি মৌজা গঙ্গা নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এই ৭৬টি মৌজায় বসবাস করতেন প্রায় সাত লাখ মানুষ। আজকে তাদের বাড়িঘর জমি জায়গা সব হারিয়ে তারা আজ নিঃস্ব হয়েছেন’।তিনি আরও বলেন, ‘মালদা জেলার মানিকচক, কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর, রতুয়া,  হরিশ্চন্দ্রপুর এই পাঁচটি ব্লক ভাঙন কবলিত এলাকা। গতবার থেকে মহানন্দাটোলা ,বিলাই মারি, ভূতনি ,গোপালপুর, মানিকচক ঘাট, বীরনগর এই সমস্ত জায়গায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। নতুন ভাঙনে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর বসতভিটা হারিয়েছে। তাই আমরা চাই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার যৌথ উদ্যোগে এই গঙ্গা ভাঙন সমস্যার সমাধান করুক’।তিনি যোগ করেছেন, ‘অনেকেই এখনও খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টানিয়ে বসবাস করছেন। তাদের পুনর্বাসন এখনও হয়নি। কার্যত স্থায়ী বিজ্ঞানসম্মত ভাবে গঙ্গা ভাঙনের সমাধান হোক। নতুন করে ২৬টি মৌজায় নতুন চর গড়ে উঠেছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মালদা জেলার দুই কেন্দ্রে যারা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে দাঁড়িয়েছেন তাদের কাছে আমাদের দাবি নিয়ে খোলা চিঠি দিচ্ছি’।এই বিষয়ে দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী জানান, ‘গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটি যেটা করছেন তা সঠিক করছেন। আমি তাদের সঙ্গে আছি। আমি তাদের সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করব। আমার লোকসভা কেন্দ্রে মানিকচক, শামসেরগঞ্জ, সমস্ত এলাকায় গঙ্গা ভাঙন হচ্ছে। রাজ্য সরকার বা এখানকার জেলা প্রশাসন তাদের কিছু সহযোগিতা করে। কিন্তু তাদেরকে এখনও কোনওরকমভাবে স্থায়ী পুনর্বাসন বা সহযোগিতা করেনি। এই গঙ্গা ভাঙন এলাকার মানুষদের যাতে স্থায়ী সমাধান হয় সেটাই আমার মূল লক্ষ্য’।তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙণের বিষয় নিয়ে আমি সমস্ত রাজনৈতিক দলকে বলবো সবাই একসঙ্গে হয়ে মালদার মানুষকে বাঁচানোর জন্য এই গঙ্গা ভাঙন বিষয় নিয়ে এগিয়ে আসুন’।রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের ও সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ‘গঙ্গা ভাঙন এলাকায় এখনও পর্যন্ত যা কাজ করেছে সেটি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারই করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার কোনও রকম ভাবে সহযোগিতা করেনি। একটা টাকাও দেয়নি। সেখানে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পূর্ণ সহযোগিতা দরকার। না হলে এই গঙ্গা ভাঙন স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব নয়। আমরা ইতিমধ্যে একটি সার্ভেও করেছি। বিহার, ঝাড়খন্ড, এবং আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একসঙ্গে মিলে এই কাজ করতে হবে। গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটি যে খোলা চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছে। সেটি তাদের কেও ভাবতে হবে যে আমাদের এই বিষয়ে যা করার আমরা ঠিকই করছি। গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে উন্নয়ন। আজকে বিজেপি সরকার ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে। আর আমরা উন্নয়ন করছি’।গঙ্গা ভাঙন বিষয় নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ইসা খান চৌধুরীও। 
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)