শিলাদিত্য সাহাবাল বাল বঁচ গয়ে! সত্যিই কি তাই? পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যাওয়া জাভান টাইগার কি কামব্যাক করছে জঙ্গলে? ১৯৭৬ সালের পর যার অস্তিত্বের কোনও সরাসরি প্রমাণ মেলেনি, ২০০৮ সালে যাকে সরকারি ভাবে ‘এক্সটিঙ্কট ইন দ্য ওয়াইল্ড’ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল, আজ ২০২৪-এর মার্চে দাঁড়িয়ে সেই জাভান টাইগারেরই নতুন করে খোঁজ শুরু করতে চলেছে ইন্দোনেশিয়া। বসানো হবে ক্যামেরা ট্র্যাপ, ডাকা হবে জেনেটিক এক্সপার্টদের। কীসের ওপর ভিত্তি করে এমন উদ্যোগ?
মাত্র একটি লোম ও তার ডিএনএ রিপোর্ট!
ইন্দোনেশিয়ার ব্রিনের (ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন এজেন্সি) বিজ্ঞানী-গবেষকরা জানাচ্ছেন, ২০১৯ সালে পশ্চিম জাভার সুকাবুমি শহর সংলগ্ন জঙ্গল এলাকার এক বাসিন্দা দাবি করেন, তিনি ওই জঙ্গলের পাশে জাভান টাইগারের দেখা পেয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে তাঁর হাতে ছিল জঙ্গলের ধারে বসানো ফেন্সে লেগে থাকা বাঘের একটিমাত্র লোম এবং তার পায়ের ছাপ, যা বাঘটি লাফিয়ে পার করার সময়ে রয়ে গিয়েছিল।
ওই লোমের বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা তার সঙ্গে জাভান টাইগারের জেনেটিক ট্রেস পেয়েছেন। বাঘের দেখা পাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘ কথা বলেও বিজ্ঞানী-গবেষকদের মনে হয়েছে, তিনি জাভান টাইগারই দেখেছেন। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসে ২১ মার্চ প্রকাশিত এই গবেষণায় দাবি, ২০১৯ সালে পাওয়া একমাত্র লোম জাভান টাইগারেরই।
কী ভাবে শুধু একটি লোমের ওপর ভরসা করে বিজ্ঞানীরা জাভান টাইগারের বেঁচে থাকার ভরসা পাচ্ছেন?
গবেষণাপত্র বলছে, যথেষ্ট চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে ওই একমাত্র ‘হেয়ার স্যাম্পল’ নিয়ে। তার জিনগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মেলানো হয়েছে পশ্চিম জাভার মিউজ়িয়ামের জিন ব্যাঙ্কে থাকা জাভান টাইগারের ১৯৩০ সালের নমুনা, আমুর টাইগারের ১৯৯৮ সালের জিনগত নমুনা, সুমাত্রান টাইগারের ১৯৪১ এবং ১৯৫৬ সালের চুল, হাড় ও শুকনো চামড়ার (ড্রাই স্কিন) ডেটা যা দক্ষিণ ও পশ্চিম সুমাত্রায় সংরক্ষিত রয়েছে।
এ ছাড়াও বেঙ্গল টাইগার, ইন্দো-চাইনিজ় টাইগার, সাউথ চায়না টাইগার এবং জাভান লেপার্ডের সংরক্ষিত নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে ২০১৯-এ পাওয়া হেয়ার স্যাম্পলকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৩০-এর জাভান টাইগারের স্যাম্পলের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে ২০১৯ সালের হেয়ার স্যাম্পল। এ ছাড়াও সুমাত্রান এবং বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে জিনগত কিছুটা মিল রয়েছে ওই লোমের।
তবে কি সত্যিই পৃথিবী থেকে মুছে যায়নি তারা?
ইন্দোনেশিয়ার বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের প্রধান তথা এই গবেষণাপত্রের অন্যতম কো-অথর সত্যবান পুদ্যামোকোর বক্তব্য, ‘ডিএনএ অ্যানালিসিসে জেনেটিক ট্রেস যখন মিলেছে, তখন বর্তমানে জাভান টাইগার নেই, এমনটাও তো বলা যায় না। আমরা ক্যামেরা ট্র্যাপ বসাচ্ছি, এক্সপার্টদেরও ডাকা হবে। সায়েন্টিফিক স্টাডি ছাড়াও কমিউনিটি ডেটা কালেকশনের মাধ্যমেও জাভান টাইগারের খোঁজ চলবে। যদি দেখা যায় এই প্রজাতি জঙ্গলে রয়েছে, সেই মুহূর্তে সেটি ‘প্রোটেক্টেড অ্যানিম্যাল’ হিসেবে গণ্য হবে।’
বিশ্বে বাঘের যে ৯টি সাব-স্পিসিসের কথা জানা যায়, তার মধ্যে কাস্পিয়ান, জাভান এবং বালি টাইগার বর্তমানে খাতায়কলমে অবলুপ্ত। এর মধ্যে সবার আগে লুপ্ত হয়েছে বালি টাইগার। শেষবার দেখা মিলেছিল ১৯৩০ সাল নাগাদ, জঙ্গলে তার কোনও ছবিও নেই। ইন্দোনেশিয়ার মিউজ়িয়ামে আছে শুধু হাড়ের স্যাম্পল।
জর্জিয়া থেকে তুরস্ক — কাস্পিয়ান সাগর অঞ্চলে দেখা পাওয়া কাস্পিয়ান টাইগারের শেষ দেখা মিলেছিল ১৯৫৭ সালে। তাকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় ২০০৩-এ। লাগামছাড়া চোরাশিকার ও জঙ্গল ধ্বংসের কারণে জাভা আইল্যান্ড থেকে জাভান টাইগার ‘এক্সটিঙ্কট’ হয়ে যায় আশির দশকে, যা ২০০৮ সালে বিলুপ্ত হিসেবে ঘোষিত হয়। সুমাত্রান বাঘও চোরাশিকারের দাপটে এখন ‘ক্রিটিক্যালি এনডেঞ্জারড’, মাত্র শ’পাঁচেক বেঁচে আছে জঙ্গলে। এই পরিস্থিতিতে ফের জাভান টাইগারের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনায় বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। জঙ্গল থেকে হুঙ্কার এল বলে।